শেয়ালের শাস্তি

মো. রতন ইসলাম :

এক বনে এক বাঘ আর শেয়াল থাকতো।

শেয়ালেরা বরাবরই একটু চালাক প্রকৃতির। এই শেয়ালটাও ওই দলের বাইরে না। বাঘকে তেল মেরে চামচামি করে বাঘের সাথে মিলেমিশে থাকতো। বাঘকে মামা বলে ডাকতো, বাঘও ভাগ্নে বলে ডাকতো ওকে। শেয়াল সব সময় বাঘকে ঠকিয়ে যেত। বাঘ অনেক কষ্ট করে হাঁপিয়ে-দাপিয়ে ঘর্ম ঝরিয়ে কত কৌশল করে কিছু একটা শিকার করতো। কিন্তু নিজের শ্রমটা শিকার হয়ে যেত শেয়ালের চালাকির কাছে। অর্থাৎ বাঘের সেই খাবারটা  শেয়ালের পেটে চলে যেত বুদ্ধির থাবায়। বাঘ অনেকটা বোকার মতো হা করে শুধু দেখতো।

একদিন বাঘ একটা খরগোশ শিকার করলো। মুখে তুলে দাঁতের দুপাটির মাঝখানে ফেলে চিবাতে শুরু করবে, সেই মুহূর্তে ধূর্ত  শেয়াল সামনে এসে হাজির। আরে মামা কি করছ, কি করছ? দাঁড়াও! প্রাণটা হারাবে নাকি? বাঘ তো অবাক! কেন কি হয়েছে? খাবারই তো খাচ্ছি প্রাণ বাঁচানোর জন্য। প্রাণ যাবে কেন?

শেয়াল বিছাতে শুরু করল তার নেপো বুদ্ধির জাল। বলল বাঘকে, আরে মামা এই খরগোশটাকে একটু আগে দেখেছি বিষাক্ত গাছের ফল খেতে। তুমি যদি এখন ওকে খাও, নিশ্চিত প্রাণটা হারাবে। তারপরও আমার সন্দেহ হচ্ছে এ খেরগোশটাই সেই খরগোশ কিনা! তাই ভাবছি মামা, তোমার মৃত্যু হতে পারে, এমন সন্দেহের মাঝে তোমাকে ফেলতে দেবো না। কারণ তুমি হলে বনের রাজা। তোমার বেঁচে থাকাটা খুব জরুরি। তাই খাবারটা আমি আগে খেয়ে দেখি। বিষ থাকলে আমি মরব। আর যদি বেঁচে যাই, তবে বুঝব খাবারটা তোমার জন্য নিরাপদ। শেষে খেয়ে নিও।

ধূর্ত শেয়াল খরগোশটার দুই-তৃতীয়াংশ খেয়ে ফেলল চেখে দেখার নাম করে। বাঘ বলল, কী রে ভাগ্নে, তুই তো সবটুকুই প্রায় খেয়ে ফেললি! অবশিষ্ট আর রইলো কি?

শেয়াল বলল, আরে মামা আমার কাছে মনে হলো খরগোশের শরীরের এই অংশে আর ওই অংশে বিষ থাকতে পারে। তাই সব জায়গা থেকেই খেয়ে দেখলাম।

বেশির ভাগটা খেয়ে শেষে বাঘকে বলে শেয়াল, নাও মামা, এবার খাও। এটা সেই খরগোশ না। এতে বিষ নেই। তুমি দ্বিধাহীনভাবে খেতে পারো।

যেটুকু রয়েছে ওটুকু বাঘ আর কী খাবে? বাঘের পেটের এককোণাও ভরবে না ওতে। তাই বাঘ আর খেলো না। কিন্তু বাঘের ধীরে-ধীরে বোধ হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে কোনো না কোনোভাবে শেয়াল তাকে ঠকাচ্ছে। তাই বাঘ ভাবলো, শেয়াল ভাগ্নে, দাঁড়াও তোমাকে আমি শিক্ষাটা দিচ্ছি।

বাঘ একদিন আরেকটি খরগোশ শিকার করলো। বিষাক্ত গাছের রস খরগোশটার পুরো শরীরে মেখে দিল। ঠিক আগের মতোই ধূর্ত শেয়াল এসে হাজির। আবার এক ফন্দি আঁটলো খাবারটা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। বাঘও খুব চতুরতার সাথে বোকার অভিনয় করলো। শেয়াল তো খুব খুশি। খাবার পেয়েছে। আর মনে মনে ভাবছে, বাঘমামা, তুমি কত্ত বোকা! এবারও আমার চালাকি বুঝতে পারলে না। এই বলে খাবার মুখে তুলে নিল মুখে। বেশ মজা করে খাওয়া শুরু করলো। খেতে খেতে শরীরে এক বিষাক্ত যাতনা অনুভব করলো। খাবার ফেলে দিয়ে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করলো। আর বলতে লাগলো, বাঘমামা, তুমি আমাকে কি খাওয়ালে? আমি তো শেষ!

বাঘ  হেসে বলল, ভাগ্নে তুমি সেই প্রবাদটি শোনো নি, ‘অতিচালাকের গলায় দড়ি?’ এতদিন তুমি আমার খাবার চালাকি করে খেয়েছ। এবার বোঝো অতিচালাকির মজা।

সেদিন শেয়াল মরতে মরতে বেঁচে যায়। কিন্তু তারপরে সে কান ধরে তওবা করে। আর কোনো দিন চালাকি করে কাউকে ঠকাবো না। কারণ এর পরিশেষ অতি দুঃখের হয়ে দাঁড়ায়।