চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি রটারড্যাম ও বার্সালোনা বন্দরে চলাচল করবে জাহাজ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ইউরোপ রুটে যুক্ত হচ্ছে আরো ৩টি কন্টেইনার জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দর, স্পেনের বার্সালোনা বন্দরে চলাচল করবে জাহাজ তিনটি। আগামী ২০ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে এসব জাহাজের চলাচল।

রপ্তানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতি ১৫ দিন পরপর ছেড়ে যাবে এমভি স্পিকা, এমভি এন্ড্রোমেডা জে এবং এমভি মিউজিক নামের তিনটি জাহাজ। রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকস জাহাজ তিনটির বাংলাদেশের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং দেশের রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি দেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় ধরনের সুখবর। তাই যত দ্রুত ইউরোপের অন্য দেশগুলোর পাশাপাশি আমেরিকায় সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করা যায় ততই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, শীঘ্রই চালু হবে পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একে অপরের ভূখন্ড ব্যবহার করে। সেখানে সড়কপথে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের যে কোন দেশে কার্গো গেলে তারা সড়কপথে গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবে।

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সোঙ্গাচিতা জাহাজ ৯৫১ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) কন্টেইনার নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে যাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইউরোপের সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচল। ইতালিয়ান একটি শিপিং কোম্পানি দুটি কন্টেইনার জাহাজ- সোঙ্গা চিতা ও কেপ ফ্লোরেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য পরিবহন করছে। রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকস জাহাজ দুটির বাংলাদেশের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট।

রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, আগামী ২০ মে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ইউরোপে আরো তিনটি কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা করতে যাচ্ছি। চট্টগ্রাম থেকে ২০ দিনে গন্তব্যে পৌঁছাবে জাহাজগুলো।

বর্তমানে ইউরোপ ভিত্তিক কন্টেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের রটারড্যাম, অ্যান্টওয়ার্প ও হামবুর্গের মতো মূল বন্দরে (বেজ পোর্ট) যাওয়ার আগে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, তানজুম পালাপাস, কেলাস ও চীনের কিছু ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে যায়।

বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে ইউরোপ পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৪০ দিন। নেদারল্যান্ড এবং ফ্রান্সে তিনটি জাহাজ চলাচল শুরু হলে পণ্য পৌঁছাতে সময় কমবে ২০ দিন। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা।

মেরিন ট্রাফিক এর তথ্য অনুযায়ী, জার্মানির পতাকাবাহী কন্টেইনার জাহাজ এমভি স্পিকার কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৭৪৯  টিইইউএস। জাহাজটির ড্রাফট ৬.৭ মিটার, প্রস্থ ১৯.৪ মিটার ও লেন্থ ১৫১.১২ মিটার। সাইপ্রাসের পতাকাবাহী এমভি এন্ড্রোমেডা জে জাহাজটির কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা  ৮৫০  টিইইউএস। জাহাজটির ড্রাফট ৬.৮ মিটার লেন্থ, ১৩৯.৬ মিটার এবং প্রস্থ ২২.৩৯ মিটার। পর্তুগালের পতাকাবাহী এমভি মিউজিক জাহাজটির কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৮০৩  টিইইউএস। জাহাজটির ড্রাফট ৬  মিটার, লেন্থ ১৪০.৫৮ মিটার এবং প্রস্থ ২১.৮ মিটার।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বলেন, গত রবিবার বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইউরোপ রুটে চলাচলের জন্য একটি জাহাজের অনুমোদন দিয়েছেন। জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম পোর্ট, স্পেনের বার্সালোনা পোর্টে চলাচল করবে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানও জানিয়েছেন ইউরোপের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচলের তথ্য।

এম শাহজাহান বলেন, ইউরোপের সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচলের বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষরের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ রয়েছে। অচিরেই এই তিনটি দেশের সাথে সরাসরি কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হবে। সরাসরি জাহাজ চলাচল সেবা চালু করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ইউরোপের সাথে সরাসরি পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। এতে রপ্তানিকারক উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সরাসরি জাহাজ চালাচল বাড়লে কার্গো বিদেশি ক্রেতাদের কাছে কম সময়ে পৌঁছাতে পারবে। এতে ফ্রেইট অনেক কমে যাবে, সময়ও বাঁচবে। বাংলাদেশের পণ্য বিশ্বের বাজারে ভালো ব্যবসা করবে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশ পোশাক পণ্য। দেশের সামগ্রিক রপ্তানি বাণিজ্যের ৫১ শতাংশই হয় ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে। এছাড়া ২৫ শতাংশ আমেরিকা, এশিয়া ২০ শতাংশ, কানাডায় ৪ শতাংশ।

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। কন্টেইনার শিপমেন্টের ৯৮ শতাংশও হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে।

বিজিএমইএর সহ সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর সাথে নতুন জাহাজ চলাচল দেশের রপ্তানি খাতে বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।  এই সেবা যাতে ব্যাহত না হয় তা কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র : টিবিএস