জেব্রা দম্পতির ঘরে নতুন শাবক

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের আধুনিকায়ন । সুবিশাল পরিসরে সবুজ বেষ্টনীতে বেড়েছে বন্যপ্রাণীর প্রজনন

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জেব্রা দম্পতির ঘরে এসেছে নতুন শাবক

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া »

একবছর পর আবারও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জেব্রার ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। গত ২০ এপ্রিল পার্কের বেস্টনীতে নতুন শাবকটির জন্ম হয়। নতুন শাবকসহ সাফারি পার্কে জেব্রা পরিবারে মোট সংখ্যা হয়েছে সাত। এর মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি মাদি এবং তিনটি বাচ্চা।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( তত্ত্বাবধায়ক) রেঞ্জ অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২০ এপ্রিল পার্কের বেস্টনীতে জেব্রা শাবকের জন্ম হয়েছে।

জেব্রাশাবকটি চার দিন আগে জন্ম হওয়ার পর বাচ্চাটিকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। মা জেব্রা ও শাবকটি সুস্থ রয়েছে। শাবকটি জন্মের পর থেকে মায়ের সঙ্গে ঘোরাফেরা করছে। এখনো জেব্রাশাবকটির নামকরণ করা হয়নি।’

পার্কের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে চতুর্থবারের মতো বাচ্চা দিয়েছে জেব্রা দম্পতি। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেব্রা শাবকের জন্ম হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ সালের ১১ মার্চ জেব্রা পার্কের আবদ্ধ পরিবেশে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল জন্ম নেওয়া সদ্যোজাত শাবকসহ পার্কে রয়েছে সোট সাতটি জেব্রা।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ মে বেনাপোল সীমান্ত থেকে ৬ টি জেব্রা জব্দ করে পুলিশ। এরমধ্যে তিনটি পুরুষ এবং তিনটি মাদি (নারী) জেব্রা ছিল। জেব্রা ছয়টি গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নেওয়া হয়। সেখানে এক মাস রাখার পর ওই ৬ টি জেব্রা দেশের প্রথম কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ জানিয়েছে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনার পর ৬টি জেব্রার থেকে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর, ২০১৯ সালের ২২ জুলাই এবং একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনটি জেব্রা মারা যায়। এরপর সাফারি পার্কে তিনটি জেব্রা অবশিষ্ট থাকে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( তত্ত্বাবধায়ক) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিশাল বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ গহীন জঙ্গলে জেব্রার বেষ্টনী নির্মাণ করেছি। এতে জেব্রার দল গহীন জঙ্গলের ভেতরে থাকে। দিনের বেলায় খাবার গ্রহণের জন্য বেষ্টনীর মুল পয়েন্টে আসে। তখন দর্শনার্থীরা জেব্রার বিচরণ দেখার সুযোগ পায়।

তিনি বলেন, ২০২৩ সাল ও এবছর সহ টানা দুই বছর বাচ্চা দিয়েছে জেব্রা। এখন পর্যন্ত জেব্রা দম্পতির ঘরে চারটি শাবকের জন্ম হয়েছে। চতুষ্পদ স্তন্যপায়ী জেব্রা মূলত দলগতভাবে বাস করে। দল বেঁধে চলাফেরা করে। এদের দিনে দুই বেলা করে ভুট্টা, ভুষি ও গাজর খেতে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বেষ্টনীর ভেতরে ঘুরে ঘুরে খাস খায় জেব্রার দল।

জানতে চাইলে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ চট্টগ্রামে বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সাফারি পার্কে জেব্রা শাবকের জন্ম আমাদের জন্য একটি সুখবর। সরকারের মেগাউন্নয়ন পরিকল্পনার আলোকে ইতোমধ্যে পার্কের বন্যপ্রাণীর বেস্টনীগুলো আধুনিকায়ন ও সুবিশাল পরিসরে তৈরি করা হয়েছে। এতে বন্যপ্রাণী গুলো নিবিঘ্নে চলাচল ফেরার পাশাপাশি কোলাহল মুক্ত পরিবেশে প্রজনন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, জেব্রা সব পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। বর্তমানে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু পার্কে উপযোগী পরিবেশ তৈরি ও সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে বন্যপ্রাণীগুলোর শাবক জন্ম দানের হার বেড়ে চলছে।