নাইক্ষ্যংছড়িতে জনপ্রিয় হচ্ছে সৌর বিদ্যুতচালিত ফেরোমনের ব্যবহার 

স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় সন্তুষ্ট কৃষক

জাহাঙ্গীর আলম কাজল, নাইক্ষ্যংছড়ি :

ধানসহ বিভিন্ন ফসলের নানা পোকামাকড় চিহ্নিত করে আলো জ্বালানোর মাধ্যমে নিধন করার পদ্ধতির নাম ফেরোমন বা আলোক ফাঁদ।বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সৌর বিদ্যুতে ফেরোমনে ফাঁদের ব্যবহার। গত শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,উপজেলায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে সৌর বিদ্যুত। বৈদ্যতিক বাল্বের পাশাপাশি সৌর বিদ্যুতের এই আলোকফাঁদ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় এবং কার্যকর হয়ে উঠেছে। চলতি আমন মৌসুমে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ক্ষেতে কৃষকরা সৌর বিদ্যুত ও বৈদ্যতিক বাল্বের আলো জ্বালিয়ে পোকামাকড় দমন করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের এই আলোকফাঁদ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিয়েছে। চলতি আমন ধানের ক্ষেতে এই প্রক্রিয়া অনুসরন করে পোকামাকড় দমন করছেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধানের ক্ষেতের আইলে কোথাও পানি ভর্তি পাত্রে আবার কোথাও কাগজের উপড় সৌর বিদ্যুত ও বৈদ্যতিক বাল্বের আলো জ্বেলে ধানের আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পোকা দমন করছেন। এর ফলে কোন রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষকরা নিজেই জমিতে এই পোকামাকড় রোধ করছেন। ৩টি খুঁটির আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এই তিনটি খুঁটির মাঝখানে আলো জ্বালানো হয়। আলোর নিচে রাখা হয় পানির পাত্র। ফসলের পোকামাকড় আলো দেখে সেই আলোর দিকে ধেয়ে আসে। পরবর্তীতে তারা পানিতে পড়ে যায়। এভাবেই পোকামাকড় নিধন হয় ফসলের। এই আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে এলাকার কৃষকদের বর্তমানে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। কীটনাশক ব্যবহার করতে না হওয়ায় কৃষকদের খরচ অনেকটাই কম হচ্ছে এবং অন্যদিকে ধানের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চলতি বছর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার আমন মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৮শ ৩৮ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের অনুপ্রেরনায় কৃষকরা বর্তমানে এই আলোক ফাঁদ পদ্ধতির প্রতি উৎসাহিত হয়েছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই আমন ধানের শত্রু বিভিন্ন পোকা নিধন করতে পারছেন। এতে করে আমন ক্ষেত পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাচ্ছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বিছামারা গ্রামের কৃষক আব্দু রশিদ, আদর্শগ্রামের কৃষক ছৈয়দ নূর, ঠান্ডাঝিরি কৃষক মৃদুল বড়ুয়া,বাগানঘোনা গ্রামের কৃষক শামশুল আলম, মো.ইসমাইল ও ব্যবসায়ী পাড়া গ্রামের কৃষক শাহ্ জাহান জানান, আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হয়েছি।

সহজ লভ্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা খুব সহজেই ক্ষেতের পোকামাকড়গুলো নিধন করতে পারছেন। পোকামাকড়গুলোর উপস্থিতি চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন। এই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব বলেও উল্লে­খ করেন কৃষকরা। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ  কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, বৈদ্যুতিক বাল্বের পাশাপাশি সরকারিভাবে উপজেলায় ১০ সৌরবিদ্যুত কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। এই আলোক ফাঁদ পদ্ধতি একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধানের ক্ষেতে পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা কোন প্রকার ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই কৃষকরা ধানের ক্ষেতের পোকা মাকড় নিজ হাতে নিধন করতে পারছেন। কৃষকরা যদি এই পদ্ধতিটি আমন মৌসুমে অব্যাহত রাখেন তাহলে একদিকে তাদের ধান উৎপাদনে খরচ কম হবে এবং অপরদিকে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম রাজীব জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ব্লকে রোপা আমনের চাষ হয়েছে ২শ৪৮ হেক্টর। আমার ব্লকে বিভিন্ন জায়গায় কৃষকদের নিয়ে আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছি। আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ধানের জমিতে বর্তমানে কিকি পোকামাকড় রয়েছে তা সনাক্ত করে কৃষকদের ক্ষতিকারক পোকা দমনে পরামর্শ দিই। এটি পরিবেশবান্ধব ও সহজ একটি পদ্ধতি।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো, ইনামুল হক জানান,কৃষকদের মধ্যে আলোকফাঁদ পদ্ধতি উপ-সহকারি কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ক্ষেতে কৃষকেরা আলো জ্বালিয়ে পোকামাকড় দমন করছেন। প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে ব্ল­কের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কর্মকর্তারা।