সাগরে জেগে উঠা ভূমিতেই আগামীর অর্থনীতির ভিত

Chattogram

ভূঁইয়া নজরুল »

৩০ হাজার একর ভূমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’। যেখানে ভূমির অভাবে নতুন প্রকল্প নেয়া কঠিন সেখানে বিশাল এই প্রকল্পে ভূমি কোনো বিষয়ই নয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মানুষকে না উচ্ছেদ করতে হয়েছে, না ভূমির মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে! বৃহৎ এই অঞ্চল গড়ে তুলতে ৭০ শতাংশেরও বেশি ভূমি অধিগ্রহণও করতে হয়নি। ভাবা যায়? সাগরের বুকে জেগে উঠা চরেই নির্মাণ হচ্ছে আগামীর বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত।  শুধু কি এই ৩০ হাজার একর, অদূর ভবিষ্যতে আরো ৪০ হাজার একর ভূমি এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় আনার স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা)।

যতদূর চোখ যায়, শুধুই অর্থনৈতিক জোনের ভূমি! এমনকি দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়েও বিস্তৃত এ জোন। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বড়তাকিয়া থেকে প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার সময় আগের বেড়িবাঁধে উঠেই চোখে পড়ে মিরসরাই ইকোনমিক জোনের সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডের দক্ষিণ দিকেও রয়েছে অর্থনৈতিক জোনের সীমা যা পশ্চিমে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই এই পয়েন্ট থেকে উত্তর দিকে প্রায় আধাঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর প্রকল্পের প্রধান সাইট অফিসে পৌঁছানো যাবে। সেখানে থেকে আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হলে পাওয়া যাবে ফেনী নদী। সেই নদী পার হয়ে সোনাগাজী উপজেলার চরও রয়েছে এই অর্থনৈতিক জোনের আওতায়।

বর্তমানে প্রায় ১৫টি কোম্পানি প্রকল্প এলাকায় নির্মাণকাজ শুরু করলেও পুরো এলাকায় এখন পর্যন্ত একমাত্র বহুতল ভবন বেজার নির্মাণাধীন প্রশাসনিক ভবন। পাঁচতলা এই ভবনটির ছাদে উঠে দেখা যায়, ফেনী নদীর মোহনার চর এবং নদীর অপর প্রান্তে সোনাগাজী উপজেলায় জেগে উঠা চরেও রয়েছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি। অর্থাৎ, নদী, সাগর ও চর নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল।

প্রকল্প এলাকায় ইতিমধ্যে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের সংস্থান হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ নির্মাণের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে পৃথক রোড নেটওয়ার্কের আওতায় সাগরপারে নির্মিত হচ্ছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কাম সড়ক। ইতিমধ্যে বেজার অংশে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ। এখন বেজার শেষ প্রান্ত থেকে সাগরপার হয়ে ফৌজদারহাট পর্যন্ত নির্মিত হবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কাম সড়ক। এই সড়ক দিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে। থাকবে রেললাইনও। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যোগাযোগের জন্য উপকূলীয় রোডের পাশাপাশি ডিটি রোডের সাথে চার লেনের চারটি ফিডার রোড রাখা হয়েছে।

১২০টি প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এই প্রকল্পে। ইতিমধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠান কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। শিগগিরই উৎপাদনে আসবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান মডার্ন সিনটেক্স। এছাড়া এশিয়ান পেইন্টস, অনন্ত এবং বিদেশী বিখ্যাত কোম্পানি জোজো, ম্যাকডোনাল্ড এবং জাপানি কোম্পানি সুজিতসু কারখানা নির্মাণের কাজ করছে। সাগরপারে একটি বন্দর নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে জাপানি কোম্পানিটি। অপরদিকে সাগরপাড়ে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নির্মাণে বেড়িবাঁধের পাশে কেওড়ার বীজ বপন করছে বন বিভাগ।

বিজিএমইএ গার্মেন্টস ভিলেজ এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা) যেমন নিজেদের নির্ধারিত জায়গায় প্লট করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কারখানার জন্য জায়গা রেখেছে। একইভাবে প্রাইভেট কিছু গ্রুপ নিজ উদ্যোগে জোন তৈরি করে সেখানেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আগামীতে কারখানা করার সুযোগ দেবে। তবে এবিষয়ে বেজার ম্যানেজার (ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন) মীর শরীফুল বাসার বলেন, ‘ছোটো উদ্যোক্তারা যদি আমাদের কাছেও কোনো প্রকল্প প্রস্তাবনা নিয়ে আসে তাহলে আমরা তাদের জমি দেয়ার ব্যবস্থা নেবো।’

প্রকল্প এলাকার মধ্যে অনেকগুলো খাল রয়েছে। এসব খালের বিষয়ে বেজার পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব খালে পানি প্রবহমান থাকবে। কয়েকটি খালে শুধু সøুইস গেইট থাকবে। বাকি খালগুলো দিয়ে প্রকল্প এলাকার সাথে সাগরের যোগাযোগ থাকবে। এতে জলপথে পণ্য পরিবহন সহায়ক হবে।