ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় ‘৩ সমস্যা’

আন্দোলনের হুমকি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক »

দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তার-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা তিন সমস্যায় জর্জরিত। এরমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল অন্যতম। এছাড়া রয়েছেজলাবদ্ধতা সমস্যা ও নিরাপত্তা সংকট। এই তিন সমস্যা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে চক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতি। সমস্যা নিরসন না হলে আন্দোলনে যাওয়ার আগাম বার্তা জানায় ব্যবসায়ীরা।

নগরের খাতুনগঞ্জের মনির ভবনেগতকাল বৃহস্পতিবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি ও সীতাকু-ের দারোগাহাটে দুইটি ওজন স্কেল বসানো হয়েছে। দেশের অন্য কোথাও ওজন স্কেল নেই। চট্টগ্রামের এই ওজন স্কেল ব্যবসায়ীদের কাছে এখন বিষফোঁড়ার মতো। গত সাড়ে ৪ বছর ধরে এটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ছয় চাকার ট্রাক কিংবা কার্ভাডভ্যানে ১৩ টনের বেশি পণ্য আনতে পারছেন না।

দেশীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে জিডিপিতে চট্টগ্রামের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে বন্দরসহ নানা অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। ইস্পাত, সিমেন্ট, রড, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙাসহ বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ও কোরবানিগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার ও পাহাড়তলীতে চালের পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রম বন্দর দিয়ে আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল ও সব ধরনের পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হয়ে থাকে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিবন্ধক ওজন স্কেল প্রত্যাহার করা জরুরি।
জলাবদ্ধতা সমস্যার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একসময় চাক্তাই খাতুনগঞ্জে সিংহভাগ বাণিজ্য হতো নৌপথে। এখন কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচরে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। তবে খালের মুখে স্লুইসগেটের কারণে বড় নৌযান ভেতরে ঢুকতে পারছে না। ছোট নৌকায় পণ্য নিয়ে সেগুলো বড় নৌকায় তুলতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বাড়ছে। নানা কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ। কর্ণফুলী নদীতে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টি ছাড়াই নিচু এলাকার দোকান ও গুদামে জোয়ারের পানি ঢুকছে। এতে ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। চার বছরেও সিডিএ স্লুইসগেটের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। আমরা দ্রুত কাজটি শেষ করার দাবি জানাই।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করতে কাজ শুরু করেছে ৫ সদস্যর কমিটি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে চাক্তাইয়ের ৯০ শতাংশ দোকান ও আড়ত এবং খাতুনগঞ্জের ৫০ শতাংশ দোকান ও গুদামে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। আগামী সপ্তাহে এ রিপোর্ট প্রস্তুত হতে পারে।
নিরাপত্তার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি খাতুনগঞ্জে শ্রমিক মাসুদ মাঝি খুন হন। আমরা জানতে পেরেছি এ হত্যাকা-ে ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা নিরাপত্তার হুমকিতে পড়বে।

পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর দাবি তুলে তিনি বলেন, ২০০০ সালে ব্যবসায়ী লেদু মিয়া খুন হন। তখন এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে ফাঁড়িটি তুলে নেওয়া হয়। খুনোখুনি বন্ধসহ কোটি কোটি টাকা লেনদেনের এ বাজারে স্থায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর দাবি জানাচ্ছি।

সবশেষে সংগঠনটির সভাপতি মোহগাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পানি ওঠে আমাদের প্রায় চারশ থেকে পাঁচশ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এরচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল। এই ওজন স্কেলের কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। পরোক্ষভাবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত থেকে আসা ভোগ্যপণ্যের দামও বেশি পড়ছে। এজন্য আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও সংগঠনে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। আগামী জানুয়ারির মধ্যে এই ওজন স্কেল অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।