দ্বিতীয় ও তৃতীয় জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে মিরসরাই ও মাতারবাড়িতে

সুপ্রভাত ডেস্ক »

প্রথম জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের টয়োটা, মিতসুবিশি, সুমিতোমো, তাওয়াকি, সুজিত লিমিটেড প্রভৃতি কোম্পানি এরই মধ্যে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।

২০২২ সালের শেষের দিকে উৎপাদনে যাবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেখানে এক বিলিয়ন ডলারের জাপানি বিনিয়োগ এবং এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।

বিশেষ এ অর্থনৈতিক অঞ্চল এক হাজার একর জায়গায় গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) ভিত্তিতে তৈরী হচ্ছে যেখানে গাড়ি তৈরির কারখানা, মোটরসাইকেল, মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য ও গাড়ির যন্ত্রপাতি উৎপাদিত হবে। এ অর্থনৈতিক জোনে প্রাথমিকভাবে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ইউসুফ হারুন টিবিএসকে বলেন, জাপান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইকোনোমিক জোনে ২০২২ সালের শেষের দিকে উৎপাদনে যাবে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় এক হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতোমধ্যেই ৬২০ একর জায়গা সরকার দিয়েছে। বাকি ৩৮০ একর জায়গা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আছে বলে জানিয়েছেন বেজা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “এটা হবে স্পেশাল ইকোনমিক জোন।”

২০১৩ সালে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়। পরের বছর জাপান সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সফরে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

তবে আইনি জটিলতায় জমি অধিগ্রহণে অনেক সময় লেগে যায়। এরপর হলি আর্টিজান হামলা ও করোনার কারণেও ব্যাহত হয় এ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ। সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে এখন দৃশ্যমান এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

২০১৯ সালে বেজা ও জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ভূমি উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে সুমিতোমো করপোরেশন। বেজার তত্ত্বাবধানে জমি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) যৌথভাবে প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

ইউসুফ হারুন বলেন, “বাংলাদেশের শেয়ার এখানে ৩০ শতাংশ আর ৭০ শতাংশ জাপানের। জাপান সরকার সুমিতোমো কোম্পানিকে তাদের ডেভেলপার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ১৬০ একর জায়গা ডেভেলপ করে আমরা সুমিতোমো করপোরেশনকে হস্তান্তর করেছি। সেখানে প্রতিষ্ঠান করতে প্রায় ২২টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে জাপানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।”

বেজার তথ্যমতে, ৩-৪ মাসের মধ্যেই আরও ১৬০ একর জায়গা সুমিটোমো করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। জায়গা বুঝে নেওয়ার পর করপোরেশন অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ শুরু করবে।

এরপর জমি বুঝিয়ে দেবে বিনিয়োগকারীকে।

বেজা চেয়ারম্যান বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে তারা দ্রুতই সেখানে তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ শুরু করবে। আমাদের বাকি জায়গায় ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে। আরও কিছু জায়গা নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আমাদের দিবেন। সেটির অধিগ্রহণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।”

বেজা সূত্রে জানা গেছে, অটোমোবাইল এসেম্বলি, মোটরসাইকেল, মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য ও যন্ত্রপাতি, এগ্রো ফুড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে।

জানা গেছে, এখানে বিনিয়োগ করতে জাপানের টয়োটা, মিতসুবিশি, সুমিতোমো, তাওয়াকি, সুজিত লিমিটেড প্রভৃতি কোম্পানি এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে।

ঢাকাস্থ জাপানের দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে প্রায় ৩০০-এ দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি সম্প্রতি বলেন, দ্বীপরাষ্ট্রটির পরিকল্পনা হচ্ছে শিল্পাঞ্চলে তাদের ১০০টি কোম্পানি থাকবে যেখানে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে।

আড়াইহাজার আদতে ‘টেস্ট কেস’

আড়াইহাজারে অবস্থিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চল যদি সাফল্যের গল্প হয়ে উঠতে পারে, তাহলে পরবর্তীতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাপান আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে। সেটিও সফল হলে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে পরবর্তী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

গত মাসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এমন সম্ভাবনার কথাই তুলে ধরেন।

ঢাকাস্থ জাপানি দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানের ক্রমবর্ধমান প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৯০.১৮ মিলিয়ন ডলার।

চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৩২১টিরও বেশি জাপানি কোম্পানি কাজ করছিল। এ সংখ্যা ২০১০ সালে কাজ করা ৮৩টি কোম্পানির সংখ্যার প্রায় চারগুণ।

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও ২০২০ অর্থবছরে জাপানের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১০ অর্থবছরের প্রায় তিনগুণ বেশি।

সূত্র : টিবিএ