চট্টগ্রামে আদালতের আদেশে ছেলেকে ফিরে পেলেন মা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দুই বছরের ছেলেকে ভাবির কাছে রেখে কাজ করতে শহরে গিয়েছিলেন মা। পাঁচদিন পর ফিরে আর পাননি ছেলেকে। অবশেষে এক বছর চার মাস পর আদালতের নির্দেশে সন্তানকে কোলে পেলেন রুমা আকতার। খবর বিডিনিউজের।

বুধবার চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঞার আদেশে ছেলে মিনহাজুর রহমানকে ফিরে পান মা রুমা। চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘নিজের সন্তানকে দীর্ঘদিন পর মা ফিরে পেয়েছেন আদালতের নির্দেশে। এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হয়।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা রুমা আকতার। গত বছর স্বামী মো. রফিকের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়।
রুমা আক্তারের আইনজীবী আল মামুন করিম বলেন, ‘স্বামী চলে যাওয়ার পর আর্থিকভাবে অত্যন্ত বিপদে পড়েন রুমা। গত বছর ২৫ জুলাই নিজের দুই বছর বয়সী ছেলে মিনহাজকে বড় ভাইয়ের স্ত্রী শিরীন আকতারের কাছে দেখাশোনার জন্য রেখে কাজের সন্ধানে তিনি শহরে গিয়েছিলেন।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ, ৫ দিন পর ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে রুমা আর মিনহাজকে খুঁজে পায়নি। তখন রুমা ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে শিরীন বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলতে থাকে। পরে রুমা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মিনহাজকে উপজেলার চন্দ্রঘোনা দোভাষি বাজার এলাকার বাসিন্দা শিরীনের খালাত বোন তসলিমা আক্তারের কাছে দিয়ে দিয়েছে শিরীন।

আইনজীবী আল মামুন করিম বলেন, ‘ছেলেকে এনে দিতে বললে, শিরীন বারবার তারিখ দেয়। কিন্তু পরের দুই মাসেও মিনহাজকে ফিরিয়ে দেয়নি। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি, পরিচিত জন এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও ছেলেকে ফেরত চান রুমা। তারা চেষ্টা করেও শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি। উল্টো তাকে হুমকি দিতে থাকেন শিরীন। সন্তানকে না পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন রুমা।’

এ ঘটনায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা করেন রুমার বোন জয়নব আকতার।
আইনজীবী আল মামুন করিম বলেন, ‘এরপর পুলিশও চেষ্টা করে, কিন্তু ছেলেকে ফেরত আনতে পারেনি। তখন পুলিশ পরামর্শ দেয় আদালতে মামলা করতে।’

আইনজীবী আল মামুন করিম বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রুমার পক্ষে তার বোন জয়নব মামলা করেন। সেখানে গত ১৭ মে শুনানি হয়। সেদিন রুমা আক্তার বহুদিন পর সন্তানকে দেখে অঝোরে শুধু কান্না করেছিলেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় তিনি কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি।

‘শুনানি শেষে রুমার পক্ষে করা আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এরপর আমরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করি। ৩ দিন শুনানি শেষে আদালত শিরীন আকতার এবং তসলিমা আক্তারকে শিশুটিসহ হাজির হতে বলে।

‘আজ আদেশে আদালত মিনহাজকে তার মা রুমা আক্তারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এক বছর চার মাস পর মা তার সন্তানকে ফিরে পেয়েছেন।’

আদালতের আদেশের পর শিশুকে ফিরে পেয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরেন মা রুমা। আইনজীবী আল মামুন করিম বলেন, ‘গত ১৪ বছরের পেশাগত জীবনে এমন মানবিক হৃদয়স্পর্শী পরিস্থিতির মুখোমুখি আমি হইনি। একজন অতি অসহায় মা যিনি সন্তানকে ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, তিনি আজ ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন।’

রুমার সন্তানকে যারা আটকে রেখেছিলেন বা যিনি হস্তান্তর করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল বলেন, ‘শুধু ছেলেকে ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আবেদন করা হয়েছিল।’