ধান-চাল বিক্রিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা

চালের দাম বাড়ার শঙ্কা

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »

চলতি আমন মৌসুমে ১০৪ দিন ধান ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহের মেয়াদকাল নির্ধারণ করে খাদ্য অধিদফতর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ১ শতাংশও ধান সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটির চট্টগ্রাম অফিস। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করেছে ২৯ শতাংশ। এ কারণে সংগ্রহের সময় আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু দাম কম রেখে বিভিন্ন যাচাই-বাছাইয়ের কারণে ধান-চাল বিক্রি করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে খোলাবাজার থেকে চাল সংগ্রহ করছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে চালের বাজার করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, ৪২ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কেনার কার্যক্রম সারাদেশে শুরু হয় গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে। চট্টগ্রাম জেলায় ৯ হাজার ২৩৫ টন ধান ও ২৯৩ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের শেষদিন ধার্য করা হয়েছিলো ২৮ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৭ টন ৪৮০ কেজি এবং সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৮৫ টন। তবে বিভিন্ন উপজেলা পর্যায় থেকে পাঠানো ৪৫ টন খাদ্য অধিদফতর থেকে বরাদ্দ পেয়ে তা সরবরাহও হয়েছে।

বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়তলী গ্রামের সুরেশ নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন গুদামে ধান নিয়ে গিয়েছিলো। তাদের ধান যাচাই করে কাউকে বলা হয় ধানে আদ্রতা আছে, কিংবা কাউকে বলা হয় ধান ভিজা। এরকম নানা কথা বলে তাদের ধান নেয়নি। অন্যদিকে হাটে ৭৬ কেজির বিআর একান্ন জাতের ধানের বস্তা ৩৩০০-৩৫০০, গুটি স্বর্ণা ৩৫৫০-৩৬০০, সুমন স্বর্ণা ৩৮০০-৩৮৫০, শম্পা কাঠারি ৪২০০-৪৩০০, বিআর নব্বই (জিরা) ৪৯০০-৫০৫০, স্থানীয় জিরা ৫১০০-৫১৫০, কাঠারি ৫২০০-৫৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সরকারি গুদামে কেজি ৪২ টাকা দিয়ে নানা ঝামেলা করে।’

পটিয়া উপজেলার কৃষক মনোয়ার আলী বলেন, ‘কৃষকরা এখন গুদামবিমুখ হচ্ছেন। তারা যেখানে দাম পাচ্ছে, সেখানে যাচ্ছে। এছাড়া গুদামে অনেক অজুহাত, এসব খোলাবাজারে নেই বললেই চলে। তাই চাল সংগ্রহের সময় আরও সাত মাস বাড়ালেও চাল পাবে না।’

এ নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি। কৃষকরা দাম বেশি পেলে আমাদের কাছে বিক্রি করতো। কিন্তু আমাদের কাউকে বেশি বা কম দেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের এখতিয়ারও নেই। সরকারের একটি নির্বাহী বিভাগ নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করে দাম নির্ধারণ করেন। আমরা সরকারের এ নির্বাহী আদেশ পালন করি। এ আদেশে ধান কেমন হবে বা চাল কেমন হবে তা উল্লেখ থাকে। আমরাও সেভাবে যাচাই করি।’

ধান ও সিদ্ধ চাল খোলাবাজারে চলে গেলে আগামীতে চালের দামে কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘খোলাবাজারে চাল যাওয়াটা শুভ লক্ষণ নয়। খোলাবাজার থেকে চালগুলো মিল মালিকরা সংগ্রহ করবেন। এরপর তাদের কাছ থেকে চালগুলো চলে যাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের একটা সুযোগ পাবে। এতে চালের অবস্থাও চিনির মতো হতে পারে।’