চেক পোস্টে আটকা পড়ছে বাড়িমুখী মানুষ

দেড় শতাধিক গাড়ি জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক >>
আসন্ন ঈদ সামনে রেখে বাড়ি ফেরার ঢল পড়েছে চট্টগ্রাম নগরে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশপথে চলছে পুলিশি তল্লাশি। নগরে মানুষ প্রবেশ ও বের হতে না পারার জন্য জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে সকল পরিবহন চলছে সেগুলোর দেওয়া হচ্ছে মামলা। এতে ফেরানো হচ্ছে যাত্রীদের।
তবে, অভিযোগ রয়েছে পুলিশের সাথে কিছু অসাধু চক্রের যোগসাজসে দিনের আলোতে প্রকাশ্য যাত্রী উঠা-নামা করছে পরিবহন শ্রমিকরা। পুলিশ বলছে কোনো গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি যাতে যাত্রী নিয়ে সিটি গেট পার হতে না পারে সেজন্য বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। তাছাড়া অক্সিজেন বালুছড়া ও শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জ্যারটেক এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। শবে কদর রাত থেকে শুরু করে গতকাল রাত পর্যন্ত প্রায় দেড়শতাধিক গাড়িকে টো মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে নগরে প্রবেশের চেয়ে বের হওয়ার সংখ্যা অধিক বলে জানা যায়।
সরেজমিনে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, পরিবহন চলাচল করছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। মাইক্রোসহ ছোট ছোট পিকআপে করে চলছে যাত্রী পরিবহন। বিভিন্ন ছুতোয় যাত্রী নিলেও ব্রিজের প্রবেশ পথে পুলিশি তল্লাশিতে পড়ছে এসব পরিবহন। এতে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। পরিবহনগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ও সরকারি নির্দেশনা না মানায় ‘টো’ মামলা দিয়ে গাড়ি পাঠানো হচ্ছে ডাম্পিংয়ে।
তারপরও যেন তাদের ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। নানা ছুতোয় অনেকে প্রবেশ করছে নগরে। আবার কেউ কেউ যাচ্ছে বাইরে। অন্যদিকে কিছু যাত্রী ভুয়া ডাক্তারি পরামর্শপত্র নিয়ে ঢুকছে নগরে। এতে অনেকে আটকা পড়ছে পুলিশের তল্লাশিতে। যার ফলে ফিরে যেতে হচ্ছে শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা থেকে।
শাহ আমানত সেতু পার হলে আবার চেকপোস্ট। এতেও চলছে তল্লাশি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট পিকআপে করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এতে পুলিশি তৎপরতায় বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে এ এলাকায়। বেশ কিছু গাড়ি আটক করা হয়েছে। মামলা দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে যাত্রী পরিবহনের।
সিটি গেট এলাকায় ট্রাফিক উপপরিদর্শক মোস্তফা আল মামুনের নেতৃত্বে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। কোন গণপরিবহন যাতে যাত্রীবোঝাই করে সিটি গেট পার হতে না পারে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে ৪ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট দিয়ে চলছে টানা অভিযান। তিনি বলেন, ‘যে সকল গাড়ি যাত্রী পরিবহনের যোগ্য নয়, সেসব গাড়ি যাত্রীবোঝাই করে যাচ্ছে দূরপাল্লায়। মানছে না সরকারি নির্দেশনা, স্বাস্থ্যবিধি। তাই যে সকল গণপরিবহন সরকারি নির্দেশনা অমান্য করছে সেগুলোর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যা সরকারি নিদের্শনা জারির প্রথম দিন থেকেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তা নতুন নিদের্শনা না আসা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’
অন্যদিকে নগরীর অলংকারে দেখা যায়, মাইক্রোবাসে প্রকাশ্যে যাত্রী নিচ্ছে চালক, সাথে কয়েকজন সহযোগী দরদার করছে। প্রকাশ্য যাত্রী বোঝাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মাইক্রোচালক মহিউদ্দিন বলেন, ‘প্রতি সিট ভাড়া ১ হাজার টাকা।’ পুলিশের বাধা দেয় কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আসলে মামলা দেয় বা চলে যেতে বলে।’
সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন অভিযোগ করে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে ঢাকাতে। কিন্তু ভাড়ার পরিমাণ দি¦গুণ।’
অলংকার মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট আকরাম হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘যে সকল পরিবহন সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী বোঝাই করছে তাদের দেখার সাথে সাথেই ট্রাফিক আইন অনুযায়ী জরিমানা ও আটকের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসগুলো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী বোঝাই করছে, এমন অসঙ্গতি দেখা মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।’ একেখান মোড়ে একই হাল। প্রকাশ্য প্রাইভেটকারে বোঝাই হচ্ছে যাত্রী।
এ কে খান মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট দিন মোহাম্মদ দিনার সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক দূরপাল্লার কিছু গণপরিবহন যাত্রীবোঝাই করছে। তার পাশাপাশি কিছু ব্যক্তিগত গাড়িতে ও যাত্রীবোঝাই করছে। আমরা যতটুকু পারছি মামলা ও আটকের মাধ্যমে বন্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এরপরও কিছু অসাধু চক্র আমাদের চোখের আড়ালে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’
আকবরশাহ জোনের পিআই অনিল বিকাশ চাকমা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘রাতে বেশিরভাগ গাড়ি নগর ছাড়তে চায়। রোববার থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত প্রায় দেড়শো গাড়ি আটক করা হয়েছে। তবে, নগরে প্রবেশের চেয়ে বাইরে যাওয়ার সংখ্যা অধিক।’
অন্যদিকে কর্ণফুলী জোনের পিআই আনোয়ারুল আলম মজুমদার বলেন, ‘শবে কদরের রাতে প্রায় ২৫টি যাত্রীবাহী গাড়ি আটক করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পশ্চিম জোনের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক আহম্মেদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দূরপাল্লার পরিবহনের উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যাতে যাত্রীবোঝাই করে নগরীর বাইরে যেতে না পারে সেজন্য সিটি গেইটে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। এতে যে সকল গাড়ি যাত্রীবোঝাইয়ের যোগ্য নয়, কিন্তু যাত্রী বোঝাই করছে এবং যে সকল দূরপাল্লার পরিবহন নির্দেশনা না মেনে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই অভিযান পরবর্তী নিদের্শনা না আসা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’