পানি দিবসে সুপেয় পানি নিয়ে সুখবর নেই

পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। আমাদের চারপাশে এত বিপুল পরিমাণ জল থাকলেও পানীয় জল তথা সুপেয় পানির অভাব দিনদিন প্রকট হয়ে উঠছে। পৃথিবীর মোট জলের প্রায় ৯৬.৫ শতাংশ সমুদ্রে পাওয়া যায়। পৃথিবীর উপরিভাগ ৭১ শতাংশ জল দ্বারা আবৃত যার কারণে এটি নীল গ্রহ নামেও পরিচিত।
গতকাল ছিল বিশ্ব পানি দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিবছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও’তে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ দিবসটি পালিত হয়েছে। দিবসকে কেন্দ্র করে যত আলোচনা হয়েছে তাতে হতাশ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় পাওয়া গেল না।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের জরিপ অনুসারে, চট্টগ্রাম জেলার ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ (প্রায় ৩৯ শতাংশ) মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এ বিশাল জনগোষ্ঠী পানিবাহিত নানা রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সম্প্রতি নবজাতকের দেহেও নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। মূলত নিরাপদ পানির উৎসের ঘাটতি ও জনসচেতনতার অভাবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ধারণা জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। নিরাপদ পানির অভাবে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম জেলার ৩৯ শতাংশ মানুষ। ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিসসহ নানা রোগ বাসা বাঁধছে নবজাতক থেকে সব বয়সী মানুষের শরীরে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসেবে গত এক বছরে চট্টগ্রামে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৩৮ জন মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে পটিয়া, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলায়। এই তিন উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে যথাক্রমে ৫ হাজার ১৩৯ জন, ৪ হাজার ৪৫০ জন ও ৪ হাজার। অন্যদিকে গ্রীষ্ম মৌসুমে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। গত বছরের এপ্রিল, মে ও জুন মাসে চট্টগ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৮১৮ জন মানুষ।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ২০২৩ সালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ২৬৩ জন, টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত রোগী ২৭ জন, হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত রোগী ৮ জন ও হেপাটাইটিস-ই রোগে আক্রান্ত রোগী ৫।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষ সারদিন কিছু না খেলেও তাকে পানি পান করতে হয়। তবে পানি একদিকে জীবন হলেও, আবার জীবননাশের কারণও হতে পারে। সাধারণত পানি যদি পানযোগ্য না হয়ে দূষিত হয় তাহলে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, হেপাটাইটিস ‘এ’ ও হেপাটাইটিস ‘ই’। এ ছাড়া প্রচলিত ফ্লুও পানিবাহিত রোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, পানিতে যে ভাইরাস তৈরি হয়, সেই পানি গ্রহণ করার কারণে ফ্লু জাতীয় রোগ হতে পারে।
অনেক বছর ধরে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামীতে যদি বিশ্বযুদ্ধ হয় তাহলে তা হবে পানিকে কেন্দ্র করে। পরিবেশ বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী সবাই বিশ্বের মানুষকে সে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে বারবার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তাতে খুব বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। তাই অধিক জনসংখ্যার দেশ হিসেবে আমাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি।