কুয়াশাপ্রহর

জুয়েল আশরাফ

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই বাড়িটির সামনে ভিড় বেড়ে গেল। লোহার বড় দরজা। দরজাটি বন্ধ। ছোটো গেটটি খোলা। ঘটনা প্রথমে আঁচ করতে পারে দুধওয়ালা আনিছ। সকালে সে অনেক্ষণ বাইরে বেল বাজায়, কিন্তু দরজা খোলেনি কেউ। তারপর ছোটো গেট দিয়ে বারান্দায় চলে আসে। সেখানে একটি কলিংবেল আছে। আনিছ বেল বাজালো, কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। ড্রয়িংরুমের ভেতরের পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করল। অন্য কোনো দিন হলে বাইরে থেকে ফিরে আসতো, কিন্তু কাল বাড়ির মালিক নিজেই বেরিয়ে এসে দশ লিটার দুধের অর্ডার দিয়ে বললেন, অনেক মেহমান আসবে। আরও দুধ লাগবে। পর্দা সরাতেই আনিছের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল। ভেতরের দৃশ্য হৃদয়বিদারক। বাড়ির মালিক চেয়ারে পা তুলে বসে থরথর করে কাঁপছেন, যেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। আর তার গৃহিণী নিচে মাটিতে শুয়ে আছেন। শরীরের কোনো নড়াচড়া  নেই। বেঁচে আছে না মরে গেছে বোঝা যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে আনিছ ছোট গেট থেকে বেরিয়ে এলো। বাড়ির বেল বাজিয়ে প্রতিবেশী হাসান সাহেবকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করলো। হাসান সাহেব শব্দ না করে উঁকি দিয়ে দেখলেন, দুধওয়ালা সত্য কথা বলছে। কিছু প্রতিবেশীকে জড়ো করার পরপরই হাসান সাহেব পুলিশকে খবর দিলেন। পুলিশ এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে জনতার প্রচুর ভিড় জমে যায়।

পুলিশ ভেতরে গিয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে যায়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা বেরিয়ে আসে তা হলো, মাত্র ছয় মাস আগে এই বাড়িটি কিনেছেন আরিফ ও সেলিনা। তাদের বিয়ের বয়স চার বছর। এখনও কোনো সন্তান হয়নি। দুজনই আশপাশের কারোর সঙ্গে কথা বলে না। প্রতিবেশীরা প্রথমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করলেও শুকনো হাসি ছাড়া কোনো উত্তর পায়নি। তারপর সামনে এলেও আনুষ্ঠানিক হাই-হ্যালো ছাড়া কারোর সঙ্গেই কোনো কথা হয়নি।

এই বাড়িটি দুই বছর বন্ধ ছিল। আগে এখানে যে পরিবারটি থাকতো, পরিবারের যুবতী মেয়েটি এখানেই একটি ঘরে আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর পরিবারটি এখান থেকে চলে যায়। তাই এই বাড়িটি কেউ কিনতে চায়নি। আরিফ কম দামে পেয়ে কিনে নেয়।

পুলিশ প্রতিবেশী কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে আরও জানতে পারলো, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সৌহার্দপূর্ণ ছিল না। এই বাড়ি থেকে প্রায়ই মারামারি ঝগড়াঝাটির আওয়াজ আসতো।

সেলিনার মৃত্যুর  বিষয়ে আরিফ ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলো না। সেলিনার গলায় কালচে দাগ, বোঝা যাচ্ছে তাকে কোনো কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কাপড়টি নেই। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ নির্বাক। অনেক্ষণ পর সে বরফ শীতল গলায় বললো, ভোর সাড়ে চারটার দিকে আমি যখন ফজরের নামাজ পড়তে উঠি, তখন সেলিনাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখি। দেখামাত্র আমি কেঁপে উঠি। তারপর বুঝতে পারলাম আমার স্ত্রী আর নেই।

পুলিশ জিজ্ঞেস করলো, আপনার কোনো আত্মীয় আসতে চলেছেন?

