পর্যটননগর কক্সবাজার : সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে

কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের শেষ প্রান্তে উত্তর নুনিয়ারছড়া। এলাকাটির উত্তরে মহেশখালী চ্যানেল। পূর্বে বাঁকখালী নদী। অবস্থান একেবারে নদীর লাগোয়া। কিন্তু চারপাশে পানি থাকলেও এখানকার বাসিন্দাদের খাবার পানির দুঃখ যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুই কিলোমিটার দূরের মসজিদের নলকূপ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।
কক্সবাজার শহর এবং উপজেলাগুলোতে প্রতি বছর গড়ে ১০-১৫ ফুট ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। যেখানে আগে ১২০-১৫০ ফুট গভীরে পানি পাওয়া যেতো সেখানে এখন ৩০০ ফুট গভীরে যেতে হয়। শুধু তাই নয়, নলকূপের পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হওয়ায় তা পান করাও যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামীতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যে জনশুমারি ও গৃহ গণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেখানে বলা হয়, কক্সবাজার জেলার ৯৭.৬৪ শতাংশ মানুষের পানির উৎস গভীর ও অগভীর নলকূপ। এর বাইরে ০.৬১ শতাংশ সরবরাহকৃত, ০.৭৯ শতাংশ বোতলজাত এবং ০.১৪ শতাংশ পুকুর, খাল, নদী ও লেকের পানি পান করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শফীকুল ইসলামের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাত কম হওয়া, তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি, পুকুর, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট করে হোটেল-মোটেল, আবাসিক ভবন ও রাস্তাঘাট তৈরির কারণে জলাশয় কমে যাওয়া, শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন এবং ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বৃক্ষ নিধনের কারণে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত কমছে।
অধ্যাপক শফীকুল বলেন, পানির স্তর নিচে গেলে ইকো সিস্টেমের ভারসাম্য ক্ষুণ্ন হয়। এতে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ে। ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষণের ঝুঁকিও বাড়ে। পানি তোলার ব্যয় বেড়ে যায়, এতে পানির প্রাপ্যতা হ্রাস পায়।
এই পরিস্থিতি শুধু যে কক্সবাজারের তা নয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বহু স্থানে সুপেয় পানীয়ের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ১২ হাজার ২০০ একর সামাজিক ও প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করা হয়েছে। কক্সবাজার অঞ্চলে বৃক্ষনিধন ও পাহাড় কাটার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকালে কৃষিজমি, নদী, খাল ও জলাশয় ভরাট করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এ অবস্থায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালনের কোনো সুযোগ নেই। বন সংরক্ষণের পাশাপাশি জলাধার রক্ষা করাসহ নতুন জলাধার তৈরি করে পানি ধরে রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশ সঠিকভাবে পুনরুদ্ধার না করলে আগামীতে সুপেয় পানির অভাবে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে।