সমৃদ্ধির সোপান বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এনে দেবে অপার সম্ভাবনা

মাছুম আহমেদ :
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, সুযোগ-বঞ্চনাই দারিদ্র্য (পোভার্টি ইজ দি ডিপরাইভেশন অব অপরচুনিটি)। তাঁর এ বক্তব্যকে নানাভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়। তবে, সুযোগকে কাজে না লাগালে যে ভাগ্য বদলায় না- অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের পিঠে সেটেই লেপ্টে আছে। বর্তমান বিশে^র ধনীদের অন্যতম বিল গেটসও মনে করেন, সুযোগ কাজে লাগানোর মধ্যেই সফলতা নিহিত। ব্যক্তির ক্ষেত্রে একথা যেমন সত্য, রাষ্ট্রের বেলায়ও তাই।
বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো ‘মানব-সম্পদ’। দেশটিতে রয়েছে তারুণ্যের প্রাচুর্য। দেশের কর্মক্ষম মানুষ (১৫-৬৫ বছর) মোট জনসংখ্যার ৬১ শতাংশ। অধিকন্তু জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগের বয়স ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে। জনমিতির ভাষায় এটাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট। সুতরাং, এই বিপুল জনশক্তির পরিমাণগত সুযোগকে কাজে লাগানোর মধ্যেই আমাদের দারিদ্র্যমুক্তি লুকায়িত। কেননা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি একটি দেশের দারিদ্র্য মুক্তির অন্যতম সোপান। বিএফডিআই (ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট) তথ্যমতে, একটি দেশের মানুষের গড় আয় যদি ১০ শতাংশ বাড়ানো যায় তাহলে সেই দেশের দারিদ্র্যের হার ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। গবেষণা এও বলছে, শ্রমশক্তির সহজলভ্যতা একটি দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়েই আকাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক মুক্তির পথে হাঁটছেন। সেই লক্ষ্যেই সরকার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’-সহ ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশে অন্তত এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতির চেহারাই পাল্টে যাবে এবং সমৃদ্ধির পথে অনেকটা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর
উপমহাদেশের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অনতিদূরে সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা এ মনোরম অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। মিরসরাই থেকে ফেনীর সোনাগাজী পর্যন্ত বিস্তৃত এ অঞ্চল গড়ে উঠছে ৩০ হাজার একর ভূমির ওপর, যেখানে ২৫টি আলাদা জোন নির্মাণের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চলছে। অর্থনৈতিক এ মহাযজ্ঞে ইতোমধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুরচর, শীলচর, মোশাররফচর ও পীরেরচর এলাকা, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকু- অংশের ধুধু চরাঞ্চলজুড়ে ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপান। মাটি ভরাট করে তৈরি হচ্ছে একের পর এক শিল্পপ্লট। নির্মিত হচ্ছে ছোট-বড় নানা অবকাঠামো, বিস্তৃত পিচঢালা পথ, ভাঙন-প্রতিরোধী বেড়িবাঁধ।
প্রকল্প এলাকায় যাতায়াতের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চার লেনের সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের জন্য পৃথক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। জাহাজ ভেড়াতে টার্মিনাল নির্মাণ, সুপেয় পানির সরবরাহে গভীর নলকূপ স্থাপন এবং পর্যটন সম্ভাবনা তৈরি করতে পাঁচটি কৃত্রিম লেকের সমন্বয়ে ‘শেখ হাসিনা সরোবর’ করার কাজটিও হচ্ছে। এক কথায় উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে।
অঞ্চলটিতে তৈরী পোশাক কারখানার একটি বড় প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ৩০ হাজার একর জায়গার সঙ্গে আরো ১৩ হাজার একর জায়গা সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) সূত্রে জানা যায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে বেপজা ২০১৭ সালের ১৮ মে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন (বেজা) এর সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেপজা ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টরস্ সামিট ২০১৮-এ ভিডিও কনফারেন্সে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ মিরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ৭৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদিত হয়।
বেজা সূত্রে জানা যায়, ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে চারটি সরকারি ও ছয়টি বেসরকারি। সরকারিগুলো হলো, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাটের মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটন অঞ্চল।
বিশ্বখ্যাত কোম্পানির বিনিয়োগ 
একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিএফডিআই যে আটটি নির্ণায়কের কথা বলেছে এর মধ্যে প্রথমটিই হচ্ছে বিনিয়োগ। বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশ, নীতি তথা ফিজিক্যাল ক্যাপিটাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সংস্থাটি মনে করে। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইপিজেডগুলোয় প্লট স্বল্পতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জমি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। স্যামসাং-সনির মতো বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানিকেও জমির অভাবে ফিরে যেতে হয়েছে। সংগত কারণেই একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভাব মোচনের অনবদ্য উদ্যোগ হলো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানা, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইস্পাত, অটোমোবাইল, বস্ত্র কারখানা, রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা, স্টিল কারখানা গড়ে উঠবে।
তিনি আরো জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ইতোমধ্যে ৭ হাজার একর জায়গা শিল্পস্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরো এক হাজার একর ভূমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেছেন, এ শিল্পনগরে বিনিয়োগের জন্য ব্যাপক আগ্রহ ও আবেদন লক্ষ করা গেছে। এমনকি করোনাকালেও দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে, যার মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জন্য ‘পোশাক পল্লী’ নির্মাণ করতে ৫০০ একর জমি ভরাট ও উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