আরিফ বললো, সেলিনা আমাকে দুধওয়ালাকে এভাবে বলতে বলেছিল। সে কিছু সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে।

খবর পেয়ে আরিফ আর সেলিনার পরিবার পৌঁছেছে অল্প আগে। আরিফকে অভিশাপ দিচ্ছে সেলিনার পরিবারের সদস্যরা। আরিফের পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করতে পারছে না এই কাজ সে করতে পারে। তবে সন্দেহের সুচ তার দিকেই যাচ্ছে। মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মাহের একজন দুর্দান্ত সিআইডি অফিসার। এমন একটি জটিল মামলার গভীরে যেতে তার সাহায্য দরকার হয়। মামলাটি তার হাতে আসার পর থেকেই সবারই আশা মামলার নিষ্পত্তি হবে। সেলিনার ডায়েরি যখন মাহেরের হাতে পড়ে তখন আরিফ আরও বেশি ফাঁদে পড়ে গেল। ডায়েরিতে প্রতিদিন মারামারির কথা উল্লে¬খ আছে। কোথাও সেলিনা আত্মহত্যার কথা লিখেছে, আবার কোথাও নির্যাতনের বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। খুনের দুদিন আগে সে আরিফের কাছ থেকে নিজের জীবনের হুমকির কথা লিখেছে। শেষপাতায় মাহের পড়তে লাগলো- আরিফ কেন দুধওয়ালাকে দশ লিটার দুধের কথা বললো? আমার জানাজায় কি লোকজন জড়ো হবে?

মাহের এখানে কিছু সন্দেহের গন্ধ পাচ্ছে। আরিফকে কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলো। আরিফ বললো, সেলিনাই আমাকে দুধওয়ালাকে এ রকম বলতে বলেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেল, মাঝে মাঝে বাড়িতে অদ্ভুত শব্দ শোনা যেতো, যার কারণে সেলিনা খুব ভয় পেয়েছিল। ঘরে কোনো আত্মার ছায়ার ভয়ও ছিল তার। আরিফ বললো, আমি নিজের কানে শুনেছি। মাহের বিশ্বাস করতে পারছে না। সে প্রশ্ন করল, সেলিনা ডায়েরিতে সব লিখতো, তাহলে এই ব্যাপারে সে কেন কিছু লিখল না?

ডায়েরি প্রসঙ্গ আসতেই আরিফ অবাক হয়ে বললো, কিন্তু আমি সেলিনাকে কখনও ডায়েরি লিখতে দেখিনি। সে ডায়েরি লিখতো এই প্রথম আপনার কাছে শুনছি।

মাহের ডায়েরিটা বের করে দেখাল। এই বাড়িতে আসার পর ছয় মাস ধরে ডায়েরি লেখা হচ্ছে। আরিফ ডায়েরিটা ভালো করে লক্ষ করল। সেলিনার ডায়েরি বলে মেনে নিতে অস্বীকার করল। তার মতে, এটা সেলিনার হাতের লেখাও না। এবার মাহের হতবাক হয়ে গেল। বললো, ডায়েরি ছাড়া বাড়িতে সেলিনার হাতের লেখা কিছুই পাওয়া যায়নি। সেলিনার হাতের লেখা দেখান।

আরিফ বললো, সেলিনা তার ল্যাপটপ আর মোবাইল ফোনে সমস্ত কাজ করতো। আমি কখনই তাকে বাড়িতে কিছু লিখতে দেখিনি।

মাহের জিজ্ঞেস করল, তাহলে লেখাটা তার না দাবি করা যায় কিভাবে? কারণ বিয়ের আগে সে আমাকে কিছু চিঠি লিখেছিল। একবার আমরা প্রচ- ঝগড়ায় নামলাম, রাগে সবাই নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেললাম। মাহের আরিফের মুখ মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকে। লেখাটি সেলিনার কিনা তা প্রমাণ করা কঠিন না, তবে আরিফ যা বলছে তাতে কি সামান্য সত্যতা আছে?

আরিফ বলতে থাকে, এই ডায়েরি থেকে মনে হচ্ছে আমাদের সম্পর্ক খুব খারাপ ছিল। যদিও তা নয়, আমরা অনেক ঝগড়া করতাম কিন্তু আমরা একে অপরকে ভালোবাসতাম। আর এই লেখাটাও কোথাও দেখেছি। কিন্তু কিছুই মনে নেই এখন।

