জমিতে লবণাক্ততা বিপদের কারণ হয়ে উঠেছে

শুষ্ক মৌসুমের শেষে মার্চ মাসের শুরুতে কর্ণফুলীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেশি ছিল। এই সময়ের মধ্যে যেসব জমিতে ধান রোপণ করা ও সেচ দেওয়া হয়েছে সেসব জমির চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এর আগে রোপণ করা জমির চারা অনেকটা ভালো রয়েছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, বোয়ালখালীর কধুরখীল ছাড়াও পশ্চিম গোমদণ্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী ও কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের বেশির ভাগ জমিতে রোপা চারা মাত্রাতিরিক্ত লবণ পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ বোরো আবাদ হচ্ছে পুরোটাই সেচনির্ভর। বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় খালের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে সারোয়াতলী ও কধুরখীল এলাকায় ৭-৮ একর জমির ক্ষেত সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ গত দুই বছর ধরে লবণাক্ততার কারণে বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই অঞ্চলে। গত বছর ধান কাটার আগমুহূর্তে লবণাক্ততা ও খরায় পুড়েছিল বোরো আবাদ।
এই সমস্যা শুধু বোয়ালখালীর নয়। চট্টগ্রাম জেলাসহ উপকূলীয় অনেক এলাকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে অণুজীব সক্রিয় থাকতে পারছে না। যে কারণে মাটিতে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস কমে যাচ্ছে। বিপরীতে বাড়ছে কপার ও জিংকের মাত্রা। ফলে ফলন ঠিকমতো হচ্ছে না। লবণাক্ততায় মাটির উর্বরতা কমছে বলে গাছের উৎপাদন ক্ষমতাও কমছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জমিগুলোতে। সেখানকার কৃষিজমি হয়ে পড়ছে অনাবাদি। এর প্রভাবে ফলন কমছে। বাড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের হতাশা। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে এবং সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমি ছিল ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে। অর্থাৎ চার যুগে লবণাক্ত জমি বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আবাদি জমি ২৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চাষযোগ্য ২১ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর। চাষযোগ্য জমির অর্ধেকই লবণাক্ত। প্রতি বছর পাঁচ লাখ হেক্টরের বেশি জমি অনাবাদি থেকে যায়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে। বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি মিশে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণাক্ততা বাড়ছে। জলোচ্ছ্বাসের সময় সমুদ্রের লোনাপানি এসে জমছে কৃষিজমিতে। এ পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষিজমির স্বাভাবিক উৎপাদনক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিতো তাহলে অনেকাংশে লবণাক্ততা কমতো।
এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। কারণ আমাদের জনসংখ্যা অনুপাতে জমি কম। তার ওপর যদি এভাবে প্রতিবছর জমি আবাদের যোগ্যতা হারায় তাহলে দেশে খাদ্যাভাব আবার প্রকট হয়ে উঠবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিকে লবণাক্ততা কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে অন্যদিকে লবণাক্ততা সহনশীল ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে হবে। মোট কথা যা করার তা দ্রুতই করতে হবে।