রোহিঙ্গাদের ভাসানচর যাত্রা : স্বদেশ প্রত্যাবাসনই মূল সমাধান

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রথম দলটি ভাসানচর যাচ্ছে। সরকারি তথ্যসূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দলটির গতকাল নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার দ্বীপ ভাসানচর পৌঁছার কথা। ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গার ঠাঁই করা যাবে, সেখানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা যেমন বর্ষায় পানি ধরে রাখার সুবিধা, সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, মালটিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার, নানা সরকারি অফিস-এসব রয়েছে। কিছু স্থানীয় ও বিদেশি এনজিও রোহিঙ্গাদের দেখভাল করতে রাজি হওয়ায় তাদের কাজ করতে অনুমতি দিয়েছে সরকার।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ফলে তাদের জীবনযাত্রায়, মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। মানুষের মর্যাদার জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে চাপ ছিলো, আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা ছিল, ক্যাম্পে যেভাবে অপরাধ, খুন-খারাবি বেড়ে যাচ্ছিল তাতে এসব অপ-কর্মকা- স্থানীয় অধিবাসী ও এলাকার নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে উঠছিলো। এটি স্থানীয় প্রশাসনের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়েছে।
কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ও জাতিসংঘ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে আপত্তি জানালেও বিশেষজ্ঞদের মতে তা যুক্তিনিষ্ঠ নয় বলে অভিমত প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। রোহিঙ্গাদের বিপদের সময় কারো পরামর্শের ধার না ধরে মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের খাবার, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সুবিধাদির ব্যবস্থা করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে। সুতরাং রোহিঙ্গারা কোথায় থাকলে ভাল হবে এটি নির্ধারণ করা বাংলাদেশেরই এখতিয়ার। বাংলাদেশ ভাসানচরে যে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে তা জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলি যে কোন সময়ে সরকারের অনুমতি নিয়ে দেখতে পারে। কিন্তু সে সব না করে ঢালাও আপত্তি জানানো কোন কাজের কথা নয়, বরং এ ধরণের মন্তব্য বাংলাদেশের মানবিক প্রচেষ্টাকে নিরুৎসাহিত করে দিতে পারে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ব্যাপারে জাতিসংঘের আপত্তিকে অযৌক্তিক বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মন্তব্য করেন, জাতিসংঘের উচিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাখাইনে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দেয়া।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ‘রোহিঙ্গা সমস্যার তুলনামূলক চিত্র’ শীর্ষক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলিও অস্থিতিশীল হবে। ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক স্বার্থকে আপাতদৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রাধান্য দিচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা যে সব দেশের রয়েছে, সেটি ব্যবহার করতে চাইছে না অথবা তারা মিয়ানমারকে তোয়াজ করার নীতি অনুসরণ করছে। একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী দেশ, যে দেশের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর দশকের পর দশক যে দমন নিপীড়ন চালিয়ে আসছে সে ব্যাপারে বৃহৎ শক্তিগুলি নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়েছে ।
আমরা মনে করি, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন এবং বৃহৎ শক্তিগুলির উচিত মিয়ানমারের রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া এবং বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।