টানেলের সুফলে প্রতিবন্ধকতা দুই প্রান্তের যানজট!

আনোয়ারা প্রান্তে টানেলের টোলপ্লাাজা। ছবি : শোয়েব ফারুকী

নিজস্ব প্রতিবেদক »
পুরকৌশলের পাশাপাশি ইলেকট্রোমেকানিকাল (বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক) কাজ শেষে বঙ্গবন্ধু টানেলটি উদ্বোধন হচ্ছে। কিন্তু আনোয়ারার চাতরি ও পতেঙ্গা অংশের যানজট টানেলের সুফলকে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়টি উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে।
এ নিয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘টানেলের ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কাজ শেষে হওয়ার পর প্রি-কমিশনিং ও কমিশনিং দেখা হয়েছে। এছাড়া সবগুলো সিস্টেম কাজ করছে কিনা তা কয়েকবার করে দেখা হয়েছে। মূল টানেলের কাজ শতভাগ শেষ। তবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে আনোয়ারার চাতরি অংশে কাজ এখনো শেষ হয়নি। শুরুর দিকে চাতরির কারণে টানেলের সুফল আসবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাদের এ কাজটি দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি।’
সরেজমিনে টানেলের আনোয়ারা অংশ পরিদর্শন করে দেখা যায়, ‘পিএবি সংযোগ সড়কে যুক্ত হয়েছে টানেলের দক্ষিণ অংশ। সড়কটির চাতরি চৌমুহনী বাজার এলাকায় রয়েছে চার লেন। কিন্তু এখানে ভাসমান দোকান ও ছোট বড় সকল গাড়ি যত্রতত্র পাকিং করার কারণে বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়।
যানজট প্রসঙ্গে চাতরী ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘টানেল চালু হয়ে গেলে চাতরী চৌমুহনীর যানজট আর থাকবে না। তখন কেইপিজেডের শ্রমিকবাহী গাড়িগুলো চৌমুহনী বাজার না এসে ভেতরে রাস্তা দিয়ে ঢুকে টানেলের মুখে বের হয়ে যাবে। আর যত্রতত্র সিএনজি অটোরিকশা পার্কিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারন্সে থাকবো।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে আনোয়ারা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ৮ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে এবং কালাবিবির দীঘি থেকে আনোয়ারা ফায়ার স্টেশন পর্যন্ত ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়ক ৫ দশমিক ৫ মিটার থেকে ৭ দশমিক ৩ মিটারে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি ছয় লেনের কাজ। এছাড়া চলমান সড়ক বর্ধন প্রকল্পে চাতরি চৌমুহনী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি সরানো হয়নি এখনো।
এ প্রসঙ্গে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ছয় লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ বলেন, ‘টানেলের সঙ্গে মিল রেখে ছয় লেনের মধ্যে মূল চার লেন অল্প কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এ বছরের ডিসেম্বরে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে। ৩ দশমিক ১৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা আছে। এরমধ্যে ২ দশমিক ৪ হেক্টর পেডি ল্যান্ড। এগুলো যাদের জায়গা তাদেরকে আমরা ৬ ধারা দিয়ে দিছি। ৮ ধারাও দিয়ে দেবো। বাকী কিছু জায়গায় স্ট্রাকচার আছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে শেষ হবে। এ সড়কের প্রকল্প ব্যয় আনুমানিক ৪০৭ কোটি টাকা। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে ও বাজেটে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
তবে চাতরি চৌমুহনী এলাকার প্রধানতম প্রতিবন্ধকতা হলো হক টাওয়ার। টাওয়ারটি চার লেন রাস্তার পাশে টাওয়ারটি অধিগ্রহণ করে উচ্ছেদের বিষয়ে কথা ওঠে। পরে তা আবার ঢাকা পড়ে যায়। এ বিষয়ে হক টাওয়ারের মালিক বদরুল হক বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছে, ছয় লেনের কাজ শুরু হলে আমাদের মার্কেটের জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করবে। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। ’
অন্যদিকে পতেঙ্গা অংশে মিলিত হচ্ছে তিনটি পয়েন্ট। সেগুলো হলো আউটার রিং রোড, পতেঙ্গা সৈকত ও টানেলের উত্তর প্রান্ত। এক জায়গাতে তিনটি জংশন হওয়ায় যানজট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সিডিএর কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কর্তৃপক্ষ। তবে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়–য়ার মতে, ওই অংশের তুলনায় আউটার রিং রোডের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ সাগরিকা থেকে ফৌজদারহাট অংশে যানজটের সম্ভাবনা বেশি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান পরিকল্পনাবিদ কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা ২৩ অক্টোবর সাগরিকা ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেছি। সেক্ষেত্রে টানেল উদ্বোধন হওয়ার পর আর কোনো সমস্যা হবে না। পতেঙ্গা অংশে আমরা ছোট গাড়ি ও বড় গাড়ির জন্য আলাদা পাকিং ব্যবস্থা করছি। ওখানে বেশকিছু আন্ডারপাস ও ওভারপাস হবে। সেটা টানেল চালু হওয়ার পর যানজটের অবস্থা বিবেচনা করে নিড বেইজড (প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে) প্রজেক্ট নেওয়া হবে। এছাড়া আমরা নতুন একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করছি। সেখানে সাগরিকা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চারলেনের সড়ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ফৌজদারহাট অংশে রোড এক্সটেনশনসহ আন্ডারপাস বা ওভারপাস করা হবে।’