এলিফ্যান্ট ওভারপাস ব্যতিক্রমী নির্মাণ

লোহাগাড়া চুনতি অভয়ারণ্য

নুরুল ইসলাম, লোহাগাড়া »

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ১শ কিলোমিটার। এরমধ্যে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায় রয়েছে ১০ কিলোমিটার। অভয়ারণ্যের বন্যপ্রাণীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাতি। হাতির অবাধ বিচরণে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে চিন্তা মাথায় রেখে এখানে রেললাইনের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি এলিফ্যান্ট ওভারপাস।

ওভারপাসের ওপরে কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্টি করা হয়েছে পাহাড়ের আদলে ঝোঁপঝাড়। এরমধ্যে দিয়েই চলাচল করবে হাতি আর নিচে দিয়ে চলবে ট্রেন। হাতি ও ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে এলিফ্যান্ট ওভারপাসটি হচ্ছে ব্যতিক্রম।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, এ ওভারপাসটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে প্রথম। এছাড়াও অত্র অভয়ারণ্য রেললাইনে নির্মাণ করা হয়েছে আরও দুটি আন্ডারপাস। এখানে কালভার্ট করা হয়েছে অন্তত ৮টি। আন্ডারপাস দিয়ে হাতি যেমন চলাচল করবে তেমনি কালভার্ট দিয়েও চলাচল করবে সকল বন্যপ্রাণী।

কর্তৃপক্ষের মতে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে চুনতি অভয়ারণ্য এলাকার বন্যপ্রাণীর অবাধ চলাচলের কথা চিন্তা করেই নির্মাণ করা হয়েছে এলিফ্যান্ট ওভারপাস ও আন্ডারপাসসহ কালভার্ট। ওভারপাসের ওপর ইতোমধ্যে রোপন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ২টি বন্যহাতি পার হয়েছে ওভারপাস দিয়ে। ওভারপাস ছাড়া রেললাইনে যেন বন্যপ্রাণী ঢুকতে না পারে সেজন্য রেললাইনের দুপাশে সীমানা প্রাচীরের মতো ব্যারিকেডও নির্মাণ করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর মতে, অভয়ারণ্য এলাকায় বন্যপ্রাণীদের অবাধ যাতায়াতের জন্য ওভারপাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চুনতি অভয়ারণ্য রেঞ্চ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসাইন জানান, চলাচলের সময় রেলের বা হুইসেলের শব্দে বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কিত হতে পারে। হয়তো একসময় অভ্যস্ত হয়ে পড়বে, তবে সময়ের প্রয়োজন।

চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন ওরফে জনু কোম্পানী বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ হওয়াটা ছিল ধারণার বাইরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপে নির্মাণ হয়েছে এ রেললাইন।

আধুনগর ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন বলেন, লোহাগাড়ায় রেলষ্টেশন হয়েছে উপজেলার আধুনগর খাঁনহাট হতে পশ্চিমে নূর মোহাম্মদপাড়া এলাকার সেবারবিলে। যাত্রী সাধারণের জন্য খাঁনহাট হতে রেলষ্টেশন পর্যন্ত রাস্তাটির সম্প্রসারণ ও সংস্কার প্রয়োজন। খাঁনহাট এলাকায় রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ভবন। দখলদারদের উচ্ছেদ করে রাস্তার সম্প্রসারণ করতে হবে। রেলযাত্রীদের যাতায়াতের স্বার্থে রাস্তার উন্নয়ন করতে হবে। অন্যথায় যাত্রীসাধারণের যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, দোহাজারী থেকে সাঙ্গু নদী পার হয়ে কক্সাবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ ছিল অকল্পনীয়। এ এলাকার মানুষের এখান থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাতায়াতের দুর্ভোগের অবসান হল এ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে। এতে বদলে যাবে এলাকার দৃশ্যপট।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক রিদুয়ানুল হক সুজন এ রেললাইন নির্মাণে সাহসী পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এলাকার মানুষের কাছে এ রেললাইন স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং কৃতজ্ঞ থাকবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের মধ্যে দোহাজারী হতে লোহাগাড়া ষ্টেশনের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। লোহাগাড়ায় রেলষ্টেশনের নির্মাণ কাজ চলমান। এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে প্রায় ১ বছর সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের স্থানীয় প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান জানান, নির্মাণাধীন রেলষ্টেশনের কাজ দ্রুত চলছে। কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সনের জুন পর্যন্ত। এ কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করার চেষ্টাও চলছে।