দেশের প্রকৌশলীরাই এখন গড়ছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আইকনিক প্রকল্প

ম্যাক্স চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর

আধুনিক নগর রূপায়নে দেশের দীর্ঘতম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা, প্রায় সাড়ে ষোল কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ। ধারণা করা হচ্ছে নগরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই অবকাঠামোটি এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেবে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর প্রবেশ করতে যাচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুগে। প্রকল্পটির বিষয়ে সুপ্রভাতের সাথে কথা হয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের সাথে।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দৈর্ঘ্যরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছেন, এটি ইতিহাসের একটি অংশ। এতো বড় কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার অনুভূতি কীভাবে ব্যক্ত করবেন?

প্রকৌশলী আলমগীর: প্রথমেই সুপ্রভাতকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার, তেমনি চট্টগ্রামের জন্যও খুবই চমৎকার। কাজটির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়া ও কাজ করার সুযোগ পাওয়া এবং এর সাথে যুক্ত থাকা এককথায় অভূতপূর্ব। কন্সট্রাকশান কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি গর্বিত যে দেশের সবচে’ বড় আইকনিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আমরা ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের লিডারশিপে করছি। যদিও আমাদের সাথে চাইনিজরাও কিছুটা জড়িত। ওদের অবদানও কম না। এই প্রকল্প স্বাক্ষরের দিন আমার মন ভরে গিয়েছিল। আল্লাহর রহমতে আমি নিজে অত্যন্ত কনফিডেন্স নিয়ে গত ১০/১৫ বছর দেশের উন্নয়নে যেসব প্রকল্প করেছি তারই ফলস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেয়া এই প্রকল্প চট্টগ্রামবাসীর আশীর্বাদে আমরা সই করতে পেরেছি। আমি সবসময় যেকোন কাজ চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি। স্বাক্ষরের পরপরই এই প্রকল্পে অতি দ্রুতই কাজে লেগে গেছে আমাদের ইঞ্জিনিয়ার, সুপারভাইজার ও বিশাল কর্মীবাহিনী। সবাই মিলে এখন এই কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সুপ্রভাত: এই মেগাপ্রকল্পে যাঁরা এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করছেন, সেখানে দেশি-বিদেশি লোকবলের পরিসংখ্যান কেমন?

প্রকৌশলী আলমগীর: প্রকল্পের প্রতিটি কাজই পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে। সয়েল টেস্ট থেকে পাইলিং,পাইলিং থেকে পাইল ক্যাপ, পিয়ার, পিয়ার ক্যাপ, গার্ডার মুভমেন্ট থেকে  মেকানিক্যালি গার্ডার বসানো সব কাজে বিভিন্নভাবে আমাদের প্রায় ২ হাজার লোক কাজ করছেন। ৮-১০ জন চীনা বিশেষজ্ঞও রয়েছেন। তাঁরা আসলে এ ব্যাপারে এক্সপার্ট। তবে মূল কাজ করছেন বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও দক্ষ শ্রমিকরা। জেনে আরও খুশি হবেন প্রকল্পের নকশা করেছেন বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা, যেটা ম্যাক্স নয় অন্য তিনটিকোম্পানি একসাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে। সেটিরবেটিং করছে বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)। সুতরাং, আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়াররা প্রকল্প ডিজাইন থেকে আরম্ভ করে সবকিছুই সাকসেসফুলি করতে পারবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এখন এধরনের বড় প্রকল্প শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততায় সম্পন্ন করা সম্ভব। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের তেমন কোন দরকার হবে না বা হচ্ছেনা।

সুপ্রভাত: সারা বিশে^ই করোনা মহামারির অভিঘাত সমস্ত পরিকল্পনাকে তছনছ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে এই প্রকল্পের কাজ কতটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে?

প্রকৌশলীআলমগীর : করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বে সবকিছুই কমবেশি তছনছ হয়ে গেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এবং সঠিক নেতৃত্ব ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা- তেমন বাধাগ্রস্ত হয়নি। বিশেষ করে এ প্রকল্পে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ৩০-৪০ দিন কাজ বন্ধ ছিল গত বছর। তারপর থেকে দিন-রাত কাজ চলছে। শুধু এ প্রজেক্ট নয়, বাংলাদেশে আমাদের ও অন্যান্য সব প্রজেক্ট করোনার জন্য বাধাগ্রস্ত হয়নি। এটি সম্ভব হয়েছে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে। আমাদের কোম্পানিতে বিভিন্ন প্রজেক্টে মাঠপর্যায়ে ৭-৮ হাজার লোক কাজ করেন। এখানে উল্লেখ করার মতো বা বড় কোন ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘেœ কাজ চলছে।

সুপ্রভাত: এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নানান সম্পৃক্ততা রয়েছে। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজটি কীভাবে করছেন?

