অর্থই চালিকাশক্তি

ড. আনোয়ারা আলম »

পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে যা তা হচ্ছে অর্থ। সবার ওপরে মানুষ সত্য নয়, বরং অর্থই সত্য এবং চালিকাশক্তি। তাই আমরা গভীর বেদনার সাথে দেখি রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের পেছনে আমেরিকা অতঃপর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার চক্রে বিশ্বের সমগ্র দেশ। সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বাড়ছে দারিদ্র্য, বাড়ছে বৈষম্য। একই সাথে গভীর বেদনায় দেখি গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে ও আগ্রাসনে লাখো লাখো মানুষ বিশেষত নিষ্পাপ শিশুর রক্তাক্ত লাশের স্তুপ! অর্থের কি নিষ্ঠুর আধিপত্য।
অর্থ হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজের ধর্ম অর্থাৎ ‘সবার ওপরে অর্থই সত্য।’
অর্থনাীতির ভাষায় অর্থ শুধু গতিশীল নয়, সৃষ্টিশীলও। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, শ্রম শিল্প থেকে শ্রম শিল্পে, ব্যাংক থেকে শত শত বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে ঘুরে বেড়ানো এবং অনবরত বংশবৃদ্ধি করা। সবই এ যুগে বেচাকেনার পণ্যে পরিণত অর্থাৎ অর্থ নিজে রূপান্তরিত হয়ে সকলকেই রূপান্তরিত করছে। মানুষ ও এখন পণ্য, মুনাফার শিকার। এমনকি এর প্রজননশক্তি এত প্রচণ্ড, তার সৃষ্টিশক্তি এতই প্রবল যা নারীর প্রজননক্ষেত্রকে ধ্বংস করে তার এক বিরাট অংশকে বেচাকেনার পণ্যে পরিণত করেছে।
কার্ল মার্কস তাই বলেছেন -‘এ যুগের অর্থের ঘূর্ণাবর্তে যা পড়বে তাই সোনা হবে’।
সমাজের শিরা-উপশিরায় এখন অর্থের প্রবাহ। শুধু কি সমাজ! রাজনীতি ও সমাজ যেমন তেমনি শিক্ষা থেকে শুরু করে সংস্কৃতিও অর্থের নিয়ন্ত্রণে।
শিক্ষাক্ষেত্রেও অর্থের প্রভাব। অর্থাৎ শিক্ষা ও পণ্যে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য মানবিক মানুষ গড়ে তোলা; কিন্তু শিক্ষায় যেমন নানাধরণের বিভাজন, তেমনি অবস্থাভেদে খেয়াল করুন, মাদ্রাসায় কারা! বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা। আর ব্রিটিশ ক্যারিকুলামে পড়াচ্ছেন ধনীদের সন্তানদের। উদ্দেশ্য একটাই হয় দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া নয়তো তথাকথিত কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো। অতঃপর দেশের বাইরে। একবার বিদেশে পাঠাতে পারলে আপনার উদ্দেশ্য সার্থক। আরও একটি ব্যাপারও আছে যেমন আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার কাঁটাছেড়া। এতে একদিকে বিদেশে যেমন বিপুল পরিমাণে অর্থ তেমনি মেধাও পাচার হচ্ছে। দেশের জন্য এটি এক অশনিসংকেত।
আবার শিক্ষা জীবনে ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য কি’-সেখানে অনেকেরই লক্ষ্য থাকে এমন কোন পেশা যাতে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। তাই বিসিএস পরীক্ষায় অনেক মেধাবী শিক্ষকও চলে যান অন্য পেশায়। যে পেশায় ওপরি লাভ আছে বা সম্মানী বেশি। তাহলে শিক্ষকতায় আসছেন কারা! অনেকে একেবারে অপারগ হয়ে অনেকে হয়তো নিজের আদর্শের জন্য। যদিও সংখ্যায় তা অনেক কম।
