পুলিশ সদস্যদের সততা ও শৃঙ্খলাবোধ বৃদ্ধির ব্যবস্থা হোক

এক ব্যক্তিকে আটকের পর তার মোবাইল থেকে কোটি টাকার বিট কয়েন সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের ছয় সদস্যকে অবশেষে বরখাস্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছেন বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর-দক্ষিণ জোন) একটি দল বায়েজিদ বোস্তামী থানার গুলবাগ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে’ আবু বক্কর ছিদ্দিকী ও ফয়জুল আমিন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে আবু বক্কর অভিযোগ করেন, তাকে আটকের পর মনসুরাবাদ ডিবি কার্যালয়ে আটক রাখা হয়েছিল। সেখানে তার মোবাইলের ‘বাইন্যান্স অ্যাপ’ ব্যবহার করে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলারের কিপ্টোকারেন্সি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়।
এ নিয়ে গত ১ মার্চ ‘ফ্রিল্যান্সারকে মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার’ খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। এরপর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে নগর পুলিশ। ওই কমিটির প্রতিবেদনের পর ছয়জনকে বরখাস্তের আদেশ এল। বরখাস্তরা হলেন- সিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের উত্তর জোনের এসআই আলমগীর হোসেন, এএসআই বাবুল মিয়া, মো. শাহ পরাণ জান্নাত, মঈনুল হোসেন, কনস্টেবল জাহিদুর রহমান ও আব্দুর রহমান। এছাড়া পরিদর্শক রুহুল আমিনের কাছে ওই ঘটনার ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।
ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ যাদের ব্রত তারাই যদি দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে তখন সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়। অপরাধ দমন করা এবং অপরাধীকে আইনের মুখোমুখি করা যে বাহিনীর কাজ তারাই যদি অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায় তখন বুঝতে হয় আমাদের সমাজে নীতি-নৈতিকতার মান কত নিম্নে নেমেছে।
পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের নিয়মিত একটি বাহিনী। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করাই তাদের অন্যতম প্রধান কাজ। অতীতে এ বাহিনী নিয়ে নানা অসন্তোষ থাকলেও শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ সময়ে এ বাহিনীকে অনেকটা ঢেলে সাজানো হয়েছে। তাদের নানাপ্রকার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। নতুন প্রজন্মের সদস্যদের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি এ বাহিনীর ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে। ফলে এ ধরনের অপকর্ম পুলিশ বিভাগ থেকে আশা করা যায় না।
এ ধরনের অপরাধ প্রশমনে বাহিনীর সদস্যদের নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা জোরদার করার প্রয়োজন আছে। সে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেও অপরাধ কমাতে ভূমিকা রাখা যায়।