প্যালেস্টাইনি শিশুর স্মৃতি এখন আন্দোলনের হাতিয়ার

বহু ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষী হ্যামিল্টন হলের নতুন নাম ‘হিন্দ’স হল’

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্য়ালয়ের হ্যামিল্টন হলের সামনে বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। ছবি: রয়টার্স।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

এ বছর ২৯ জানুয়ারির কথা। গাজা সিটির তেল আল হাওয়া এলাকায় হামলা চালাচ্ছিল ইসরায়েল। সেখান থেকে পালাতে গাড়িতে ওঠে পাঁচ বছর বয়সি হিন্দ রজাব, তার মামা-মামি এবং মামাতো চার ভাইবোন। একটু পরেই তাদের তাড়া করে একটি ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক।

হিন্দদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে তারা। গাড়ির ভিতরেই হিন্দের মামা-মামি ও তিন ভাইবোনের মৃত্যু হয়। হিন্দের ১৫ বছর বয়সি মামাতো বোন লায়ান হামাদে সে সময়ে ‘প্যালেস্টিনিয়ান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’কে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। ফোনে কথা বলতে বলতেই ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে নিহত হয় সে। ফোন কেটে যায়। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কয়েক মিনিট পরে ফিরতি ফোন করলে এ বার ফোন ধরে হিন্দ।

তার পরে টানা তিন ঘণ্টা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল ৫ বছরের সেই মেয়েটি। বারবার বলছিল— ‘আমার ভয় করছে, খুব ভয় করছে, তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। আসবে তো তোমরা?’’ এক সময়ে থেমে যায় শিশুটির কণ্ঠস্বর। পরে হিন্দের দাদু জানিয়েছিলেন, শিশুটির পায়ে ও পিঠে গুলি লেগেছিল।

এখানেই শেষ নয়! ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংযোগ করে হিন্দদের উদ্ধার করতে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বেরিয়েছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা। তাঁদের উপরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। ১০ দিন পরে উদ্ধার হয় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দু’টি গাড়ি ও আধপোড়া কয়েকটি দেহ। ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বলে দায় এড়িয়ে যায় ইসরায়েল।

নিহত সেই শিশুর স্মৃতিকে হাতিয়ার করে আজ আন্দোলনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সাড়ে পাঁচ দশক পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা আজ ফের দখল করলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল। বহু ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষী এই ভবন। আন্দোলনকারীদের মুখে যুদ্ধ-বিরোধী স্লোগান। দাবি একটাই— গাজ়ায় গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে।

হ্যামিল্টন হলের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির সম্পর্ক বহু দিনের। ১৯৬৮ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে এই হ্যামিল্টন হল দখল করে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন পড়ুয়ারা। আর এ বার পড়ুয়ারা দাবি করছেন, প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি হত্যালীলা বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক আমেরিকা। ১৯৭২ সালেও যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল এই হলে। আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৫ সালেও। বর্ণ বিদ্বেষে দুষ্ট দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করুক আমেরিকা, সে বছর এই দাবি তোলা হয়েছিল।

পড়ুয়াদের তোলা ভিডিও ও ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে এই শিক্ষা ভবনের কাচের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকছেন তাঁরা। হলের ভিতরে, দরজার সামনে আসবাবপত্র রেখে ব্যারিকে়ড তৈরি করা হচ্ছে। তার পরে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে বাইরে থেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

তা ছাড়া, ফটকের সামনে রেখে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য আসবাবপত্র। অনেক পড়ুয়া ঠিক দরজার বাইরেই অবস্থানে বসেছেন। উদ্দেশ্য, হল দখল করতে নিরাপত্তারক্ষীরা এলে বাধা দেবেন তাঁরা। হলের জানলা থেকে টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্যালেস্টাইনের পতাকা। আর হলের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সাদা কাপড়। লেখা— ‘হিন্দ’স হল’। হ্যামিল্টন হলের ‘নতুন নাম’।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনুশে শফিক আন্দোলনরত পড়ুয়াদের স্বেচ্ছায় হ্যামিল্টন হল খালি করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বা বাক্‌স্বাধীনতা দমন করার কোনও উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। তবে আমি আন্দোলনকারীদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, কোনও ভবন বা তার দরজা আটকে বা ব্যারিকেড করে আন্দোলন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-বিরুদ্ধ। এই ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য আমাদের ইহুদি সহকর্মী ও পড়ুয়ারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা