বঙ্গবন্ধু রেল সেতু : যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে একটি মাইলফলক

ড. মো. মোরশেদুল আলম »

যোগাযোগের অন্যতম সাশ্রয়ী, সহজ, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব মাধ্যম হচ্ছে রেল। রেলপথ সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে সমগ্র দেশকে রেলপথের আওতায় আনার জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও আয়বৈষম্য নিরসনে ভারসাম্যমূলক সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে যোগাযোগব্যবস্থার ভূমিকা। আর যোগাযোগের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো রেল। বাংলাদেশে তিন হাজারের বেশি রেল সেতু রয়েছে। এতদিন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু হলো পাবনার পাকশীতে নির্মিত একশ বছরের পুরনো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং সেতুতে রেল সংযোগের ফলে বদলে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পদ্মা সেতুর পর এবার যমুনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে বাড়বে ট্রেন ও যাত্রীর সংখ্যা। পুরো দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সরকার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলছে। অন্যপাশে ভারতের ফুলবাড়ি অংশে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে দেশটির রেলপথবিভাগ।
রাজধানী ঢাকা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর ওপর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার অদূরেই নির্মিত হচ্ছে দেশের মেগা প্রকল্পের অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। নদীটির ওপর দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই কর্মকাণ্ডকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে নদীর দুই পাড়ে দুটি প্যাকেজে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের তত্ত্বাবধানে নতুর দিগন্ত সৃষ্টির লক্ষ্যে এ কর্মযজ্ঞ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, নেপাল ও বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। মোট ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর প্রায় ৩ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০ শতাংশ। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের অধীন রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ ২০২৫ সালের শেষ দিন পর্যন্ত। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। বর্তমানে একইসাথে সেতু নির্মাণ চলছে একদিকে, অন্যদিকে খুঁটিতে স্প্যান বসানোর কাজও চলমান। আগামী বছর বাণিজ্যিক ট্রেন চললেও পুরোটা সময় ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ হিসেবে রাখা হয়েছে। ট্রেন চলাচলে ত্রুটি-বিচ্যুতি এ সময় পরীক্ষা করা হবে। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ চালু হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৩.৭০ কিলো-নিউটন/ মিটার ওজন বহনের অনুমতি রয়েছে। একটি ট্রেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পাড়ি দিতে পারবে। আবার ট্রেনে বেশি বগি যুক্ত করার সুযোগ নেই। তাছাড়া রয়েছে এক লাইনের সীমাবদ্ধতা। এতে করে অধিকসংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুতে চলাচল শুরু হলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতেও ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। যমুনা নদীতে বিভক্ত রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে আধুনিক ট্রেন যাত্রার সূচনা হবে। এই সেতুটি সার্ক. বিমসটেক, সাসেক ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রেলওয়ে রুট এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও মূলকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ আগস্ট। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে সে দেশের সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদনের পর ২০১৭ সালের মার্চে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। দুই অংশের জন্য ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি সই হয়। প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। স্টিল অবকাঠামোয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। স্টিল স্ট্রাকচারের সকল কাঁচামাল জাপানের। এগুলো ভিয়েতনামে ফেব্রিকেশন করে দেশে স্টলেশন কাজ চলছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন, কারিগরি সহায়তা, স্থাপনাগুলোর অবকাঠামো ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দিচ্ছে যে দেশগুলো, জাপান তার মধ্যে অন্যতম। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দুইভাগে চলমান আছে। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন সেতু চালু হলে দিনে চলবে ৮৮টি ট্রেন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ঘণ্টায় ১৫-২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে নতুন এই রেল সেতুতে ব্রড গেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। এতে সময় বাঁচবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। এতে করে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সঠিক সময়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের মূল সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এর সঙ্গে সেতুর দুই প্রান্তে থাকছে .০৫ কিলোমিটার সংযোগ সেতু, ৭.৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে সংযোগ বাঁধ এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতুর পাশাপাশি প্রকল্পের অধীনে ৩টি স্টেশন বিল্ডিং, ৩টি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, ৩টি লেভেল ক্রসিং গেট ও ৬টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রেল সেতুর পূর্বপ্রান্তে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও ২টি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। যমুনা নদীর ওপর ৩০০ মিটার দূরত্বে পাশাপাশি দুইটি সেতু। চলমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এবং অন্যটি হচ্ছে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগাপ্রকল্প দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাক সম্বলিত রেল সেতু। দেশের কোনো রেল সেতু নির্মাণে জাপানি প্রযুক্তিতে সিøপার ছাড়া রেল লাইন ব্যবহার এবারই প্রথম। