সাংগ্রাই জলোৎসবে সাঙ্গ বৈসাবি

একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা।

ফজলে এলাহী, রাঙামাটি »

প্রতিবছরই নিয়ম করে মারমা অধ্যুষিত নানান এলাকায় বড় পরিসরে আয়োজন করা হয় মারমা জনগোষ্ঠির প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই। তবে এই প্রথম বারের মত শহরের প্রধান স্টেডিয়ামে এতটা বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে জলোৎসব। ফলে সহজ যোগাযোগ আর সুপরিসর স্থানের কারণে তীব্র গরম উপেক্ষা করেও বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে রঙিন হয়ে উঠে পুরো আয়োজন। বিপুল বিশাল এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই বছরের মত শেষ হলো পাহাড়ের বর্ষবরণ ও বিদায়ের প্রধান উৎসব বৈসাবি।

সাংগ্রাই জলোৎসবে একে অপরের গায়ে মৈত্রী জলবর্ষণের মাধ্যমে পুরোনো বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে ভুলে গিয়ে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। জলোৎসবে নিজেদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে ঐক্যের মেলবন্ধন সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন মারমারা।

ঐহিত্যবাহী ঘণ্টা বাজতেই শুরু হল মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইয়ের জলোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দুই দলে ভাগ হয়ে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করার পাশাপাশি পুরোনো বছরের সব দুঃখ, গ্লানি মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন। মৈত্রী জলবর্ষণের মাধ্যমে নিজেদের অন্তরাত্মাকেও শুদ্ধ করার প্রয়াস তরুণ-তরুণীদের।

মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটির চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার(মাসস) আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী এই পানি উৎসবে মেতে উঠে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। নিজেদের ঐহিত্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে প্রতি বছর কেন্দ্রীয়ভাবে এই জলোৎসবের আয়োজন করে মাসস। পাহাড়ের তিন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত কয়েক হাজার মারমা নারী-পুরুষ একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিনভর উৎসব পালন করতে থাকে। মৈত্রী জলবর্ষণ ও নাচ-গানের মাধ্যমে নিজেদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরেন মারমা তরুণ-তরুণীরা।

জলোৎসবের আগেই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সাংগ্রাইয়ের মাধ্যমে সকলের মধ্যে ঐক্যের বন্ধনের কথাই বললেন। অন্যদিকে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থেকে এতে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি পুরো দেশের অহংকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য্যরে মতো এই অঞ্চলের নান্দনিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যে বর্ণিল উপস্থাপনা তা গর্বের। সকল জনগোষ্ঠির সম্মিলিত ঐক্যের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বহাল রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ‘ নতুন বছর হানাহানি ও সংঘাতমুক্ত হোক পার্বত্য চট্টগ্রাম’- এমন প্রত্যাশার কথাও জানান তিনি।

সাংগ্রাই উৎসবে যোগ দেয়া চট্টগ্রামে কর্মরত ব্যাংকার মতিউর রহমান মানিক বলেন, আমি রাঙামাটির সন্তান হলেও বিভিন্ন সময় শহর চেয়ে দূরে প্রান্তিক নানান জনপদে সাংগ্রাই জলোৎসব হওয়ায় সরাসরি দেখার সুযোগ পাইনি। এবার শহরের প্রানকেন্দ্রেই এই আয়োজন আামিসহ শহরবাসির জন্য একটি বড় সুযোগ করে দিয়েছে। একটি সামাজিক উৎসব কতটা সম্প্রীতির আর উচ্ছাসের হতে পারে,তা সাংগ্রাই এর এই জলোৎসব না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।’

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মারমা সংস্কৃতি সংস্থা(মাসস)’র সভাপতি অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন,রাঙামাটির সকল প্রশাসন ও নাগরিকদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশাল এই আয়োজনটি সফল করা সম্ভব হয়েছে। সকল জনগোষ্ঠী এক সাথে সম্প্রীতির বন্ধনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে এমন আয়োজন বলে জানালেন তিনি।