হেলেনা জাহাঙ্গীর, উপকমিটি ও বিব্রত আওয়ামী লীগ

বিবিসি »

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি উপকমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীরের গ্রেপ্তার হবার ঘটনা দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপকমিটির সদস্য বাছাই বা গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে দলটির ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বিবিসিকে বলেছেন, তাদের দলের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

“আওয়ামী এবং লীগ, এই দু’টা শব্দকে ব্যবহার করে অনেক নিজেদের ইচ্ছেমত একটা সংগঠন দাঁড় করিয়েছে” বলেন মিঃ আলম।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, টানা একযুগ ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগে অনেকে পদ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।

”দু:খজনকভাবে এখন রাজনীতি একটা লাভজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে,” মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল বলেন।

রিমান্ডে হেলেনা জাহাঙ্গীর

ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর ঢাকায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন।

একইসাথে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন। দু’টি কমিটি থেকেই তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে ঢাকার একটি ম্যাজিট্রেট আদালতে হাজির করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলায় তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

আওয়ামী লীগে প্রশ্ন

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হেলেনা জাহাঙ্গীর ভিন্ন দল থেকে এসেই কেন্দ্রিয় কমিটির একটি উপকমিটিতে সদস্য হয়েছেন-এই অভিযোগও উঠেছে দলটির ভেতরে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং ঐ উপকমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ বলেছেন, যাচাই বাছাই করেই উপকমিটিগুলো গঠন করার পরও বিতর্কিত দু’একজন থেকে যায়।

“যাচাই করে যখন আমরা হেলেনাকে উপকমিটিতে নিয়েছি, তখন ভাল ছিল মনে হয়েছে।

“কিন্তু পরবর্তীতে সে যে কাজগুলো করেছে, সে ব্যাপারে বার বার মানা করার পরও সে সেই কাজগুলোতে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে।

”যেগুলো আমাদের দলকে বিব্রত করছে। সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে” বলে বলেন মেহের আফরোজ।

উপকমিটিগুলো গঠন হয় কিভাবে?

মেহের আফরোজ জানিয়েছেন, “যারা বিভিন্ন উপকমিটিতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে, তারা তাদের জীবন বৃত্তান্ত দেয়।

“সেগুলো বিভিন্ন বিষয়ের সম্পাদকরা দেখে তা দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সাধারণ সম্পাদক দেখার পর উপকমিটি গঠন হয় বলে জানান মিজ আফরোজ।

আওয়ামী লীগে বিভিন্ন বিষয়ে ২৬টি উপকমিটি রয়েছে। দলটির জাতীয় সম্মেলন হয়েছে ২০১৯ সালে। এরপর গত বছর এসব উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।

দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এসব কমিটির সদস্য সচিব হন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কেন্দ্রিয় সম্পাদক এবং উপকমিটির প্রধানের পদের থাকে দলটির উপদেষ্টা মন্ডলীর একজন সদস্য।

আওয়ামী লীগে যোগ দেবার প্রবণতা কেন বাড়ছে?

গত বছর করোনাভাইরাস চিকিৎসার দেয়ার নামে প্রতারণা করা সহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন মোহাম্মদ সাহেদ। এই ব্যক্তিও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য হয়েছিলেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, টানা একযুগ ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগে অনেকে পদ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন এবং অনেক ক্ষেত্রে পদ পেয়ে যান।

নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারি সুলতানা কামাল বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন এত বড় একটা দল যে অনেকেই তাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে চাইবে। ”দু:খজনকভাবে এখন রাজনীতি একটা লাভজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এই বিষয়গুলোতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মনোযোগ দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।আওয়ামী লীগের উপকমিটিগুলোতে সদস্য করার বিষয়েই প্রশ্ন উঠছে। এসব উপকমিটির সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত না থাকায় কোন কোন উপকমিটিতে একশো জনের মতো সদস্য রয়েছে বলেও জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কি বলছে?

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক মাাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, “উপকমিটিতে অনেক সময় বিভিন্ন জনের তদ্বিরের কারণে দু’একজন বিতর্কিত ব্যক্তি চলে এসেছিল।”

এটাকে তিনি বিব্রতকর বলে মনে করেন। তিনি জানিয়েছেন, উপকমিটিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা বা রিভিউ করার সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন।

একইসাথে মিঃ আলম বলেছেন, তাদের দল এখন ভুঁইফোড় কিছু সংগঠনকেও বড় সমস্যা হিসাবে দেখছে। “আওয়ামী এবং লীগ-এই দু’টা শব্দকে সংযোজন করে নানান জনে নিজেরা ইচ্ছেমত একটা সংগঠন দাঁড় করিয়েছে।

”যেমন আওয়ামী প্রজন্ম লীগ বা চাকরিজীবী লীগ। হেলেনা জাহাঙ্গীর যে চাকরিজীবী লীগ করে নিজেকে তার সভাপতি দাবি করেছিল,” বলেন মিঃ আলম। “এরা সুবিধাবাদী এবং এরা মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চায়,” তিনি বলেন।

তিনি জানান, তার ভাষায় ”সুবিধাবাদী এবং ভুঁইফোড়” সংগঠনগুলোর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি তাদের এসব পদক্ষেপকে শুদ্ধি অভিযান বলে বর্ননা করেছেন।