প্রকৌশলী আলমগীর: এই প্রকল্প চট্টগ্রাম নগরের বুকের ওপর দিয়ে গেছে। এই প্রকল্প হার্ট অফ দ্যা সিটির মেইন রোডে। এখানে আন্ডারগ্রাউন্ডে এবং ওভারহেডে যথেষ্ট ইউটিলিটিজ আছে। এই

ইউলিটিজগুলি রিমুভ করা, ডিটেক্ট করা এবং পর্যায়ক্রমে টেকনিক্যালি কাজ করা যেমন একটা চ্যালেঞ্জ তেমনি আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাস্তার দুপাশ প্রশস্ত করতে অনেক জায়গা অধিগ্রহণ করা। অনেক জায়গা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে লিয়াঁজো করেই করা হচ্ছে। সুতরাং,এটা একটা অত্যন্ত জটিল কাজ। কিন্তু আশার কথা হলো, এখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নেভাল কর্তৃপক্ষ থেকে আরম্ভ করে সিডিএ এবং পিডিবি এদের সবার সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে পোর্ট অথরিটি এবং নেভাল অথরিটিতে যারা আছেন ওনাদের সাথে প্রচুর মিটিং হয়েছে, হচ্ছে। তাঁরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ, নির্দেশনা ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। সবাই বলছেন সাপোর্ট না দিলে এটা দেরি হবে এবং তাতে সবার ক্ষতি ও ভোগান্তি বাড়বে। প্রজেক্টটা শেষ হলে এটার ফলভোগ করবে পোর্ট থেকে আরম্ভ করে প্রত্যেকে। সেজন্য সবাই সর্বাত্মক সাহায্য করছে, সহযোগিতা করছে। সবচে কঠিন যে কাজ সেটা হল  ইলেক্ট্্িরক্যাল পোল শিফটিং। প্রক্রিয়াগত কারণে এটা একটা দীর্ঘ কাজ কিন্তু আমরা সেটা করে যাচ্ছি এবং এখানকার প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা এব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। সিটি কর্পোরেশনও যখন  যা দরকার তা করছেন এবং ওনাদের পোলগুলি ওনারা অনেক আগেই সরিয়ে নিয়েছেন নিজ দায়িত্বে। আসল কথা হচ্ছে প্রত্যেকেই এই প্রজেক্টকে নিজেদের ভাবছেন। সবার সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।

সুপ্রভাত: নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে আপনি কতটা আশাবাদী?

প্রকৌশলী আলমগীর: আমরা এই প্রজেক্ট যখন সিগনেচার করি, তখন থেকে আমাদের ইনটেনশন হচ্ছে চার বছরের এগ্রিমেন্ট করা আছে আমরা পারলে ১/২  মাস আগে হ্যান্ডওভার করবো, যাতে সুনাম হয়। কারণ বাংলাদেশে কালচার হয়েগেছে ডিলে করা।আমি বলবো দেশীয় কোম্পানিগুলো এটার জন্য দায়ী নয়। এটার জন্য বেশি দায়ী বিদেশি কোম্পানিগুলি। বিদেশি কোম্পানিগুলির রেকর্ড দেখলে বুঝবেন। দেশীয় কোম্পানিগুলি কম সময়ে প্রজেক্ট হ্যান্ডওভার করতে পারে।

আমাদের ইনটেনশন ছিল একমাস দুইমাস আগে প্রজেক্ট হ্যান্ডওভার করা। এটা একটা বিশাল প্রজেক্ট এখানে কোনরকম রিস্ক নেয়া যাবে না। কোন ডাউটফুল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, কনফিডেন্টলি এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এখনও বিশ্বাস করি সেজন্য আমরা দিনরাত কাজ করছি যেখানে সুযোগ পাচ্ছি। যদিও পুরো জায়গা আমরা হাতে পাই নাই, সেই প্রক্রিয়াও চলছে -হ্যান্ডওভার হচ্ছে। সিডিএ কর্তৃপক্ষ স্পেশালি সিডিএর চেয়ারম্যান সাহেব, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাহেব,সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাহেব এরা প্রত্যেকেই এই প্রজেক্টের জন্য যখন যেখানে যা কিছু করা দরকার তা করছেন। সিডিএর চেয়ারম্যান সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ, আমি বলবো ওনার একসেপ্টিবিলিটি চিটাংয়ের সব ডিপার্টমেন্টে অত্যন্ত বেশি। সুতরাং, উনি পার্সোনালি গিয়ে মিটিং করলে, একটা কিছু রিকুয়েস্ট করলে সবাই গুরুত্ব সহকারে দেখে এবং মূল্যায়ন করে। সেই হিসেবে আমি এখনও আশাবাদী আমরা কোভিডের এফেক্ট রিকভারি করে যথাসময়েই এই প্রজেক্ট শেষ করতে পারবো। বড় বড় যে বিল্ডিংগুলো আছে আগ্রাবাদসহ আরও দুয়েক জায়গায় এগুলো ভাঙা হবে। এটাকে ইস্যু করে কেউযেন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত না করে। কারণ সবাই এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবে। যাদের ঘর ভাঙছে তারা কিন্তু তিনগুণ দাম পাবে। সুতরাং, আমি আশা করবো সবাই সহযোগিতা করবে যার ফলে আমরা সহজে কাজ করতে পারবো এবং এইসব ল্যান্ড যদি আমরা পেয়ে যাই তবে নির্ধারিত সময়ে এই কাজ শেষ করার সবধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে।