শিক্ষাক্ষেত্রেও অর্থের প্রভাব। অর্থাৎ শিক্ষা ও পণ্যে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য মানবিক মানুষ গড়ে তোলা। কিন্তু শিক্ষায় যেমন নানাধরণের বিভাজন, তেমনি অবস্থাভেদে খেয়াল করুন,মাদ্রাসায় কারা! বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা। আর ব্রিটিশ ক্যারিকুলামে পড়াচ্ছেন ধনীদের সন্তানদের। উদ্দেশ্য একটাই হয় দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া নয়তো তথাকথিত কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো। অতঃপর দেশের বাইরে। একবার বিদেশে পাঠাতে পারলে আপনার উদ্দেশ্য সার্থক। আরও একটি ব্যাপার ও আছে যেমন আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার কাঁটাছেড়া। এতে একদিকে বিদেশে যেমন বিপুল পরিমাণে অর্থ তেমনি মেধাও পাচার হচ্ছে। দেশের জন্য এটি এক অশনিসংকেত।
আবার শিক্ষা জীবনে ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য কি’ – সেখানে অনেকেরই লক্ষ্য থাকে এমন কোন পেশা যাতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।তাই বিসিএস পরীক্ষায় অনেক মেধাবী শিক্ষকও চলে যান অন্য পেশায়। যে পেশায় ওপরি লাভ আছে বা সম্মানী বেশি। তাহলে শিক্ষকতায় আসছেন কারা! অনেকে একেবারে অপারগ হয়ে অনেকে হয়তো নিজের আদর্শের জন্য। যদিও সংখ্যায় তা অনেক কম।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ও অর্থের প্রাধান্য। শুদ্ধ মেধা ও মননচর্চার চাইতে উদ্দেশ্য অর্থ অর্জন। আপনি সঙ্গীতে হয়তো কিছু খ্যাতি পেলেন তো! নিজেকে এই সাধনায় ব্রত রেখে নিবেদিত হওয়ার চাইতে খুলে বসলেন নিজেই একটা সঙ্গীত শেখার স্কুল। অথচ ইতিহাসের পাতায় দেখি একজন উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী রবি শংকরের প্রথম স্ত্রী যিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের মেয়ে তথা অন্নপূর্ণা তিনি চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকলেও সঙ্গীত শেখাতেন বিনে পয়সায়। এটি ছিল তাঁর ব্রত।
এগুলো এখন শুধুই রূপকথা। বিভিন্ন শাখায় একই অবস্থা। সবকিছুই পণ্য।
শুনি কবিতা না-কি বিক্রি হচ্ছে। জানিনা কতোটা সত্যি। তবে একজন স্বৈরশাসক এরশাদের কবি কাহিনির কথাতো সবাই জানি। ক্ষমতার কাছে নতজানু হয়েছিলেন একজন বিখ্যাত কবি।
ক্ষমতার উৎস এখন অর্থ। এতো এতো খরচে ভোটের নমিনেশন পাওয়ার জন্য ইঁদুর দৌড়! উদ্দেশ্য কি জনগণও দেশের প্রতি প্রেম! মনে হয় না। একবার জিতে গেলেই হলো। অতঃপর ক্ষমতার সাথে অর্থ এবং অর্থ।
মজার ব্যাপার কি জানেন! এখন কারো অসুস্থতায় যদি দোয়া করতে বলেন এমন কাউকে, যিনি ধর্ম নিয়ে সংগঠন করেন বা মিলাদ মাহফিল, সেখানেও অর্থ এবং অর্থ। আমার ছেলের দুর্ঘটনার পরে এ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আর ওর প্রাণভিক্ষা করে যে যা বলেছেন তাই করেছি।
মাজারে যান জেয়ারত করতে! ছুটে আসে একটা দল। শুধু নিজে নামাজ ও দোয়া করলে হবেনা। নির্দিষ্ট বাক্সে দান করতে হবে। কিন্তু এই দানের টাকায় দেশের গরীবের সেবার চাইতে নিজেদের পকেট ভারী। মাজার সংস্কৃতির উত্থানের উদ্দেশ্যও কিন্তু অর্থ উপার্জন। তবে ব্যতিক্রমও আছে। তবে তা সংখ্যায় নগণ্য।
তবে একটা কথা বলতে হয়- অর্থ না থাকলে আপনি সমাজ সেবা বা অন্য যে কোন সেবামূলক কার্যক্রমে ও অংশীদার হতে পারবেন না। এ সমাজে অর্থ ছাড়া আপনি একেবারে মূল্যহীন। পুঁজিবাদী সমাজের রক্তপ্রবাহ হচ্ছে অর্থ। সময়ের সাথে ঘুরপাক খেতে খেতে অর্থের প্রতিধ্বনি -অর্থ স্বর্গ, অর্থ ধর্ম, অর্থ বংশ এবং সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু অর্থ। পরিশেষে বলি -‘অর্থের এই ঘুরপাকে পুরো বিশ্বে যেমন নেমেছে মানবিক বিপর্যয়, তেমনি দেশেও উদ্ভব হছে এক নব্যশ্রেণীর। জানি না ভবিষ্যৎ কোন পথে’।