২০২৬ সাল নাগাদ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিশ্ববাজারে বড় অবস্থান ধরে থাকা চীনের সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করার বিষয়ে আশাবাদী চীন। এই লক্ষ্যে দুই দেশের যৌথ অংশগ্রহণে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যের পর্যায়ে উন্নীত হতে কাজ করবে দুই দেশে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ‘বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে খসড়া যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন হস্তান্তর’ উপলক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাষ্ট্রদূত ওয়েন ছাড়াও বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বক্তব্য রাখেন।

চীনা দূত বলেন, “অনেক বাংলাদেশি আমাকে প্রশ্ন করেন যে, চীন কেন বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করতে আগ্রহী। এর দুইটা কারণ। দুই দেশ একই সঙ্গে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে চাই এবং নির্বিঘ্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই। দ্বিতীয়ত. আমরা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।”

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার পর এফটিএ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদী তিনি।

এই চুক্তি হলে বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি সহজ হবে এবং দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনবে বলেও মনে করেন চীনা দূত।

তিনি বলেন, “এর বাইরে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগকেও এই্ এফটিএ সহজ করে তুলবে। এসব কারণে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যেই চীন বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ সম্পন্ন করতে আগ্রহী।”

চীন বিশ্বের ২৯টি অংশীজনের সঙ্গে ২২টি এফটিএ চুক্তি করেছে। এসব চুক্তির মধ্যে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ দুই ধরনের দেশই আছে।

এসব চুক্তিতে দেশগুলোর লাভবান হওয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আফ্রিকার দেশ মরিসাসের সঙ্গে ২০১৯ সালে এফটিএ হয়েছে। পরের বছর চীনের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ২০২২ সালে চীন কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএ করেছিল। পরের বছর চীনে কম্বোডিয়ার রপ্তানি ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।”

চীনে বাংলাদেশের আম, পাট, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতেও কাজ চলছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত ওয়ান বলেন, “চীন তার দেশের ব্যবসায়ীদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও উৎসাহ দিয়ে থাকে।”

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বাইরেও চীন আমাদের বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগীদের একজন। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৬০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।

“চীনের সঙ্গে আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও দুই দেশের মধ্যে কিছু যৌথ স্বার্থের বিষয় রয়েছে। যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।”

চুক্তির প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, “২০২৬ সালের এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশন হওয়ার পর বাংলাদেশের বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা কিছু নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এই চ্যালেঞ্জ থেকে ব্যবসা বাণিজ্যকে সুরক্ষা দিতে প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

“এই মুক্তবাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে চীন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একক দেশ হিসাবে চীনই হচ্ছে আমাদের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী রাষ্ট্র।”

২০১৮ সালের জুনে চীনের বেইজিংয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রগুলো চূড়ান্ত করেছিল। সেই আলোকে কিছু কাজ হলেও এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে অনেক কাজ করতে হবে।

চীনের ১৪০ কোটি মানুষের অনেক বড় একটা বাজার আছে জানিয়ে সচিব বলেন, “যদি আমরা আমাদের কোনো একটা পণ্য নিয়ে যেতে পারি তাহলে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলে ওই দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আরও আস্থা পাবে। প্রযুক্তি স্থানান্তর হবে।”