২৫ লাখ পূণ্যার্থী সমাগমের লক্ষ্য

বাঁশখালীতে আন্তর্জাতিক কুম্ভমেলার প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »

বাঁশখালীর প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কোকদন্ডী ঋষিধামে ১১দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে আসবেন দেশ-বিদেশের ২ হাজার সাধু-সন্ন্যাষী-বৈষ্ণব, সংগীতশিল্পী ও দেশের কয়েকজন মন্ত্রী। ২৫ লাখ তীর্থাথীদের সমাগমের জন্য ঋষিধামের নিজস্ব ৪৪ একর জায়গা ছাড়াও আশপাশের ৮২ একর এলাকাজুড়ে এ মেলা ও ধর্মীয় উৎসব শুরু হবে ২৭ জানুয়ারি। চলবে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সব কিছু সুশৃংখলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও মেলা কমিটির সদস্যদের উদ্যেগে ৪৩টি উপকমিটির মাধ্যমে ১ হাজার ৭ শ কর্মীবাহিনী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। ৮২ একর এলাকা সিসি ক্যামরার আওতাভুক্ত থাকবে। সব কিছু সর্তকতার সাথে মনিটরিং করবে ৩ শতাধিক আইন শৃংখলা বাহিনী। রাষ্ট্রীয় অতিথি ও বিদেশি অতিথিদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ রক্ষার্থে বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্থাপন করা হয়েছে হেলিপ্যাড। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর শুভ ভৈমী একাদশী হতে মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ৬৩ বছর ধরে চলে আসা এই ধর্মযজ্ঞ এবার হচ্ছে ২১-তম আন্তর্জাতিক ঋষি কুম্ভমেলা।

পুরো অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করবেন ঋষিধাম ও তুলসিধামের মোহন্ত মহারাজ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ।

গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ঋষিধামের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্যান্ডেল স্থাপন, সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ চলছে। দেশ-বিদেশের সাধু, সন্নাসী ও ভক্তদের জন্য টাঙানো হচ্ছে ৩ হাজার অস্থায়ী ত্রিপল। যশোর, দিনাজপুর, ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা স্টলের বরাদ্দ নিচ্ছেন। ওইসব মেলায় আনা হবে, কুটির শিল্প, কারু শিল্প, মৃৎশিল্প, খেলনার দোকান, পুতুলের দোকান, প্রসাধনী সামগ্রী, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য সামগ্রীর দোকান ।

বাঁশখালীর ঋষিধামে ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার সভাপতি সুকুমার চৌধুরী বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করে ২৫ লাখ তীর্থাথীর মিলনমেলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে।’

বাঁশখালীর ঋষিধামের প্রধান পুরোহিত মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ বলেন, বাঁশখালীর কালীপুরের কোকদন্ডী গ্রামে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মহাপুরুষ সাধক ঋষি অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ পরম পূণ্যপীঠ ঋষিধামে কুম্ভমেলার সূত্রপাত করেন। ঋষিধামের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে তথা যুগেযুগে ঋষিপুরুষের স্মরণ, মনন ও স্মৃতি বহনের মানসে এ মেলাকে ‘ঋষিকুম্ভ’ নামকরণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, কুম্ভ অর্থ কলস। কুম্ভ পূর্ণতা ও পবিত্রতার প্রতীক। ঋষিরাই হচ্ছেন ঐক্য, সংহতি ও সংস্কৃতির প্রতীক। কুম্ভযোগে বা কুম্ভপর্বে ঋষিদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বলে এর নাম কুম্ভমেলা রাখা হয়।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. কামাল উদ্দিন পিপিএম বলেন, ‘কুম্ভমেলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে ৩ শতাধিক আইন শৃংখলাবাহিনী দিয়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটা বৃহত্তর ধর্মীয় অনুষ্ঠান। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফলতা কামনা করি।’