শেষ বলে জয় পাকিস্তানের

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শেষ বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন মোহাম্মদ নাওয়াজ।

সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »

শেষ ওভার বল করতে এসে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তৈরি করে ছিলেন জেতার আশাও।

জেতার দারুণ সুযোগ এসে যায়। শেষ ৬ বলে ম্যাচ জিততে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৮ রান। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বল হাতে নিয়ে এসেই করেন বাজিমাত। তার প্রথম বল থেকে আসেনি কোনো রান। পরের দুই বলে সরফরাজ ও দারুণ খেলতে থাকা হায়দার আলিকে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন তিনি। ইফতিখার আহমেদ এসেই ছক্কা মেরেছিলেন। পরের বলে তাকেও আউট করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু শেষ বলের সমীকরণ আর মেলেনি।

শেষ বলে পাকিস্তানের জিততে দরকার ছিল ২। ১ রান হলে খেলা যেত সুপার ওভারে। কিন্তু অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বল এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিলেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। পাকিস্তানকে হারানোর খুব কাছে গিয়েও এবার হতাশায় পুড়ল বাংলাদেশ।

চরম নাটকীয়তার পর শেষ বলে ৫ উইকেটে জয় পাকিস্তানের। সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও পাকিস্তান জিতে হোয়াইটওয়াশড করেছে টাইগারদের। বাংলাদেশের করা ১২৪ রান শেষ বলে পেরিয়ে যায় তারা।

ম্যাচে বড় একটা সময় পর্যন্ত তেমন উত্তাপ ছিল না। এক সময় অনায়াসে জেতার পথেই ছিল পাকিস্তান।

প্রথম দুই ম্যাচের মতো এদিনও টস জিতেছিল বাংলাদেশ, যথারীতি নিয়েছিল ব্যাটিং। মিরপুরের উইকেটে দুপুরের দিকেই ব্যাট করার জন্য থাকে সহায়ক পরিস্থিতি। কিন্তু সেটা আর কাজে লাগল কোথায়?

শুরুটা অবশ্য আগের দিনের থেকে কিছুটা ভাল। পাওয়ার প্লেতে একটির বেশি উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ তুলে ৩২ রান। তবে এর ২০ রানই শামীম পাটোয়ারির। ওপেনার নাঈম পাওয়ার প্লেতে মারতে পারেননি কোন বাউন্ডারি। ১২ বলে তখন তার রান ৫।

এর আগে একটি বাউন্ডারিতে শুরু করা নাজমুল হোসেন শান্ত অভিষিক্ত শাহনাওয়াজ দাহানির বলে হয়ে যান বোল্ড। ৭ রানে প্রথম উইকেট।

শামীম অবশ্য শুরুটা ধরে রাখতে পারেননি। লেগ স্পিনার উসমান কাদির আসতেই তার বলে স্লগ সুইপে ক্যাচ উঠিয়ে থামেন ২৩ বলে ২২ রান করে।

নাঈম ছিলেন আঁটার মতো। টি-টোয়েন্টির কোন চাহিদাই মেটেনি তার ব্যাটে। এক প্রান্ত আলগে রেখে বাড়িয়ে গেছেন রানরেটের চাপ। উসমানের আলগা বল পেয়ে কিছু বাউন্ডারি বের করার পরও তার স্ট্রাইকরেট একশো ছুঁতে একবারও।

আফিফ হোসেন এদিনও চার নম্বরে নেমে থিতু হয়ে টানতে পারেননি। তারও হন্তারক উসমান। এই লেগ স্পিনারের বলে উড়াতে গিয়ে টপ এজ হয়ে সহজ ক্যাচ ফেরেন ২১ বলে ২০ করা আফিফ।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর তৃতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ। ১৪ বলে করেছেন ১৪। ১৯তম ওভারে এর আগে আউট হয়ে যান নাঈম। ৫০ বল খেলে তার ৪৭ রানের শম্ভুক গতি ইনিংস প্রশ্ন তোলে তার টি-টোয়েন্টি দলে অবস্থান। ব্যাট করার জন্য ম্যাচের সবচেয়ে ভালো সময়টায় নাঈম চাহিদা মতো দ্রুত রান আনতে না পারায় ডুবিয়েছেন দলকে।

১২৫ রানের সহজ লক্ষ্যে নেমে সতর্ক শুরু আনেন বাবর আজম-রিজওয়ান। পাওয়ার প্লে পার করে দেন তারা। প্রথম দুই ম্যাচের মতো এদিনও অবশ্য ব্যর্থ পাকিস্তান অধিনায়ক। আগের দুই ম্যাচে শুরুতে ফিরলেও এবার থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংস টানতে পারেননি। ২৫ বলে ১৯ রান করে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে স্লগ সুইপে উড়াতে গিয়ে দেন সহজ ক্যাচ।

এরপর বড় জুটিতে খেলা নিজদের করে নেয় তারা। হায়দারকে নিয়ে  ৫১ রানের জুটি পান রিজওয়ান। রান তাড়ায় খুব একটা চাপ না থাকায় তাদের তাড়াহুড়ো করতে হয়নি। পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগুতে থাকেন তারা। কিন্তু রিজওয়ান আউট হওয়ার পরই বদলাতে থাকে চিত্র। সরফরাজকে ক্রিজে চেপে ধরে বাংলাদেশের বোলাররা। শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান।

তাসকিন আহমেদ ১৮তম ওভারে দেন ৪ রান। শহিদুলের ১৯তম ওভার থেকে আসে ৭ রান। শেষ ওভারে তাই তৈরি হয় দোদুল্যমান পরিস্থিতি। প্রথম বল ডট দিয়ে সরফরাজ ক্যাচ দেন মিড উইকেটে। স্ট্রাইক পেয়ে হায়দার আলি পরের বলে ধরা দেন লং অনে। ক্রিজে এসে চতুর্থ বলটা বোলারের মাথায় উপর দিয়ে ছক্কায় উড়ান তিনি। পঞ্চম বলে ইফতেখার ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিলে ফের জমে উঠে ম্যাচ। কিন্তু শেষ বলে আর কাজ হয়নি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ:  ২০ ওভারে ১২৪/৭  (নাঈম  ৪৭ , শান্ত ৫, শামীম  ২২,আফিফ ২০, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সোহান ৪, শেখ মেহেদী ৫* বিপ্লব ৩;  নাওয়াজ ০/২, দাহানি ১/২৪, ওয়াসি ২/১৫, হারিস ১/৩২, ইফতেখার ০/১৩, উসমান ২/৩৫ )

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১২৭/৫ (রিজওয়ান ৪০, বাবর ১৯, হায়দার ৪৫, সরফরয়াজ ৬, ইফতেখার ৬, খুশদিল ০*, নাওয়াজ ৪*; শেখ মেহেদী ০/১৯, তাসকিন ০/১৬, নাসুম ০/২০, শহিদুল  ১/৩৩, বিপ্লব ১/২৬, মাহমুদউল্লাহ ৩/১০)

ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হায়দার আলি।