তুমব্রু সীমান্তে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তে দুটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপের গোলাগুলি, মৃত্যু ও বসতঘরে অগ্নিকা-ের ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয়রা। মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গ্রুপ আরসা ও আরএসও বুধবার ঘুমধুমের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় সংঘর্ষে জড়ায় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান। খবর বিডিনিউজের।

সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এরপর স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শতশত বসতঘর ভস্মীভূত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা জানিয়েছেন, বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। মধ্যরাতের পর শান্ত হয়ে যায়।
শূন্যরেখায় আন্তর্জাতিক রীতি মতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওখানে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে এখনও স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যতটুকু দেখা যাচ্ছে বুধবার দেওয়া আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির দুই-তৃতীয়াংশ বসত ঘর পুড়ে গেছে।’

পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার পরিস্থিতি নিয়ে এখন সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কিত। ঘটনার আশপাশে কেউ যাচ্ছে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, গত বছর মধ্য অগাস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত ছিল। এর জেরে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ায় সীমান্তের অনেকেই বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল।

‘এখন সীমান্তের শূন্যরেখায় দেশটির (মিয়ানমার) সশস্ত্র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি এবং শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগানোর ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগে রয়েছেন স্থানীয়রা।’

বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কোনারপাড়ার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, বুধবার দিনভর সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি এবং আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগানোর ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারীরা বেশি আতঙ্কিত; কারণ রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী যেকোনো সময় তাদের উপর আক্রমণ করে বসতে পারে।

এদিকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা। এতে নতুন করে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এ নিয়ে তমব্রু বাজার এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, বুধবার সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাতের জেরে ইতোমধ্যে স্থানীয় দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এতে সংঘাতে জড়িত রোহিঙ্গা দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের অনেকেই আতঙ্কে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের মধ্যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকে। এর মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে অবস্থান নিলেও কিছু রোহিঙ্গা শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে আশ্রয় নেন।

এ ক্যাম্পে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা সহায়তা না করলেও আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি) সহায়তা করে আসছে।

আইসিআরসির তথ্য মতে, শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি পরিবারে সাড়ে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা জানিয়েছেন, ঘটনার পর কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্যরেখা থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানে কয়টি পরিবারের মোট কতজন রোহিঙ্গা রয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শূন্যরেখার এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের শূন্যরেখায় ফেরত পাঠানো হতে পারে জানান নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও। এখনও কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্যরেখায় অবস্থান করলেও ‘বেশিরভাগ মিয়ানমারে অভ্যন্তরে চলে গেছে’ জানিয়ে ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে। এ ঘটনায় এমএসএফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে ঘটনায় একজন নিহত আর দুইজন আহত ছাড়া আর কোনো হতাহতের তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।

তিনি জানান, হামিদ উল্লাহ (২৭) নামের নিহত রোহিঙ্গার মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। গুলিবিদ্ধ মুহিব উল্লাহকে (২৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অপর শিশু এখনও কুতুপালংয়ে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।