রামগড়ে মৌসুমী ফলের ন্যায্যমূল্য পায় না কৃষকেরা

হিমাগার নেই, যোগাযোগ ত্রুটিপূর্ণ

শ্যামল রুদ্র, রামগড় :

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার মৌসুমী ফলফলারি পচে গলে নষ্ট হয়।  আহরণ, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সঠিক বিপণনের অভাবে নষ্ট হয় এই সব ফল ফলারি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় কৃষক। আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় এনে তাঁরা ফসল উৎপাদনে ক্রমান্বয়ে উৎসাহ হারাচ্ছেন।

এই অবস্থায় সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এলাকায় হিমাগার স্থাপনে এগিয়ে আসার আহবান জানিছেন কৃষকেরা।

বাগান মালিক নয়ন চন্দ্র ত্রিপুরা, ভজন চন্দ্র আসাম, পুতুল চন্দ্র বড়–য়া ও অন্যরা জানান, পাহাড়ে হাজার হাজার একর পাহাড়ি টিলা-উপত্যকা জুড়ে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, পেয়ারা, লেবু, কলা, সফেদা, জাম্বুরা, জামরুল প্রভৃতি ফলের বাগান রয়েছে। এই সব ফল সঠিক পদ্ধতিতে আহরণ করে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে সারা বছরই ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু হিমাগার নেই বলে ফল ফলারি পচে গলে নষ্ট হয়। গরিব কৃষক পচনের ভয়ে কম দামে ফসল ছেড়ে দেয়। যে কারণে তারা ন্যায্য মূল্য পায় না।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ের বিভিন্ন উপত্যকায় বাগানগুলোয় এক সঙ্গে ফল ফলারি পাকা শুরু করে। পাকা ফল আহরণ খুবই কষ্টকর তাই অনেক সময় গাছেই পচে নষ্ট হয় এই সব মূল্যবান ফল। কেননা সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় কষ্টকরে কৃষকেরা ফল আহরণে উৎসাহ পায় না। সংরক্ষণ করা গেলে না হয় আহরণে আগ্রহ পেতো কৃষক। দু-চার পয়সা না পেলে পন্ড শ্রমে লাভ কী? এই রকম ধারণাই কৃষকদের।

রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম ফয়সাল বলেন, এই এলাকায় যে পরিমাণ মৌসুমী ফলের উৎপাদান হয় এতে জেম, জেলি, জুস ও বিভিন্ন প্রকার আচারের কারখানা করা যায় অনায়াসে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচেছ এলাকায় এখনো এই ধরনের কারখানা গড়ে উঠেনি। র্কাঁঠাল,আনারস,লিচু,আমসহ বিভিন্ন ফল ফলারি প্রক্রিয়াজাত করে সারা বছরই সংরক্ষণ সম্ভব। এমনকি দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা যেতো এই সব সংরক্ষিত ফলের রস।

উপজেলার বিভিন্ন অংশ জুড়েই রয়েছে পাহাড়ি টিলা। এই সব টিলায় আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কলা, আনারস, জাম্বুরা, পেঁপে,জামরুল প্রভৃতি চাষ হয়। বিভিন্ন জাতের ফল ফলারির ফলনও ভাল। চায়না-১, চায়না-২ ও চায়না-৩ জাতের লিচু অত্যন্ত  রসালো ও সুস্বাদু। স্থানীয় বাজারে একশ লিচু দুইশ -তিনশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বিভিন্ন জাতের আনারসের মধ্যে হানিকুইন, ক্যালাঙ্গা খুবই ভালো জাতের। দেখতে যেমন চমৎকার খেতেও সুস্বাদু। আর আম্রপালি তো  ল্যাংড়া আমকেও হার মানিয়েছে।

রামগড় নাকাপার বাগান মালিক মো. ফয়েজ উদ্দিন ও খেদাছড়ার তরুন ত্রিপুরা জানান, এই সব ফল ফলারি পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে বিপণনে কৃষকদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়। পাহাড়ের ঢালে, উঁচু টিলায় অবস্থিত বাগানের ফসল ক্রুটিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থা, পরিবহন সুবিধার অভাব এবং বিপণনের পরিবেশ না থাকায় কৃষক সঠিক বাজার মূল্য পায় না। পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল।  ফলে দ্রুত বাজারজাত করা যায় না। কাঁদে করে,সাইকেল ও রিকশায় এবং ভ্যান গাড়ি ও খোলা জিপে (চাঁদের গাড়ি) নানা প্রকারের মৌসুমী ফল স্থানীয় বাজারে এনে স্তুপাকারে রাখা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় অনেক ফসলই বাগানে কিংবা মাঝ পথে পচে নষ্ট হয়।

 

আর ভাড়ায় গাড়ি নিয়ে সমতল জেলায় পাঠানোও খ্বুই ব্যয়বহুল।

এদিকে কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, পাহাড়ি দুর্গম এলাকা থেকে চাষিরা কষ্টকরে বাজারে এনে এই সব ফসলের ন্যায্যমূুল্য পায় না। রয়েছে চাঁদাবাজদের উৎপাত।  বাজারে আনার সঙ্গে সঙ্গে দালাল ও ফরিয়াদের খপ্পরে পড়তে হয়। দালালদের মর্জির উপর ফসলের দাম উঠা নামা করে।  সবাই একজোট হয়ে দাম হাঁকে। এই অবস্থায় ফসলের বাজারমূল্য অনেক কমে যায়। এতে বঞ্চিত হয় কৃষকেরা। উপরন্তু রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার স্থানীয় কর।

অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান’র ভাষ্যমতে, কৃষক ন্যায্য দাম না পেয়ে রাগ করে ফলফলারি বাজারেই ফেলে যান। এ রকম দু:খজনক ঘটনা হরহামেশাই দুর্গম পাহাড়ি বাজারগুলোয় দেখা যায়। কেবল মাত্র হিমাগার না থাকায় কৃষকদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।