৩০৪ রান পিছিয়ে শেষ বিকেলে বিবর্ণ বাংলাদেশ

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার সারাটা দিন মেলেনি কড়া রোদের দেখা। হালকা কুয়াশায় ঢাকার আকাশে ছিল বিষণ্নতার ছাপ। এর মাঝেই দিনজুড়ে ব্যাটে-বলে ক্যালিপসো সুরে সবুজ মাঠে খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। সেই সুরে নান্দনিকতা না থাকলেও যেটুকু ছিল তাতেই বিবর্ণ বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম টেস্টে ভরাডুবির পর মিরপুর টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন মুমিনুল হক। প্রথম দিন সমানে সমান লড়াই করলেও দ্বিতীয় দিনে যেন আরো দুর্বল তার দল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় বা তর্কসাপেক্ষে তৃতীয় দলের বিপক্ষে ফলো অন এড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই তৃতীয় দিন খেলতে নামবে স্বাগতিকরা। যেখানে দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেট হারিয়ে ১০৫ রান। ক্যারিবীয়দের চেয়ে এখনো ৩০৪ রানে পিছিয়ে টাইগাররা।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৯ রানে অল আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে ভালো একটি শুরু আশা করেছিল সবাই। তবে সে আশায় গুড়েবালি!
নির্বাচকদের পাগলাটে সিদ্ধান্তে হঠাৎ করেই দলে ডাক পাওয়া সৌম্য প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে। বারবার সুযোগ পাওয়া শান্ত আরেকবার ব্যর্থ। মাত্র ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে তখন অল্পেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ।
তবে দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর এ যাত্রায় দলের হাল ধরেন তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক মুমিনুল হক। দুজনে মিলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। যখন তাদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ, তখনই রাকিম কর্নওয়ালের আঘাত।
জশুয়া ডি সিলভার গ্লাভসে ধরা পড়ার আগে মুমিনুল করেন ২১ রান। সঙ্গী বিয়োগে তামিমেরও যেন আর থাকতে ইচ্ছে হলো না। তাই পরের ওভারেই আলঝারি জোসেফের সাজানো ফাঁদে পা দেন তিনি। এর আগে করেন ৪৪ রান।
মাত্র ৭১ রানে নেই টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান। এমতাবস্থায় ফলো অনের লজ্জা পাওয়ার প্রমাদ গুনছিলেন হয়তো সমর্থকরা। টিম ম্যানেজমেন্টও হয়তো এমন শঙ্কায় ছিল। তবে ধূসর বিকেলটার শেষটা আর বিবর্ণ হয়নি মোহাম্মদ মিথুন ও মুশফিকুর রহিমের সৌজন্যে।
দুজনের ১২১ বলে ৩৪ রানের জুটিতে দিনে আর কোনো উইকেট হারায়নি টাইগাররা। দিনশেষে ৬১ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত মুশফিক। অপরপ্রান্তে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা মিথুন সতীর্থের সমান বল মোকাবেলা করলেও করেছেন ৬ রান।
তৃতীয় দিন এ দুজনের ব্যাটে বড় স্কোরের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। লাইনআপে আরো ব্যাটসম্যান আছেন। তবে ম্যাচ জিততে বা বাঁচাতে চাইলে দুজনের ভালো শুরুর বিকল্প নেই। তারা কতটা পারবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে ক্যালিপসো সুরের বিপক্ষে তারাই এখন লাল সবুজের ভরসা।
এর আগে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ব্যাট করতে নামেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বোনার এবং ডি সিলভা। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলতে থাকা এই দুই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের হাত ধরে বড় সংগ্রহের দিকেই এগোচ্ছিল উইন্ডিজ। দুজনে গড়েন ৮৮ রানের জুটি।
দ্বিতীয় দিনের ১২তম ওভারে মিরাজের করা দ্বিতীয় বলে মোহাম্মদ মিথুনের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন বোনার। তার ৯০ রানের ইনিংসটি ৭টি চারে সাজানো।
এরপর সপ্তম উইকেট জুটিতে জোসেফকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস সেরা জুটি গড়েন সিলভা। যথাক্রমে ক্যারিয়ারে নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জশুয়া ডি সিলভা এবং জোসেফ। দলীয় ৩৮৪ রানে তাদের ১১৮ রানের জুটিটি থামে। ইনিংসের ১৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলে ১৮৭ বলে ৯২ রান করা জশুয়াকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তাইজুল ইসলাম।
পরের ওভারে জোসেফকে প্যাভিলিয়নে পাঠান টাইগার পেসার আবু জায়েদ রাহি। ১০৮ বলে ৮২ রান করা তার ওয়ানডে ধাঁচের ইনিংসটি ৮টি চার এবং ৫টি ছক্কায় সাজানো ছিল।
জোমেল ওয়ারিকানও ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি রাহি। ২ বলে ২ রান করে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওয়ারিকান। শেষ উইকেটে কর্নওয়ালকে নিয়ে ১১ রানে জুটি গড়েন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। তাইজুলের বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৮ রান করতে সক্ষম হন গ্যাব্রিয়েল। আর ২ রানে অপরাজিত থাকেন কর্নওয়াল।
এর আগে বুধবার দিনের শুরুতে টস জিতে ব্যাট করতে নামে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনশেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২২৩ রান। এদিন দলের হয়ে ৪৭ রান করেন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। আর ওপেনার জন ক্যাম্পবেল খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস।
বাংলাদেশে হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি করে উইকেট নেন আবু জায়েদ রাহি এবং তাইজুল ইসলাম। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন সৌম্য সরকার ও মেহেদি হাসান মিরাজ। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।