আর কত প্রাণ ঝরবে সড়কে

প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর আমাদের গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন মেনেই নিয়েছি সড়ক থাকলে দুর্ঘটনা ঘটবেই, তাতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটবে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু দুর্ঘটনার খবরে জাতি স্তম্ভিত হয়ে পড়ে, কাতর হয়ে পড়ে। যেমন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো নয়। এমন ঘটনার পর প্রশ্ন জাগে মনে আর কত প্রাণহানির পর দেশের সড়কগুলো নিরাপদ হবে?
সোমবার দুপুরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ৩ শিক্ষার্থী। রাঙ্গুনিয়া ঘুরে তারা চুয়েটের দিকে ফিরে আসছিলেন। একই সময়ে একটি বাস বহদ্দারহাট থেকে রাঙ্গুনিয়ার দিকে যাচ্ছিল। সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় বেপরোয়া বাসটির সঙ্গে চুয়েট শিক্ষার্থীদের মোটর বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় ঘটনাস্থলে মারা যান শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান তৌফিক হোসেন। শান্ত সাহা পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী । তৌফিক হোসেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ।
একইদিন কক্সবাজারের চকরিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একজন পথচারী ও এক বাইকআরোহীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। তারমধ্যে দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহত অপর তিনজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পৌরসভার মৌলভীরকুম বাজারের কাছে একটি দুর্ঘটনা এবং রোববার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে মহাসড়কের ভেণ্ডিবাজার আপন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে অপর দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়। দুর্ঘটনায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী হাবিব উল্লাহ মিজবাহ (২৮)। অপরদিকে রবিবার দিবাগত রাতে মহাসড়ক পারাপারের সময় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান পথচারী আপন জলদাস।
বোয়ালখালীতে বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, মিজানুর রহমান (৩২) ও দেলোয়ার হোসেন (৩০)। সোমবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে আরাকান সড়কের রায়খালীর পুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ দুর্ঘটনা একইদিন শুধুমাত্র চট্টগ্রামে ঘটেছে। সারাদেশে একইদিনে মৃত্যুর ঘটনা আরও বেশি।
চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা আরেকটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হলো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। দেশে প্রতিদিন যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার বিশাল অংশ মোটরসাইকেলে। এটা এখন বড় দুর্ভাবনার কারণ হয়ে উঠেছে। কম বয়েসী তরুণদের মধ্যে মোটরসাইকেল কেনা ও তা নিয়ে চলাফেরা করা সামাজিক মর্যাদার কারণ হয়ে উঠেছে। সে সঙ্গে উঠতি বয়েসী তরুণদের বেপরোয়া আচরণও দুর্ঘটনার বড় কারণ।
এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে হবে। যেকোনো উপায়ে আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষয়টি আর উপেক্ষা করার মতো অবস্থায় নেই। প্রতিদিন যে হারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে জাতীয়ভাবে একটি উপায় বের করার চেষ্টা চালাতে হবে।