কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশের অভিযান

পুলিশ দুই ঘণ্টার মধ্যে হ্যামিল্টন হল থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়

ছবি: রয়টার্স

সুপ্রভাত ডেস্ক »

নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার রাতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে গাজা যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিয়েছে। এ সময় বহু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।

এর প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া অল্টিমেটামের উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসের হ্যামিল্টন হল দখল করে নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিল। দুই সপ্তাহ আগে থেকে এসব বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের আইভি লিগ স্কুলের লনে তাঁবু খাটিয়ে শিবির গেড়ে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিল।

পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রবেশের পর দুই ঘণ্টার মধ্যে হ্যামিল্টন হল ও ওই তাঁবু শিবির থেকে সবাইকে হটিয়ে দিয়ে সেগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ সময় বহু প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করে তারা। গ্রেপ্তারদের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে পাহারা দিয়ে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের অপেক্ষারত বাসগুলোতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, ঘটনাস্থল থেকে করা সিএনএনের প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তাদের উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য বলেছে বলে জানা গেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, পুলিশ প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মিনুচে শফিক একটি চিঠি প্রকাশ করে পুলিশকে অন্তত ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করার অনুরোধ জানান। স্নাতক ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানের দুই দিন পর পর্যন্ত ‘শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও শিবির যেন ফের স্থাপন করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে’ এই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়া গাজা যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের কেন্দ্র হয়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া অল্টিমেটামের মুখে বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়। সোমবার দুপুর ২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদেরকে তাঁবু শিবিরে অবস্থান কর্মসূচি বন্ধের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছিল, আদেশ না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রতিবাদকারীরা আল্টিমেটাম উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে তারা হ্যামিল্টন হল দখলে নেয়। কয়েক ডজন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী হ্যামিল্টন হল ভবনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

অ্যাকাডেমিক এই হল ভবনটি ১৯৬০ এর দশকে ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বিক্ষোভকারীরা হলের জানালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। বাইরে থাকা অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা সেখানে থাকা টেবিল দিয়ে হলের দরজা বন্ধ করে দেয়। হলের সামনে হাতে হাত ধরে ব্যারিকেডও তৈরি করে তারা।

ভেতর থেকে এক বিক্ষোভকারী চিৎকার করে বলেন, তারা গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে নিহত ছয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশু ‘হিন্দ’ এর সম্মানার্থে ভবনটি ‘মুক্ত’ করেছেন, যে দখলদার বাহিনীকে অর্থায়ন করছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

এ সময় বাইরে থাকা অন্য বিক্ষোভকারীরাও একই কথার পুনরাবৃত্তি করে। ভবনের ওপর তলা থেকে বিক্ষোভকারীরা ‘হিন্দ’স হল’ লেখা একটি ব্যানারও ঝুলায়।

পরে নির্দেশ অমান্য করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারও করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপরও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে। এরপর রাতে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায়।

টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, ট্যাকটিক্যাল গিয়ারে সজ্জিত হেলমেট পরা পুলিশ ম্যানহ্যাটনের অভিজাত ক্যাম্পাসটিতে প্রবেশ করছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি কলেজ অব নিউ ইয়র্ক থেকে শতাধিক প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদের অধিকাংশকেই কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় দুই ডজন প্রতিবাদকারী পুলিশকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে এ সময় কোনো আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

তিনি জানান, প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে ও আরও গ্রেপ্তারে বাধা দিতে কলাম্বিয়ার কৌশলগত টিমগুলো ক্যাম্পাসের চারদিকে একটি ঘেরাও গড়ে তুলেছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা তখন বিভিন্ন প্রবেশে পথ দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।

সূত্র: বিডিনিউজ