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে রেলপথ রক্ষাবেক্ষণের সময় এবং খরচ দুটোই সাশ্রয় হবে। রেল সেতুটি নির্মাণে প্রথমে ৯৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। প্রথম সংশোধনীর পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়নে ২৭.৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৪ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেসন্স এজেন্সি (জাইকা) প্রকল্পের জন্য ঋণ দিয়েছে ৭২.৪০ শতাংশ অর্থাৎ ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৭.৯৮ শতাংশ হয়েছে। এই সেতুটি তৈরিতে যেসব উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সেগুলো এখনকার রেল সেতু থেকে আলাদা। এটি ওয়েদারিং স্টিল দিয়ে তৈরি হবে। এখনকার যে সেতুগুলো রয়েছে সেগুলো দুই তিন বছর পর পর রঙ করতে হয়। বর্তমানে নির্মিতব্য সেতুতে কখনো রঙ করতে হবে না। সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় শূন্য। সেতুটির ফাউন্ডেশনে জাপানের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। যে প্রযুক্তি জাপানের বাইরে কম ব্যবহৃত হয়। রেল লাইনগুলো চাকার ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাওয়া কমাতে বিশেষ উপকরণ ব্যবহার করা হবে। তাই লাইনগুলো কম পরিবর্তন হবে। ব্রিজের সংযোগস্থলে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তাতে ব্রিজটির নিজের ওজন কম হবে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য পৃথকভাবে নদী শাসন করার প্রয়োজন হচ্ছে না। বর্তমানে যে রেল সেতুগুলো রয়েছে তাতে একটি করে লাইন রয়েছে। সেতুটিতে দুটি লাইন থাকবে। যার ফলে কোনো ট্রেনকে সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। একসঙ্গে দুটি ট্রেন দুদিকে চলে যেতে পারবে। যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুতে যে রেললাইন রয়েছে, তা পার হতে দুই পাশে অপেক্ষা ছাড়াও সড়ক সেতু হওয়ায় ওজন ও গতির বিষয়ে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫-২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারে। অন্য রেল সেতুগুলোর ক্ষেত্রে গতি আরও কম। বর্তমানে নির্মীয়মাণ সেতুটিতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারবে। এটির উপর দিয়ে যে কোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে। ব্রিজটির ওপর দিয়ে একাধিক লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে। বর্তমান ব্রিজের উপর দিয়ে সেটি সম্ভব হয় না। ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য সেটিকে অন্য আরেকটি ইঞ্জিন দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আগের সেতুটিতে নেই। যে কারণে পার্বতীপুরের কারখানায় মেরামতের জন্য ইঞ্জিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। বর্তমানে নির্মীয়মাণ সেতুটিতে সেটি সম্ভব। যমুনা নদীর ওপর দিয়ে প্যারালাল রেল সেতুর সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন কাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২২ সালের মে মাসে রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে জাপানি কোম্পানি ইয়াসিমা জেএসইর (জয়েন্টে ভেনচার) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
যমুনা ইকো পার্কের পাশ দিয়ে এটা বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন আধুনিকীকরণসহ ইয়ার্ড রিমডেলিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার মডিফিকেশন, রেলওয়ে ব্রিজ মিউজিয়াম, সেতু রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ও আবাসনও। পৃথক রেল সেতুটি নির্মিত হলে যাত্রাপথ ঝুঁকিমুক্ত হবে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতুও রক্ষা পাবে। এছাড়াও পৃথক রেল সেতু হয়ে গেলে সড়ক সেতুতে অপরিকল্পিতভাবে যোগ করা রেলপথটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুতগামী রেল সুবিধা যুক্ত হবে। সেতুটি খুলে দেওয়া হলে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। মানুষের সহজ যাতায়াত যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনই উত্তর জনপদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। একইসঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আর এক ধাপ এগিয়ে যাবে প্রিয় স্বদেশ।
বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর পাশে পৃথক রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেতু পার হতে ৫ মিনিট সময় লাগবে; যেটি এখন প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগছে। ফলে সময় এখন অনেক কমে যাবে এবং সক্ষমতাও বাড়বে। এই সেতুর মাধ্যমে দেশের পূর্বাঞ্চল রেল ও পশ্চিমাঞ্চল রেল পরস্পরের সঙ্গে নতুন আঙ্গিকে যুক্ত হবে। এটি চালু হলে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ২২টি জেলার সঙ্গে ট্রেন চলাচল সহজ করবে। বর্তমান প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। নির্মাণাধীন সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির ট্রেনও চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আন্তঃএশিয়া রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবে কাজ করবে। ফলে পাশর্^বর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে সেতু দিয়ে অভ্যন্তরীণ ট্রেন বৃদ্ধিসহ ভারত থেকে সরাসরি ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। আন্তঃদেশীয় ট্রেনও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালানো যাবে। এ রেল সেতু দেশের উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিসহ সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকে আলাদা রেল সেতু হতে যাচ্ছে, যাতে আমি মনে করি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি তো হবেই। একইসাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা আরও সংযুক্ত হতে পারব। বাংলাদেশ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। সেতুটি ভবিষ্যতে সেই সংযোগ তৈরি করতে সহায়তা করবে।’

লেখক :  শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়