কক্সবাজারগামী ট্রেন ও গভীর সমুদ্রবন্দর সম্ভাবনা জাগাচ্ছে

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা চান্দেরপাড়া এলাকায় নির্মিত আইকনিক রেল স্টেশনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রেলের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি সরকারের শেষ সময়ে কক্সবাজারে এসে সমাপ্ত হওয়া মেগাপ্রকল্পসহ আরও ১৭টি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করছেন তিনি।
রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইকনিক স্টেশন উদ্বোধনের পর সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সেরে বিকেলে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার কথা প্রধানমন্ত্রীর। কক্সবাজার পর্যন্ত রেল সেবাকে বিস্তৃত করা এই সরকারের অন্যতম একটি বড় কৃতিত্ব। কারণ ব্রিটিশের রেখে যাওয়া রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা দিনদিন সংকুচিত হলেও বর্তমান সরকারের আমলেই শুধু রেলের সম্প্রসারণ ঘটেছে। নতুন রেলপথ তৈরির সঙ্গে সঙ্গে নতুন স্টেশন হয়েছে। নতুন রিটে আন্তনগর ট্রেন চালু হয়েছে। পুরাতন রুটে আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি ১৪৩টি নতুন ট্রেন চালুসহ ৪৪টি ট্রেনের সার্ভিস/রুট বর্ধিতকরণ করা হয়েছে। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পেয়েছে সে সঙ্গে ১০৯টি নতুন লোকোমোটিভ ও ৬৫৮টি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, ৫৩০টি যাত্রীবাহী কোচ, ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন সংস্কার করা হয়েছে।
আজ উদ্বোধনের তালিকায় থাকা প্রায় দেড় ডজন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ, ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ির ২৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র (প্রথম সংশোধিত), ৬৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ প্রকল্প, ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয় বোর্ড (বাপাউবো) কর্তৃক ২১২ একর ভূমি ভরাট ৪ দশমিক ৮ কিমি স্লোপ প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ।
দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বা ততোধিক গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার সিম্বল হয়ে থাকবে। দেশের অর্থনীতিতে দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে। সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন খরচ ১০ থেকে ২০ ভাগ কমে আসবে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। মোট কথা কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলার সঙ্গে সঙ্গে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতির গতিকে যে বাড়িয়ে দেবে তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না।