কুতুপালংয়ে ইউপি নির্বাচনী হাওয়া

রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :

উখিয়ার বহুল আলোচিত জনপদ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কুতুপালংয়ে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কাক্সিক্ষত নির্বাচনে ইতিমধ্যে স্বঘোষিত প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকার মাঠে-ময়দানে নির্বাচনী প্রচারণা, পথসভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ভোটারদের মন আকৃষ্ট করার চেষ্টায় রাতদিন অতিবাহিত করছেন। রোহিঙ্গাার কারণে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এ ওয়ার্ডের শূন্যপদে উপনির্বাচনে ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ ওয়ার্ডের মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ বখতিয়ার আহমদের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুতে নির্বাচন অফিস ৯ নম্বর ওয়ার্ড শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়। আগামীকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) মনোনয়নপত্র সরবরাহ ও জমা দেওয়ার শেষ তারিখ এবং ২০ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিলের ধারাবাহিকতায় এ ওয়ার্ডে ৪ হাজার ৫শ’ ভোটারের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা যাচ্ছেন আর কুশল বিনিময় করে নিজের গুণগান ও নির্বাচিত হলে ভবিষ্যতে ভোটারদের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করছেন।

গত রোববার রাতে উঠান বৈঠকে আলহাজ মরহুম বখতিয়ার আহমদের সহধর্মিণী শাহিনা বেগম বলেছেন, তার স্বামীর কাছে অবৈধ আয়ের উৎস ছিল না এবং কোনো দিন তিনি অনৈতিকভাবে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেননি। যতটা পেরেছেন মানুষের উপকার করেছেন। গ্রামের অনেক নিরীহ সহায়-সম্বলহীন পরিবারের মেয়েকে তিনি তার ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে বিয়ে পড়িয়েছেন। মাদকদ্রব্য, চোরাচালান, ডাকাত-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার ।

শাহিনা বেগম উপস্থিত ভোটারদের তার স্বামীর অনুপস্থতিতে গ্রামবাসীর আমানত হিসেবে তার ছেলে হেলালকে আসন্ন উপনির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি কেঁদে উঠলে ভোটারদের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে সভা প্রাঙ্গণ।

এ ওয়ার্ডের আরেক বর্ষীয়ান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও উখিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নুরুল হক খান বলেন, আওয়ামী রাজনীতি ও পারিবারিক মর্যাদায় তিনি এলাকায় পরিচিত। তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গণমানুষের সেবা করে গেছেন। বৌদ্ধজনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ ওয়ার্ডের ভোটারদের সর্বময় রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দাবি করে নুরুল হক খান বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত স্থানীয়দের সুরক্ষা ও রোহিঙ্গাদের সেবা করেছেন রাতদিন।

যেকোনো মানুষের বিপদের মুহূর্তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে দৃশ্যমান উপকার করেছেন। তাই তিনি জাতিধর্মনির্বিশেষে যুবক, মধ্যবয়সী ও বয়োবৃদ্ধ মহিলা-পুরুষের ভোট দাবি করে আগামী উপনির্বাচনে প্রতিদান দেওয়ার মিনতি জানান। তিনি বলেন, শংকিত জনপদ কুতুপালংয়ে একজন শক্তিশালী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ইউপি সদস্য দরকার। তাই ভোটারদের তিনি তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

মেম্বার প্রার্থী সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হক মেম্বার তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণের পাশে ছিলেন।

ভবিষ্যতেও ভোটারদের কাজ করার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, তাকে পুনরায় ভোট দিয়ে এ ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচিত করলে ভোটাররা যেকোনো আপদকালীন সময়ে তাকে পাবেন। নির্বাচনে হেলালের মাতা শাহিনা বেগম ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরসহ ৪ জন প্রার্থী ইতিমধ্যে মাঠে,-ঘাটে, ভোটারদের ঘরে ঘরে ভোটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন বলে বেশ কয়েকজন ভোটার জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার ইরফান উদ্দিন জানান, এ ওয়ার্ডের ২টি ভোটকেন্দ্র কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় ও পাতাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে তৈরি রাখা হয়েছে।

আগামী ২০ অক্টোবর ভোটগ্রহণের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে দাবি করে ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, দৃশ্যমান ভোট অনুষ্ঠানের জন্য কোনো প্রকার কার্পণ্য ও প্রভাবিত হওয়ার আশংকামুক্ত থাকবে প্রশাসন।