তীব্র দাবদাহে জনজীবনে অস্বস্তি : বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ। অতিষ্ঠ জনজীবন। গ্রামে মানুষের বৃক্ষের সুশীতল ছায়ায় কয়েক দ- জিরিয়ে নেয়ার অবকাশ থাকলেও শহরের ইট-পাথর-কংক্রিটে সে সুযোগ নেই। গত ৭ বছরে এ রকম তাপমাত্রা অনুভূত হয়নি দেশে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত রোববার রেকর্ড হয়েছে যশোরে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৪ সালের পর এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চট্টগ্রামে গত রোববার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৫ সালের পর চট্টগ্রামে গরমের তীব্রতা এরূপ হয়নি। ২০ থেকে ২৫ এপ্রিল এই কয়দিনে তাপমাত্রা ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আবহাওয়াবিদগণ বলছেন, এ ধরণের দাবদাহ আরো কয়েকদিন থাকবে। বঙ্গোপসাগর থেকে সহসা জলীয়বাষ্প না এলে, কালবৈশাখীর ঝড় বৃষ্টি না হলে আবহাওয়া খানিকটা শীতল হবেনা, তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রার তীব্রতা কমতে পারে মর্মে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
অস্বস্তিকর এই দাবদাহে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, বিশেষত এই তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট আরো অসহনীয় হয়েছে। রমজানের দিনগুলোতে আবহাওয়ার এই উষ্ণায়ন মানুষকে কষ্টে ফেলেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা বাড়ে গরমের সময়। গত বছর এটি দেখা গেছে, এই বছর আরো তীব্র হয়েছে সংক্রমণ এই দাবদাহকালে। শারীরিক অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন মানুষ। দাবদাহের কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকটও দেখা দিয়েছে নানাস্থানে। ফটিকছড়ি এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে নলকূপে পানি না ওঠায়। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে বলছেন বিশেষজ্ঞরা পাহাড়ি এলাকায় এই সময় পানির সংকট ও তীব্র হয়ে দেখা দেয়।
বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ঘটে চলেছে শিল্পায়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে। বনাঞ্চল উজাড় ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া, আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ, বিশ্বের ‘ফুসফুস’ খ্যাত আমাজান বনাঞ্চলের পুড়ে যাওয়া, পারমাণবিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, যুদ্ধ বিগ্রহে পারমাণবিক অস্ত্রের নির্বিচার প্রয়োগ, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের যথেচ্ছ কার্বণ নিঃসরণ এসব অপরিনামদর্শী ক্রিয়াকলাপ ধরিত্রীকে ক্রমাগত উত্তপ্ত করে চলেছে। বৈশ্বিক সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া রোধ করা সম্ভব নয়। বায়ুদূষণের কারণেও আবহাওয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে, বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর উৎপত্তি ঘটছে।
আমাদের দেশে এক শ্রেণির লোভী মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশের ধ্বংস সাধন করে চলেছে। নগরের পুকুর, জলাশয়, বিল, ডোবা উন্মুক্ত জায়গা ভরাট করে ফেলেছি আমরা। অথচ প্রকৃতির এসব উপাদান আবহাওয়াকে শীতল রাখে, আমরা নির্বিচারে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড় সাফ করে ফেলেছি, অনেক পাহাড়ে কোন বৃক্ষরাজি নেই; বৃক্ষ, বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তদুপরি আমাদের শিল্পায়ন, নগরায়ন প্রক্রিয়ায় আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অমনোযোগী। বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ নগরীর মধ্যে ঢাকা অন্যতম।
ধরিত্রীকে শীতল রাখতে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপাদানগুলির প্রতি যতœশীল ও মনোযোগী হওয়া আমাদের জীবন জীবিকার স্বার্থেই জরুরি। কোভিড মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে প্রাণ-প্রকৃতির রক্ষায় যদি সম্মিলিত উদ্যোগ না নেওয়া হয় তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।