সমস্যায় জর্জরিত চবির চারুকলা

লাগাতার আন্দোলন

আহমেদ জুনাইদ »

মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে করতে হয় ক্লাস। নেই নিজস্ব কোন বাস অথবা হল। একটি আবাসিক হোস্টেল যা রয়েছে সেখানে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ ২৫ জন। অথচ ছাত্র সংখ্যা তিন শতাধিক। ক্লাস এরিয়ার ভেতরে নেই কোন ক্যান্টিন। বিশুদ্ধ পানির জন্য সবসময়ই চলে হাহাকার। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই স্বাস্থ্যকর ওয়াশরুমের সুবিধা। এমনই অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউট।

অভিযোগ রয়েছে বারবার প্রশাসনকে সমস্যার ব্যাপারে জানালেও ভ্রুক্ষেপ করেনি তারা। তাই এবার দাবি আদায়ে ক্লাস বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। দিয়েছেন ২২ দফা দাবিও।

২ নভেম্বর ও ৩ নভেম্বর টানা দুইদিন ক্লাস বর্জন করেছে তারা। তাদের দাবি সুস্পষ্ট সমাধান ও নির্দেশনা না আসলে তারা ক্লাসে ফিরবেন না। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বাস চালু, ডাইনিং ও ক্যান্টিন তৈরি, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, বেসিনের সুব্যবস্থা রাখা, পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নির্মাণ, আর্ট ম্যাটারিয়ালসের ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পাঠাগার সংস্কার, জেনারেটরের ব্যবস্থা, মেডিকেল ব্যাকআপ, খেলাধুলার পর্যাপ্ত ইনসট্রুমেন্টের ব্যবস্থা, মেয়েদের থাকার হলের ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নির্মূল, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক সংকট নিরসন, ছাত্র ও ছাত্রী মিলনায়তনের ব্যবস্থা, সেমিনারের পরিধি বাড়ানো, ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতকরণ, ওজুখানা ও নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা, সন্ধার পর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য লকারের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং ছাত্রদের হলের ব্যবস্থা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মেহেদী আলম সজিব বলেন, আমাদের নিজস্ব কোন বাস নেই। যাতায়াত করতে হয় স্টাফ বাসে। স্টাফদের সময় অনুসারে বাস চলে। সকাল ৭ টায় আসে এবং ৩ টায় যায়। আমাদের অসংখ্য শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হয় সড়ে ৯ টায় এবং মাঝেমধ্যে শেষ হতে ৫ টাও বেজে যায়। এত সকালের সময় যেমন নষ্ট হয় তেমনি বিকেলেও নিজেদের অর্থে যাতায়াত করতে হয়। তাছাড়া আমাদের চারুকলার বিভিন্ন কাজে পানির প্রয়োজন হয়। এখানে নেই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। ২ টি ওয়াশরুম হওয়ায় সব সময় সিরিয়াল লেগেই থাকে। তাছাড়া নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না। সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনভাবে চারুকলা পরিচালিত হচ্ছে।

আরেক শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম বলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউট শহরে অবস্থান করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন ধরে এ অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা অভিযোগ জানালে বলবে সমাধান হবে, কিন্তু আদৌ কোন অগ্রগতি নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একদল প্রতিনিধি উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল বডির সাথে দেখা করে। প্রশাসন থেকে তাদের কিছু দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা এসব মানতে নারাজ। তাদের দাবি অন্যান্য সময়ের মতোই এগুলো শুধু আশ্বাস।

প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী জহির রায়হান অভি জানান, আমরা আমাদের দাবি দাওয়া পেশ করেছি। ২২ টি দাবিকে প্রশাসন ১১ টি দাবিতে নিয়ে আসে। পাশাপাশি তারা কিছু ঠুনকো আশ্বাস দেয়। তাই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করছি না। রোববারও আমরা ক্লাস বর্জন করবো।
চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া জানান, তাদের দাবিগুলো আমরা শুনেছি। রুমের সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠানো হয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বাকি সমস্যাগুলোরও সমাধান করা হবে। ২২ টি দাবি তো একদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি উপাচার্যকে জানিয়েছেন তারা মূল ক্যাম্পাসে ফেরত আসতে চান। উপাচার্য জানিয়েছেন এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করবো। এরপরও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কারণ দেখছি না।