পরিচ্ছন্ন মননশীলতার চিন্তা-চেতনা মনুষ্যত্বের ধারক

মো. মহসীন »

সামাজিক জীব হিসাবে মানুষ সাধারণত অনেক চেতনাশীল ও ভাবাবেগসম্পন্ন হয়ে থাকে।বিশেষ করে আমাদের স্বচ্ছ মানসিকতায় জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে এ দুটি অপরিহার্য উপাদান। স্বচ্ছতায় ভরপুর মনমানসিকতা থেকে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে সম্প্রীতিবোধের চেতনা সৃষ্টি হয়ে থাকে, কিন্তু হিংসা, বিদ্বেষ, আর অহমিকা একপ্রকার যন্ত্রণাময় মানসিকতার জন্ম দিয়ে থাকে, যা সুস্থ জীবন ধারণের ক্ষেত্রে একসময় কাল হয়ে দাঁড়ায়। অনেকসময় পারিবারিক জটিলতা থেকে কিছু অযাচিত প্রভাবও নিয়ন্ত্রণহীন উগ্র চেতনবোধের জন্ম দিতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে ঐ মানসিকতার কারণে পারিবারিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার আশংকা তৈরি হতে পারে। আমাদের বাঙালি সমাজের অধিকাংশ পরিবারে ঐ ধরনের আচরণ প্রায়ই লক্ষণীয়। যার ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফাটল ধরাটা তেমন বিচিত্র কিছু নয়, এমনকি কত সোনার সংসারে বিরূপ অযাচিত কুপ্রভাব পড়ার কারণে সাংসারিক জীবনের গতিশীলতায় ভাটা পড়ে, বলা যায় সেই পরিবারে তখন অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। তাই বাহ্যিক বা ঘরোয়া অযাচিত কুপ্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মনের সহনশীলতা বাড়ানো অনেকটা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়ায়।
সুস্থ মন মানসিকতার অভাবে শুধু পরিবার বা সমাজ নয়, পুরো জাতি বা দেশ কলুষিত হতে পারে এবং জাতির মধ্যে বিবিধ বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে একপর্যায়ে সহিংসতার আচরণও পরিলক্ষিত হয়। অসুস্থ মানসিকতা অনেক সময় মানুষের মধ্যে অহংকারী আবেগ সৃষ্টি করে থাকে, এই কারণে আমরা দেখি মানুষে মানুষে পারস্পরিকভাবে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে পড়ে এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভালবাসার চিন্তা চেতনা লোপ পেয়ে বসে। এইসব কারণে মানুষের মধ্যে প্রচুর লোভ লালসা, অযাচিত স্বার্থের বিশেষ মোহ সৃষ্টি হয়ে থাকে, এমনকি সর্বপ্রকার ভোগবিলাসের কারণে বিকৃত রুচিবোধসম্পন্ন মানসিকতা সৃষ্টি হয়।
এসব উগ্র দাম্ভিকতা দাপটের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ সহিংসতা আর নৈরাজ্যকর পরিবেশ দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রকৃতপক্ষে এই বিশ্বতো কোন মানুষের সৃষ্টি নয়, সেক্ষেত্রে আমিত্ব ও আধিপত্য বজায় রাখার চিন্তা চেতনাবোধ সম্পূর্ণ অযাচিতÑঅবান্তর বলা চলে, কেননা এসব কিছুই একপ্রকার বিকারগস্ত উগ্র চেতনাবোধের বহিঃপ্রকাশ। তাই আমাদের ভাবতে কষ্ট হয় যে,আজকাল মানুষ সম্প্রীতিবোধ হারিয়ে ফেলছে, আমিত্বের দাপটে হিতাহিতজ্ঞানও লোপ পাচ্ছে, অস্বাভাবিক মানসিকতার বশবর্তী হয়ে মানুষ মানুষকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করছে, ফলে জগতে বড় ধরনের বৈষম্যমূলক ভেদাভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এসব অসুস্থ চিন্তা চেতনা থেকে বের হয়ে আসতে পারলে হয়তো মানবজগতে সত্যিকার সভ্যতার দীপাবলীও স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে পারে। আসলে মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে যখন ন্যায় ও সত্যের পথে পারস্পরিক সম্প্রীতিবোধ ও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবে ,তখনই সাম্প্রদায়িক উগ্রতা ও হিং¯্রতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করবে, তখনই মানুষ মনুষ্যত্বকে উপলব্ধি করবে। ¯্রষ্টার সৃষ্টিজগতে আমরা কি করছি, কোথায় আমাদের সঠিক গন্তব্য! এসব মনে এলে তখন হয়তো পৃথিবীর প্রকৃত সুন্দর পরিবেশ, মানুষের সুস্থ চিন্তা চেতনার অনুকূলে চলে আসতে পারে বলে মনে হয়।
এমনকি মানুষে মানুষে সম্প্রীতিবোধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেগে ওঠার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে । তখনই হয়তো প্রতীয়মান হবে আমরা মানুষ আসলেই শ্রেষ্ঠ জীব এবং মনুষ্যত্বের সকল আচরণ আমাদের রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কত গোপন কায়দা কানুন, কলা কৌশল সারাপৃথিবী জুড়ে চলছে, সব কিন্তু কারো একচেটিয়া আধিপত্যকে টিকিয়ে রাখার অপকৌশল।
করোনা পরবর্তী সময়ে মানবিক চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে। কেবল নিজের দেশ নয়, বিশ্বের সকল দেশের মানুষকে নিরাপত্তা, রক্ষা দেওয়ার কাজটি করোনা পরবর্তী সময়ের শিক্ষা। সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান হলেই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ, সম্প্রীতির মনোভাব জাগ্রত হবে। এটিই হোক রাষ্ট্রসাধনা, মনুষ্যত্বের সাধনা।
লেখক : প্রাবন্ধিক