মনের ওপর জোর দিয়ে কথাগুলো বলল আরিফ। সেলিনার মাকেও ডায়েরি দেখানো হলো। তিনিও সেলিনার লেখার কথা অস্বীকার করলেন। আরও জিজ্ঞাসাবাদে সেলিনার মায়ের কাছ থেকে জানা যায়, সেলিনার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে। প্রায়শই তাকে দেখতে যেতো। তাকে দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছিল। তার নাম রুবিনা। কিন্তু সেলিনার ফোন চেক করে দেখা গেল ওই নামে মোবাইলে কোনো নম্বর সেভ করা নেই। আরিফের কাছে তার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও নেই। সে শুধু জানে কয়েক মাস আগে রুবিনা নামের এক মেয়ের সঙ্গে সেলিনার বন্ধুত্ব হয়। তাদের দুজনের মধ্যে স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু রুবিনা কখনই আরিফের সামনে আসেনি। আরিফ কখনও তার ছবিও দেখেনি। সে কখনও দেখার ইচ্ছাও প্রকাশ করেনি বা সেলিনা নিজেও তা করেনি। তবে রুবিনা অন্য মেয়েদের থেকে অনেক আলাদা। ছবি তুলতে পছন্দ করতো না।

আরিফের বাড়ি পুরানো বসতি এলাকায়। দিনের বেলা এখানে কোনো পাহারাদার থাকে না। রাতে একজন প্রহরী লাঠি হাতে সজাগ থাকে, মাঝে মাঝে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। প্রহরীকে জিজ্ঞাসা করলে সে কিছু বলতে পারলো না। বাড়ির সামনে সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। রাস্তার ক্যামেরায় গভীর রাতে কাউকে আসতে দেখা যায়নি। এমনকি ফুটেজেও নেই।

সকলের সন্দেহ বারবার আরিফের ওপর। কিন্তু রুবিনাকে খুঁজে বের করাও দরকার। সর্বোপরি সে সেলিনার একজন বিশেষ বন্ধু। তাহলে সে আসেনি কেন? টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই খবরটি শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আরিফ বারবার ডায়েরি তুলে হাতের লেখা চেনার চেষ্টা করছে। হঠাৎ মনে পড়ল, এমন লেখা রেবারও ছিল। রেবা তার পুরানো বান্ধবী। তবে নিশ্চিত করে বলতে পারে না লেখাটা তারই। রেবার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে পাঁচ বছর। সেলিনার সঙ্গে বিয়ে নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরিফ রেবার চিঠি আর এর সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলেছে। কিন্তু আজ মনে পড়ল, রেবার মুক্তোর মতো সুন্দর হাতের লেখা, ঠিক ডায়েরির হাতের লেখার মতো। সন্দেহ ঘনীভূত হলে সে মাহেরকে বলাই সঙ্গত মনে করল।

আবার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলো। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ একটা মেয়ে রাস্তায় এসে হাজির। তার মুখ ঢেকে রাখা অনেকখানি। কিন্তু আরিফ মেয়েটির কৌশলের কারণে রেবাকে চিনতে পারলো। একজন প্রতিবেশীকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, কাল কাউকে আসতে দেখেনি, শুধু এই ফুটেজের মেয়েটি প্রায়ই সেলিনার কাছে আসতো।

রেবা এখন কোথায়, আরিফ কিছুই জানে না। তার সম্পর্কে বাকি সব কথা মাহেরকে জানালো। প্রায় ছয় বছর আগে রেবার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আরিফ শান্ত স্বভাবের মেয়েটিকে পছন্দ করেছিল। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আরিফ তাকে জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্ত নিল। একদিন একটি নির্ভরতার সূত্র ধরে জানলো রেবা মেয়েটি ভালো না। তার ওঠাবসা অপরাধপ্রবণ লোকদের সঙ্গে। সে নিজেও ছোটোখাটো ঘটনায় জড়িত। আরিফের মন ভেঙে গেল। সে অবিলম্বে সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। রেবা অনেক পাগলামো করেছে, অনেক বুঝিয়েছে। নিজেকে বদলানোর কথাও বলেছে, কিন্তু আরিফ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিছুদিন পর সেলিনাকে তার জন্য বেছে নেন পরিবারের সদস্যরা। ছয় মাস পর বিয়ে স্থির হয়। এই সময় রেবা অনেক চিঠি লেখে আরিফকে। বিয়ের পর আরিফ সেলিনাকে রেবার ব্যাপারে কিছু জানায়নি। তাদের মধ্যে সব ঠিক ছিল। কেউ একজন সেলিনাকে এই সস্তা দামের বাড়িটার কথা বলেছিল। আরিফ এটি কিনল। জানে না কিভাবে সেলিনাও রেবার কথা জেনে গেল। তারপর থেকে ঝগড়া শুরু।

