বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সড়কে যান চলাচল বন্ধ : আইন না মেনে পাহাড় কাটার খেসারত

বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে নগরের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। গত বুধবার পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রামের কার্যালয়ের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি সংক্রান্ত উপকমিটির সভায় সিডিএ বায়েজিদÑফৌজদারহাট লিংক সড়ক এবং নগরীর অন্যান্য পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ অভিযান আগামী সোমবার থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরের বেশ কয়েকটি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে বেশ কিছু পরিবার। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় প্রশাসন ও পরিবেশবিদগণ পাহাড় ধসের শঙ্কা প্রকাশ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা বিপর্যয়কর হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত এক সাময়িকীতে সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে পাহাড় কেটে তৈরি সড়কে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের বায়েজিদÑফৌজদারহাট লিংক রোডে আগামী ৩ মাস যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কটি নির্মাণে ১৮টি পাহাড় কাটা হয়, খাড়া করে পাহাড় কাটায় পরিবেশ অধিদফতর সিডিএকে জরিমানাও করে।
খাড়াভাবে কাটা পাহাড়গুলির ঝুঁকি কমাতে সিডিএ’র আবেদন পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঐসব পাহাড়ের কিছু অংশে অবৈধ বসতিও গড়ে উঠেছে। কথা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগ যাদের হাতে তারাই আইন না মেনে পাহাড় কেটেছে, এখন পাহাড় ধসের শঙ্কায় রাস্তা চলাচল বন্ধ করায় জনগণকেই দুর্ভোগে নিক্ষেপ করা হলো।
নগর এবং নগরের উপকণ্ঠে বিস্তীর্ণ পাহাড়রাজি প্রশাসনের নানা প্রতিষ্ঠানের চোখের সামনেই সাবাড় করে ফেলা হয়েছে, প্রকৃতি ও পরিবেশের এত বড় ক্ষতি সরকারি সংস্থাগুলি নির্মোহ অবলোকন করেছে কেবল।
নগরের পাহাড়গুলি কেটে আবাসিক ভবন, স্থাপনা তৈরি করেছে এক শ্রেণির লোভী মানুষ। আবার এক শ্রেণির অসাধু, ধান্দাবাজ চক্র সরকারি মালিকানাধীন পাহাড়গুলির পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছে।
যাদের পাহাড় তারাও কোন প্রকার বাধা দিচ্ছেনা, নগরে কিংবা উপকণ্ঠে পাহাড়ের পাদদেশে এতসব বসতি বিনা বাধায় গড়ে উঠলো কি করে? অবৈধ বসতি উচ্ছেদ কিংবা কিছু লোককে সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু এসব স্থায়ী সমাধান কি? পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে, আছে সরকারের নানা সংস্থা, প্রশাসন কিন্তু পাহাড়কাটা কিংবা পাহাড়ের পাদদেশে বসতি নির্মাণ বন্ধ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম মহানগরী পাহাড়শূন্য হতে চলেছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থাই নেয়া যাবে না? এসব চক্রের কারো কি কোনো কঠিন সাজা হয়েছে? প্রশাসন বছরের পর বছর প্রকৃতি ও পরিবেশের ধ্বংসসাধনে নিশ্চুপ রয়েছে, বর্ষা এলে কিছুটা তোড়জোড় শুরু হয়, কিছুদিন পর আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার দৃশ্যই চোখে পড়ে।