রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে হত্যাকাণ্ড

৬০ দিনে ১০ খুন

aerial, drone, landscape, LOCATION: Cox's Bazar, Bangladesh DATE: October 30, 2018 SUBJECT: Families, Family, Street Life, Cultural, Play, Sampan, Fishing Boats, Royhinga, Refugees CREW: Photographer: Ryan Donnell NY Producer: Jennifer Rupnik Local Producer: Ghazal Javed Marketing: Meredith Jacobson Local: Sesame Workshop Bangladesh (Khalil Rahman) Performers: Sayma Karim (Tuktuki); Asharaful Alam Khan (Halum); Sudip Chandra Das (Halum/righthand); Elmo (Shuvankar Das Shuvo);

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প বর্তমানে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পে একের পর এক হত্যাকা-, মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা- কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও নানা হস্তক্ষেপ কাজেই আসছে না।

পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে যাওয়ায় সাধারণ শরণার্থীদের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আশ্রয়শিবিরে কর্মরত এনজিও সংস্থার কর্মীরা। এছাড়াও ক্যাম্পগুলোর আশপাশের স্থানীয় নাগরিকরাও নিজেদের অনিরাপদ মনে করে দিন দিন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

এদিকে গতকাল উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. রফিক (৩৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়েছেন। তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে প্রথমে পিটিয়ে ও পরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।

রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা সকাল-সন্ধ্যা ও রাতে ক্যাম্পে এসব হত্যাকা- ও অপরাধ সংঘটিত করছে। গত ৬০ দিনে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ৪ নেতা, নারীসহ খুন হয়েছে ১০ জন। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পে গুলিতে ও কুপিয়ে নারীসহ ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক ঘটনায় দুই শিশুসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৭ জন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য মতে, গত দুই মাসে বিভিন্ন অপরাধে দুই জঙ্গি, কথিত আরসা সদস্যসহ ৩২ জনকে আটক করা হয়েছে।

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সীমানা অংশের একটি ঝিরিতে মৌলভী শামসুল আলম নামে এক ইমামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত আটটার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী শামসুল আলমকে তার বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এর সীমানা অংশের একটি ঝিরিতে তার লাশ পাওয়া যায়।

ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪-এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি ছৈয়দ হারুন রশীদ বলেন, স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সকালে পুলিশ আগে থেকেই নিখোঁজ থাকা শামসুল আলম এর মরদেহ উদ্ধার করে। কারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে সেটি বের করার চেষ্টা চলছে ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে এপিবিএনের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, শুক্রবার রাতে মসজিদের ইমাম নিখোঁজ হন। পরেরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে হত্যা করেছে। এই ঘটনার রহস্য খোঁজার চেষ্টা চলছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক সূত্র জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চোরাচালানসহ নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকা-ের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।

এদিকে ক্যাম্পে একের পর এক হত্যাকা-ে মারাত্মকভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও স্থানীয়রা। তাদের দাবি, দ্রুত ক্যাম্পের অপরাধ কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে আনতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা দরকার।

উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, সম্প্রতি ক্যাম্পের নানা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। ক্যাম্পভিত্তিক মাঝি (নেতা), সাব-মাঝি, স্বেচ্ছাসেবকদের খুন করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকা- দিন দিন বাড়ছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সবসময় সক্রিয়। সন্ত্রাসীদের ভারি অস্ত্রের ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এছাড়া ক্যাম্পে একের পর এক খুনের ঘটনার জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা যেন এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আশংকা করে বলেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে ক্যাম্পে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা এবং তাদের হাতে থাকা ভারী অস্ত্রগুলো যাতে শীঘ্রই উদ্ধার করা হয় তার জন্য তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।