রাঙ্গুনিয়ায় ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির আখড়া

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙ্গুনিয়া  :

রাঙ্গুনিয়া ভূমি অফিস ও তহসীল অফিসের গাফেলতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে হয়রানি শিকার হচ্ছে এলাকার নিরীহ জনগণ।

শিলক, পোমরা, তারা চরণ (টি.সি) হাট, ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায় ও ভূমি সংক্রান্ত সংশোধনের নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চুক্তি মত টাকা না দিলে ভূমি কাজে আসা লোকজনকে মাসের পর মাস কাজ সম্পাদন না করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। দক্ষিণ রাজানগর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ রবিউল বলেন, রাঙ্গুনিয়া ভূমি অফিস গুলোতে দালালদের তৎপরতা যে কোন সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক কথায় সরকারি জনসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দালালদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কোন কাজ করতে হলে ভুক্তভোগীকে দালাল ধরে কাজ করতে হবে। দালাল না ধরলে কাজ আদায় করতে অনেক দিন সময় লাগতে পারে এবং হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে। এ জন্য দালালের হাতে টাকা দিয়ে কাজ আদায় করতে হবে এমনটি অভিযোগ করেছেন ভূমি অফিসে আসা একাধিক মানুষ। স্বনির্ভর ইউনিয়নের মো. আবু তৈয়ব বলেন, ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, শিলক ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও টিসি হাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা প্রাপ্তি ৭০ শতাংশ লোকই চরম হয়রানির শিকার হতে হয় আজ না-কাল সময়ক্ষেপণ করে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত হারে দাবীকৃত উৎকোচ না দিলে সেবাগ্রহীতারা পান না তাদের কাঙ্খিত সেবা। চন্দ্রঘোনা কদমতলী গ্রামের কুন্তুল ঘোষ জানায়, টি.সি হাট ভূমি অফিসে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে অবশেষে চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যেতে হয়েছে। শিলক গ্রামের রমিজ উদ্দিন জানান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ভূমি অফিসগুলো সীমাহীন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। চাহিদা মত টাকা না দিলে কোন কাজ হবে না। একশ্রেণির ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা  যোগসাজশে এসব কার্যক্রম চলছে। মালিকানার রেকর্ড জালিয়াতের মাধ্যমে চলছে ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য। দালালদের নিয়ন্ত্রণে উপজেলাসহ সব ভূমি অফিস। দালাল ছাড়া কোনো কাজেই হাত  দেন না অফিস কর্তারা। আর এরূপ ভূমিদস্যুদের  দৌরাত্ম্যে মালিকরা নিজেদের জমিজমা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েন। পোমরা ইউনিয়নের গোলাম রসুল বলেন, উপজেলা ভূমি অফিসের যাগসাজসে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভয়া নামজারি খতিয়ান তৈরি করে নিরীহ মানুষের জমির উপর জবর দখল করার অভিযোগ রয়েছে। ভুয়া রেকর্ডের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা করে নিরীহ মানুষকে অহরহ প্রতারিত করা হচ্ছে। টাকা না দিলে নাম জারির আবেদন ফাইল নড়েচড়ে না। মাসের পর মাস পড়ে লাল ফিতায় বন্দি থাকে ফাইল। এতে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মরিয়ম নগরের কৃষক মো. আলমগীর জানান, মিউটেশন বা নামজারি মামলার সরকার নির্ধারিত ফি ২৪৯ টাকা হলেও দালাল চক্রের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরীহ লোকদের কাছ থেকে ইচ্ছেমত আদায় করছে। ভূমি অফিসের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাসহ অতিরিক্ত হারে সেবার নামে টাকা আদায়ের ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তদন্তের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।