রাঙামাটিতে ঝুঁকিতে ৪ হাজার পরিবার

পাহাড় ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »

রাঙামাটি জেলায় ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার লোক পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে। যাওয়ার জায়গা না থাকায় ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে বসতি করছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
জানা গেছে, বর্ষা মানেই পাহাড় ধসের শঙ্কা। কিন্তু এরপরও থামেনি রাঙামাটির পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস। ২০১৭ সালের পরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বেড়েছে বসতি। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, শহরে ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বসতি স্থাপন বন্ধে সমন্বয়ের কথা বলছেন সুশীল সমাজ। আর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন বন্ধে লোকবলের সংকটের কথা স্বীকার করে সকলের সহযোগিতা চাইলেন জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে ১২০ জনের ও ২০১৮ সালে ১১ জনের মৃত্যু হয় রাঙামাটিতে। কিন্তু সেই একই স্থানে মৃত্যু জেনেও বসতি করছে নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলো। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নাগরিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় বসতি নির্মাণে আগ্রহ বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের। শত ঝুঁকি জেনেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নয় বসবাসকারীরা।
শহরের সনাতন পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম মিয়া বলেন, রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আমার বাড়ির কিছু মাটি সরে পড়েছে। রাত থেকে প্রশাসনের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করছে। বেশি বৃষ্টি হলে আশ্রয় কেন্দ্র যাব। এখন গিয়ে কি হবে?
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা মো. রবিউল হোসেন বলেন, এই এলাকায় ২০১৯ সালে জায়গা কিনে বসবাস করছি। এখানে আসার পর পাহাড় ধস হয়নি। তবে বেশি বৃষ্টি হলে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। এখানে সবাই সরকারি জায়গা কিনেই বসবাস করে। সবাই গরীব মানুষ অন্যত্র থাকার জায়গা না থাকায় এখানেই লোকজন থাকে।
রূপনগর এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. মোস্তাফা মিয়া বলেন, দেশে যদি রোহিঙ্গাদের সরকার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে আমাদের কেন ব্যবস্থা করছে না। এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হলে ঝুঁকিমুক্ত এলাকায় আমাদের নিয়ে যাক। এতো অনিরাপদে থাকতে চাই না। যাওয়ার জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এখানে থাকি।
যুব উন্নয়ন এলাকার মো. মোসলেম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারা বছর প্রশাসনের কাউকে আমাদের খোঁজ নিতে দেখি না। বর্ষা শুরু হলে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলে।
টানা বর্ষণে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করা হচ্ছে। ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে বিকাল থেকে চারটা টিম কাজ শুরু করবে। প্রয়োজনে জোর করে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে বলেন জানান রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। শহরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরে যেতে নিকটস্থ ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন বন্ধে, লোকবলের সংকটের কথা স্বীকার করে সকলের সহযোগিতা চাইলেন জেলা প্রশাসক।