সুপ্রভাত: আগামীতে কি এই ফ্লাইওভারের সাথে অন্যান্য দিকে কানেকটিভিটি বাড়ানো সম্ভব?

প্রকৌশলী আলমগীর: এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এয়ারপোর্টের দিক থেকে সাড়ে  ষোল কিলোমিটার এসে আমাদের কোম্পানির নির্মিত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারে যেটাকে, আমরা মুরাদপুর ফ্লাইওভার বলি ঐ ফ্লাইওভারের সাথে কানেক্ট করে দেয়া হবে। বর্তমানে আমরা করছি স্ট্রেইটওয়ে। ফলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফা¬ইওভার ব্যবহার করে বহদ্দারহাটের ঐদিকে যাওয়া যাবে। তার মানে এখনও কানেক্টিভিটি আছে। এখন ভবিষ্যতে আগামী ২০/৫০ বছর পরে  কখনো প্রয়োজন হলে যেকোন ফ্লাইওভারের সাথে যেকোন ফ্লাইওভারের কানেক্টিভিটি বাড়ানো যায়। এটা প্রকৌশলীদের কাজ। এটা বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়াররাই পারবেন, কোন সমস্যা হবে না।

সুপ্রভাত: ফ্লাইওভারকে কার্যকর করতে র‌্যাম বা লুপ কোনটি বেশি প্রয়োজন ?

প্রকৌশলী আলমগীর: যে কোন ফ্লাইওভারের কার্যকারিতার জন্য র‌্যাম ও লুপ দুটোই মূল্যবান।  সোজা জনবহুল জায়গা যেখানে চাহিদা আছে সেখানে নামা ও ওঠার জন্য আমরা র‌্যাম দেব। লুপ সাধারণত বাম থেকে ডানে ঘুরে আসতে বা  অন্য রাস্তায় ঘুরে যেতে হলে, ঘুরিয়ে একটু উপরের দিকে নিতে হয়- যা কিছুটা জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ হলেও তা প্রয়োজন।  যেখানে র‌্যাম দিয়ে কাজ হয়না সেখানে লুপ দিতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী যেকোন ফ্লাইওভারে র‌্যাম ও লুপ দুটোই প্রয়োজন হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের মত ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এর সীমাবদ্ধতা থাকলেও অনেক র‌্যাম ও লুপ দেয়ার ব্যবস্থা নকশা ও চুক্তিতে রয়েছে। সিডিএর নির্দেশনা অনুযায়ী সেটা করা হবে যাতে এক্সপ্রেসওয়ে পোর্ট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত যাওয়ার আগে কিছু কিছু গুরুতপূর্ণ জায়গায় মানুষ উঠতে এবং নামতে পারে।

সুপ্রভাত: আপনারা এর আগে আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কের কাজ করেছেন। সেখানে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কিছু সমস্যা দেখা গেছে। নির্মাণাধীন এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রেও এমনটি হওয়ার আশংকা রয়েছে কী-না?

