বিশ্ব কিডনি দিবস : “অর্থাভাবে-বিনা চিকিৎসায় অকাল মৃত্যু নয়”

সৈয়দ মোহাম্মদ জাহেদুল হক »

প্রতিবছর মার্চ মাসের ২য় বৃহস্পতিবার বিশ^ কিডনি দিবস পালন করা হয়। কিডনি দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, “সুস্থ কিডনি, সর্বত্র সবার জন্য”। কিডনি রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি এই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য। কিডনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি বিকল একটি মরণব্যাধি রোগ। ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর এ রোগের মিছিলে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৪০-৫০ হাজার মানুষ। মূলত কিডনি বিকল একটি মাত্র রোগ নয়, প্রাণঘাতি নানা রোগের প্রজনন কেন্দ্র। কিডনি রোগের চিকিৎসা এতটা ব্যয়বহুল যে, ভুক্তভোগী পরিবার না-পারে চিকিৎসা ব্যয় টানতে, না-পারে প্রিয়জনের মৃত্যু ঠেকাতে। “অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় কোনো কিডনি রোগীর অকাল মৃত্যু নয়”- প্রত্যয়ে “কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার” পথ চলা শুরু।
অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগেই সমাজকে জাগাতে “কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা’র” অদম্য প্রত্যয় “আমরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি”।
এজন্য প্রয়োজন একটি মানবিক উদ্যোগ এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা। এ বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাবনা রাষ্ট্র ও মানবিক সমাজের উদ্দেশ্যে পেশ করা হল।
ক্স বাংলাদেশ হতে পারে উন্নত চিকিৎসার রোল মডেল: ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ২ কোটি কিডনি রোগীসহ মরনব্যাধি সকল রোগীর জীবন বাঁচানোর স্বার্থে জনপ্রতি শুধুমাত্র একবার ১০০ টাকা হারে অনুদানের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার আটশত কোটি টাকা। একটি মাত্র উদ্যোগ এবং এর কার্যকর বাস্তবায়নের অর্থে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বিশেষায়িত আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশেই উন্নত চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ক্স স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যাবলি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তকরণ: বয়স ও মৌসুম ভেদে এবং খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচার দোষে নানা রোগব্যাধি হয়ে থাকে। জনসচেতনতায় যেকোন রোগের প্রতিকার ও বিস্তাররোধের একমাত্র উপায়। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যাবলি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির ফলে বাংলাদেশের প্রতি ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়বে।
ক্স চিকিৎসা মেশিনারিজ, ওষুধ ইত্যাদি শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা :- বর্তমানে কিডনি চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিদেশ নির্ভর। বিশেষ করে ডায়ালসিস মেশিন ও উপকরণ, চিকিৎসা মেশিনারিজ, যন্ত্রপাতি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ইত্যাদি শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ কিডনি চিকিৎসার ব্যয় বহুলাংশে কমাতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশে ডাক্তার ভিজিট, নিরীক্ষা রিপোর্ট, ফেস্টুলা স্থাপন, ডায়ালসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয় ও ওষুধের উচ্চমূল্যসহ কিডনি চিকিৎসায় সর্বক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাস অথবা সরকার কর্তৃক ভর্তুকি হবে রাষ্ট্রের একটি মানবিক উদ্যোগ।
কিডনি প্রতিস্থাপন আইন সংস্কার ও সংশোধন : মানবদেহে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ এর সংস্কার সময়ের অপরিহার্য দাবি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রস্তাবিত সংস্কার ও সংশোধনী আইনে পরিণত হলে বাংলাদেশে সাধ্যের অনুকূলে, সাশ্রয়ী মূল্যে অসংখ্য রোগী বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখবে। ক্রমবর্ধমান রোগীর জীবন বাঁচানোর প্রশ্নে নিকট আত্মীয়ের পরিসর বৃদ্ধি এবং জোড়া দম্পতির মধ্যে কিডনি বিনিময়, মরণোত্তর কিডনি দান ও দুর্ঘটনায় নিহতদের কিডনি সংরক্ষণের বিধান রেখে বিদ্যমান প্রতিস্থাপন আইন সংস্কার ও সংশোধনী অত্যন্ত জরুরি।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা : বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক হলেও বাংলাদেশে এখনও ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করাসহ হয়রানিমুক্ত বীমা দাবি পরিশোধের মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠান ও বীমা গ্রাহক পরস্পর আস্থা-বিশ্বাস প্রতিষ্ঠায় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।
চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ-ভারত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি:- আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াংয়ের (ইওয়াই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়া মোট বিদেশি রোগীর ৪৫ শতাংশ বাংলাদেশি। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ও ভারতের রোগীর চিকিৎসা ব্যয় অভিন্ন বা সাধ্যের মধ্যে রাখার বিষয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশের একটি চুক্তি অতিব জরুরি।
দেশে চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়ানো :- বাংলাদেশে বিদ্যমান সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানো এবং ডায়ালাইসিস ও ডায়ালাইসিস উপকরণ, মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ সমৃদ্ধ, স্বয়ংসম্পূর্ণ কিডনি বিভাগ চালু করা যায়।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা