সংকটে সিইউএফএল

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) গত পাঁচ মাসে মাত্র পাঁচ দিন উৎপাদনে ছিল। কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনো দুর্ঘটনা আবার কখনো গ্যাসের সংকটের কারণে ব্যাহত হয়েছে কারখানাটির সার উৎপাদন। বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় কারখানার উৎপাদন বন্ধ আছে।

সংবাদমাধ্যম সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ নভেম্বর কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের রিফরমার পাইপলাইন ফেটে আগুন ধরে গেলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে। সব ধরনের মেরামত সম্পন্ন করে চার মাস পর গত ২২ মার্চ বিকেল থেকে শুরু হয় উৎপাদন। কিন্তু পাঁচ দিন পর ২৭ মার্চ দুপুরে পুনরায় বন্ধ হয়ে পড়ে কারখানাটি। তখন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কারখানার পুরো ইউনিট বন্ধ হওয়ায় ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া দুটোরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে।

এদিকে, গত ৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে এক মাস সময় ধরে যুক্তরাজ্যের একটি বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে কারখানার অনুঘটক রূপান্তরের প্রক্রিয়া ‘কনভার্টার ক্যাটালিস্ট’ পরিবর্তন করা হয়। পরীক্ষামূলক ‘ট্রায়ালের’ জন্য বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের কারখানায় দ্বিতীয় দফায় আসার কথা ১০ মে। এ দফায় কারখানা চালু করে নতুন রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলাফল যাচাই করার কথা তাঁদের। তবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় তাঁদেও আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যথাসময়ে চালু করা না গেলে ব্যয়বহুল এই পরিবর্তন কোনো কাজে আসবে না। সব মিলিয়ে সিইউএফএলের অস্তিত্বই হুমকির মধ্যে পড়েছে।

১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। সচল থাকলে দৈনিক ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া এবং ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া। সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এ কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পেলে দিনে ১ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া এবং ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসসংকট এবং যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় গত অর্থবছর কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়েছে।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উচ্চ মূল্যে আমদানি করতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিইউএফএল দেশের সারের চাহিদার বড় একটা অংশের জোগান দেয়। কারখানাটি বন্ধ থাকায় উচ্চ মূল্যে বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হবে সরকারকে।