প্রকৌশলী আলমগীর: জলাবদ্ধতার বিষয়ে ফ্লাইওভারের নির্মাণশৈলী ও ফ্যসিলিটিজ দায়ী নয়। দায়ী মূলত তদারকির। এখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত পাইপ দেয়া আছে। কিন্তু ময়লা আবর্জনায় তা বন্ধ হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ছুড়ে ফেলা বর্জ্য পাইপে আটকে ভারি বর্ষণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। নিষ্কাশন পাইপগুলো পরিষ্কার রাখাই এই জলাবদ্ধতার সমাধান। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে এব্যাপারে আরও সচেতনতা প্রয়োজন। এটা নিশ্চিত করতে পারলে জলাবদ্ধতার সমস্যা হবে না। পূর্ব অভিজ্ঞতা ও তদারকির অভাবের বিষয়টি মাথায় রেখে চলমান প্রকল্পে ড্রেনেজ সিস্টেমটা আরও উন্নত রাখা হয়েছে। যাতে কিছুটা অবহেলা থাকলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়।

সুপ্রভাত: এই মেগাপ্রকল্পের নির্মাণাকাজের ক্ষেত্রে যে ধরনের নির্মাণসামগ্রী ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে এই এক্সপ্রেসওয়ের স্থাপনা কতটা টেকসই হবে বলে আপনি মনে করছেন?

প্রকৌশলী আলমগীর: আইকনিক প্রকল্পের ক্ষেত্রে ম্যাক্স গ্রুপ নতুন নতুন প্রযুক্তি আমদানি করে। মুরাদপুর ফ্লাইওভারেও আনা হয়েছে। পরবর্তীতে আমাদের আনা প্রযুক্তি অন্যরাও তাদের প্রজেক্টে ফলো করছে। এখানেও আমরা বর্তমান বিশ্বে পাওয়া যায় এমন ধরনের আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি আনছি। আমি নিজে একজন সচেতন প্রকৌশলী হিসেবে সেরা কারিগরি ও প্রকৌশলবিদ্যা এখানে প্রয়োগ করছি। এখানে নিরাপত্তার বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। মুরাদপুরে যে ফ্লাইওভার হয়েছে সেটা অত্যন্ত ভালো ও সেরা মানের কাজ হয়েছে। আমরা এই প্রকল্পে আমাদের আগের কাজকে অতিক্রম করতে চাই। প্রকল্পে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো টাইগারপাস রেলওয়ের ওভারপাস। যার পাশে ফ্লাইওভারও আছে। দেওয়ানহাট মোড় থেকে টাইগারপাসের অনেক ওপর দিয়ে যাবে। এখানে বক্সগার্ডার হবে, যা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন কাজ। ট্রেন চলাচল কখনও বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। ট্রেন চলাকালীন নির্মাণকাজ বাধাহীন করতে নেয়া হচ্ছে পরিকল্পনা। বক্সগার্ডারটা এখনও নকশা করার পর্যায়ে রয়েছে। নকশা হওয়ার পর ট্রেন চলাচলের মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে। একটা কার্যকর মেথডোলজি অনুসরণ করে আমরা এই কঠিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন কররো। এখানে একটা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে যা দুইবছর আগে আমরা ধলেশ্বরী সেতুতে ব্যবহার করেছি। এটা কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যের ব্যাপারে আমরা আপোষহীন। আমরা কন্সট্রাকশন কন্ট্রাক্টর। ডিজাইন করবে সিডিএ মনোনীত তিন কনসালটেন্ট এবং এমআইএসটি রেটিংয়ের মাধ্যমে এই নকশা আমাদের কাছে আসবে। ম্যাক্সের দায়িত্ব হলো যেভাবে নকশা করা হয়েছে সেভাবে মানসম্মত উপাদান দিয়ে প্রজেক্ট সম্পন্ন করা। সুতরাং, আমি মনে করি না আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা হবে। এই স্ট্রাকচার একশ’ বছরও ভালো থাকবে।

সুপ্রভাত: নির্মাণশিল্পে আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে মেগা বা বড় প্রকল্পের নির্মাণাকাজে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সক্ষম বলে মনে করেন?

প্রকৌশলী আলমগীর:  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মহাসড়কে আছে সেখানে আমাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। চীনের কথা বাদ দিয়ে যে কোন উন্নয়নশীল দেশ যেমন ভারতেও আজকে নির্মাণশিল্পে শতাধিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের আঞ্চলিকভাবে অগ্রাধিকার দেয়ার কারণে। এজন্য বিদেশিরা টেন্ডার দিতে আসতো না। কিন্তু আমাদের বাজারটা মনে হয় হয়ে গেছে আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত। আমাদেরও যেন যুদ্ধে ঠেলে দেয়া হয় এবং যুদ্ধ করে চুক্তিটা জয় করে নিতে হয়। এটা দুঃখজনক। আমি মনে করি যদি দেশীয় কোম্পানিগুলো রক্ষায় এগিয়ে আসার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয় তাহলে এইসব প্রজেক্টে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আসতে হবে না। দেশীয় ১০/১৫টি প্রতিষ্ঠানই মেগা প্রকল্পগুলি সফলভাবে করতে পারছে ও পারবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।