জাপানে ইস্পাত খাতে সবচেয়ে বড় কোম্পানি নিপ্পন স্টিল, এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ বৃহৎ রং কোম্পানি এশিয়ান পেইন্টস, জাপানি কোম্পানি সুজিতসু করপোরেশন, সিঙ্গাপুরের উইলম্যার, চীনের জিনইউয়ান রাসায়নিক কারখানা, ভারতের বিখ্যাত আদানি গ্রুপের মতো বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির মিলনমেলা হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলে।
জানা গেছে, বিদেশি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি চীনা কোম্পানিকে বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাপানের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ সুজিতসু করপোরেশনকে জমি বরাদ্দের কথা চলছে। সুজিতসু করপোরেশন একটি আলাদা বন্দরও স্থাপন করবে বলে কথা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এক হাজার ৫৪ একর জমিতে গড়ে ওঠবে ‘ইন্ডিয়ান ইকোনমিক জোন’। পাশাপাশি একটি আইটি পার্ক করতে ৭২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ভারত। এছাড়া সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিও এখানে বিনিয়োগ করবে।
প্রকল্পে বর্তমানে ১৫টি কারখানা নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে আরো ২০টি কোম্পানির কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে খ্যাতনামা গ্রুপ ইয়াবাং একাই ১০০ একর এলাকায় বিনিয়োগ করবে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জানা গেছে, বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অস্থিরতায় চীনের ঝুঝাউ জিনইউয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০ একর জমি নিয়েছে বিনিয়োগের জন্য। তারা শুরুতে লেড নাইট্রেট তৈরি করবে। পরবর্তী ধাপে অন্য কেমিক্যাল প্রস্তত করতে বিনিয়োগ করবে প্রতষ্ঠানটি। অন্যদিক শিগগিরই উৎপাদনে যাবে দেশী প্রতিষ্ঠান মডার্ন সিনটেক্স। ২০ একর জমির ওপর কারখানা স্থাপনের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে টি কে গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠান। পলিয়েস্টারের সুতা ও কাপড় তৈরির ভার্জিন চিপস উৎপাদন করবে তারা। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
এছাড়া আরো কয়েকটি শিল্প-কারখানা শিগগিরই পণ্য উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে এশিয়ান পেইন্টস, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, জিনইউয়ান কেমিক্যাল ও জাপানের নিপ্পন স্টিল অন্যতম। নিপ্পন স্টিল এখানে গাড়ি উৎপাদন কারখানা করবে।
দেশের বড় শিল্প গ্রুপের বিনিয়োগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ পিএইচপি, বসুন্ধরা, কেএসআরএম, বিএসআরএমসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ। তবে, প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ। বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস সেখানে স্টিল মিল স্থাপন করবে। গ্রুপটি ৫৬৪ একর জমিতে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা ৫০০ একর জায়গায় তাদের ফ্যাক্টরি গড়বে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এতে আধুনিক পাল্প অ্যান্ড বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন ও ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা রয়েছে।
এছাড়া দেশীয় কোম্পানি সামিট চিটাগং পাওয়ার, সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আরব-বাংলাদেশ ফুড, গ্যাস-১ লিমিটেড, ফন ইন্টারন্যাশনাল, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আরমান হক ডেনিমস ও অর্কিড এনার্জি এ শিল্পনগরে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়।
জানা যায়, প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ২শ’৫০টি শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে জানিয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে একটি সবুজ শিল্পাঞ্চল।
এছাড়া এ শিল্পনগরে তিন-চার বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে বেজা সূত্রে জানা গেছে।
মেগাপ্রকল্পে আর যা আছে
একটি অগ্রাধিকারমূলক মেগাপ্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করে সরকার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এখানে কারখানা প্রতিষ্ঠায় কোম্পানিকে কোনো আমলাতান্ত্রিক লালফিতার যাতনা ভোগ করতে হবে না। সরকার একটি বিশেষ অর্থনৈতিক রেগুলেটরি বডির মাধ্যমে এ প্রকল্পটি পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। কোম্পানিগুরো সরাসরি সবধরনের সেবা এখান থেকে সহজে পেয়ে যাবে।
প্রকল্পকে ভাঙন ও লবণাক্ততার কবল থেকে রক্ষা করতে উপকূলে বিস্তৃত বাঁধ দেওয়ার কাজ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি)। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সমুদ্রের পাশে হওয়ায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের চারপাশে গড়ে তোলা হচ্ছে ৩০ ফুট উচ্চতার বাঁধ। প্রকল্পের চারপাশে ডাইক (বাঁধ) নির্মাণ প্রায় প্রস্তুত। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌবাহিনী ও চায়না হারবার কোম্পানি সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) প্রকল্পে যাতায়াত নির্বিঘœ ও সহজ করতে সড়ক নির্মাণ করছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকার ভেতরে আরো ১০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করছে বিভাগটি। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চার লেনের আরো ১০ কিলোমিটার শেখ হাসিনা এভিনিউ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের সঙ্গে।
বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে তৈরি করা অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে উৎপাদিত পণ্য সহজে আনা-নেওয়ার জন্য সেখানে একটি সমুদ্রবন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
অন্যদিকে কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে তৈরি করা হবে জলাধার। একইভাবে প্রকল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড (আর ইবি) ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় লাইন ও সাবস্টেশন স্থাপন করেছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগও পানির সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এলাকায় প্রয়োজনীয় সব কাজ করছে।
শিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তি জ¦ালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটিড (কেজিডিসিএল) পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের কাজ করছে।
সবমিলিয়ে শিল্পনগরীতে চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ, যা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে।