তদন্ত কমিটির কাজে ধীরগতি

চসিকের প্রকল্প পরিচালককে মারধর

বাড়তে পারে সময়সীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলার ঘটনায় চসিক কর্তৃপক্ষ খুলশি থানায় মামলা দায়ের ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর পাঁচ কার্যদিবসেও তদন্ত কাজের গতি লক্ষ করা যায়নি।

চসিকের কর্মকর্তা প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলার ঘটনায় ২৯ জানুয়ারি রাতে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। অপর দুই সদস্য হলেন সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা মণীষা মহাজন এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির।
প্রধান তদন্তকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুল তাবরীজ ফোনে বলেন, ‘এখনো সাত কর্মদিবস হয়নি। ভিকটিম ছুটিতে আছেন। উনি আসলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।’
মামলার বাদির জবানবন্দি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাদির জবানবন্দি এখনো নেওয়া হয়নি। আগামীকাল (আজ) নেওয়া হবে।’

তদন্তের পঞ্চম দিনে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সময়সীমা আরো বাড়াতে পারি। তবে এ পর্যন্ত কী তথ্য আমাদের হাতে এসেছে তা এখন বলতে চাচ্ছি না।’
হামলাকারীদের ব্যাপারে একাধিক সূত্রে জানা যায়, চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে পার্টনারে সিটি করপোরেশনের বেশকিছু ঠিকাদারি কাজ করেছেন কঙ্কন। তিনি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর অনুসারী বলে নিজেকে পরিচয় দেন। শাহ আমানত ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সুভাষ। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী তিনিও প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলার সাথে জড়িত। সুভাষ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

গত ২৯ জানুয়ারি রোববার বিকালে টেন্ডার নিয়ে মারধর করা হয় প্রকল্প পরিচালককে। এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ১৫-২০ জন ঠিকাদার প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীর ৪১০ নম্বর কক্ষের সামনে আসেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল লোহার রড ও অন্যান্য দেশি অস্ত্রশস্ত্র। তারা রুমের ভেতর প্রবেশ করতে চাইলে অফিস সহায়ক তিলক বলেন, ‘স্যার ভাত খাবেন’। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা তাকে ধাক্কা দিয়ে রুমে প্রবেশ করেন। প্রথমে তারা গোলাম ইয়াজদানীর সামনের চেয়ারে বসে বলেন, সব টেন্ডার আমাদেরকে দিতে হবে। আমাদের বাইরে কেউ টেন্ডার পেলে ভালো হবে না। আর যদি সব টেন্ডার না পাই তাহলে জানে মেরে ফেলবো। এরপর হঠাৎ ঠিকাদার কঙ্কন, ফেরদৌস, সুভাষ ও আলমগীর গোলাম ইয়াজদানীর শার্টের কলার ধরে টেনে ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে অফিসের স্টাফরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা বের হয়ে যায়। হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের আটকানোর চেষ্টা করেননি।

এ ঘটনায় ২৯ জানুয়ারি রাতে খুলশী থানার পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সঞ্জয় কুমার ভৌমিক ওরফে কঙ্কন (৩৫), সুভাষ মজুমদার (৩২), নাজমুল হাসান ফিরোজ (৫০) ও মাহমুদ উল্লাহ (৪০)কে গ্রেফতার করে। তাদের ৩০ জানুয়ারি আদালতে প্রেরণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালত তাদেরকে হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এদিকে, প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়, তিনি আর চসিকে অফিস করতে ইচ্ছুক নন। এমন মন্তব্য মিথ্যা বলে সুপ্রভাতকে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি কেন চসিকে অফিস করবো না? আমি সরকারি চাকরিজীবী। সরকারি কাজে যেখানে আমাকে পাঠায় সেখানে অফিস করবো। আমি চসিকে অফিস করতে অনিচ্ছা কোথাও প্রকাশ করিনি। এসব ভ্রান্ত কথা। বর্তমান আমি ঢাকা থেকে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

চসিকের কর্মকর্তা প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলার ঘটনায় আসামিরা হলেন শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক ওরফে কঙ্কন, এসজে ট্রেডার্সের মালিক সাহাব উদ্দিন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ মল্লিক, মেসার্স খান করপোরেশনের হাবিব উল্ল্যাহ খান, নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের নাজিম, মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের নাজমুল হাসান ফিরোজ, ইফতেখার অ্যান্ড ট্রেডার্সের ইউসুফ ও জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিষ বাবু ও অজ্ঞাত ঠিকানার ফরহাদ।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি রোববার বিকালে চসিক ভবনের চতুর্থ তলায় ২৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলা করে ১৫-২০ জন ঠিকাদার। এ সময় তাকে মারধরের পাশাপাশি তার রুমের নামফলক, টেবিলের কাঁচ ভেঙে ফেলা হয়।