এখানে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে, সেলিনা আরও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। তার আশপাশের লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। আরিফ একটু লাজুক। প্রথম থেকেই খুব বেশি বন্ধু তৈরি করেনি। এখানে আসার পর প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেনি সেলিনা। তার সব মনোযোগ শুধু রুবিনার দিকে। হয়তো সে তাকে খুব বেশি বন্ধু না করার পরামর্শ দিয়ে রেখেছিল।

রেবার অপরাধী রেকর্ড থাকায় মাহেরের তার কাছে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগল না। প্রতিবেশীরাও তাকে সেলিনার বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়। নিজের আসল নাম গোপন রেখে সেলিনার সঙ্গে রুবিনা নামে পরিচিত হয়। এসবের পেছনে উদ্দেশ্য আরিফের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া। চার বছর ধরে আরিফ আর সেলিনার প্রতিটি পদক্ষেপে তার সমস্ত মনোযোগ ছিল। তিন বছর নীরবে জীবনযাপন করলেও এক বছরে সেলিনার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং গাঁটছড়া বাঁধে সে। এই বাড়িটিও পেয়েছে। কারণ সে তাদের এমন জায়গায় রাখতে চেয়েছে যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতটা ভালো না। সেলিনাকে সে এমন স্ট্রিপ শিখিয়েছে যে সে কখনই অন্য কারোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেনি। রেবা সেলিনা ও আরিফের সম্পর্ককে নুন-মরিচের মতো উসকে দেয়। সিআইডি মাহেরের কাছে সব সত্য স্বীকার করে সে জানালো, সেলিনা কলেজে তার রুমমেট ছিল এবং প্রতারণার পর আরিফ সব কিছু ছেড়ে কোথাও চলে যায়। এমনকি আরিফের লেখা চিঠিগুলোও পড়ে শোনায়। সেলিনা আরিফের হাতের লেখা চিনতো, তখনই রেগে গিয়ে তার লেখা চিঠিগুলো ছিঁড়ে ফেললো। রেবাকেও তা করতে প্ররোচিত করা হয়, কারণ সে লেখার প্রমাণ মুছে দিতে চেয়েছিল। সেই বাড়িতে কারো ছায়া হওয়ার মায়াও সে তৈরি করেছিল। এ জন্য রেবা মাঝে মাঝে রেকর্ড করা নিশ্বাসের শব্দ আর অন্য কিছু কণ্ঠ বাজানোর ব্যবস্থা করে। সেও এ ব্যাপারে তার সাহায্যকারী হয়ে ওঠে। দুধওয়ালা দশ লিটার দুধ নিয়ে এসেছিল কারণ বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান হবে। সবকিছু পরিকল্পিত ছিল। সেদিনই সন্ধ্যায় আরিফ বাড়িতে পৌঁছানোর আগে পায়েসের সঙ্গে নেশাজাতীয় ওষুধ মিশিয়ে দেয় রুবিনা। রাতের খাবারের পর আরিফ আর সেলিনা সেই পায়েস খায়। দুজনই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। সেদিন রেবা ঘরে লুকিয়ে ছিল। রাতে সে সেলিনাকে টেনে নিয়ে গেল। ওড়না দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর সব প্রমাণ মুছে দেয়। মোবাইল ফোন থেকে সব নম্বর ও মেসেজ মুছে ফেলে। ডায়েরিটা সেলিনার ড্রয়ারে রাখল। তারপর সে বাইরে এসে সকালের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সাড়ে পাঁচটায় যখন আরিফের নেশা ভেঙে গেল, তখন তার তৃষ্ণা লাগল। সেলিনা কাছে ছিল না। সে ভাবল ওয়াশরুমে থাকবে। পানি আনতে বের হলে তার চিৎকার বেরিয়ে যায়। প্রচ- ভয় পেয়ে কাঁপতে কাঁপতে চেয়ারে বসে পড়ল। রেবা বাইরে থেকে এসব দেখেছে। রাস্তায় যানচলাচল শুরু হলে ছোটো গেট খুলে চুপচাপ চলে যায় সে।

রেবা আরিফকে খুনের ফাঁদে ফেলে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে যাতে তার প্রতিশোধ পূর্ণ হয়। কিন্তু এটা হতে পারেনি। কথায় বলে অপরাধী কোনো না কোনো প্রমাণ রেখে যায়। তবুও সে ততটা চালাক মেয়ে না। আরিফের পক্ষে মাহেরের মতো একজন গোয়েন্দা আছে। একজন নিরপরাধকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সেই যথেষ্ট।