কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে মাঝারি ও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের প্রতি নজর দিন

করোনার ক্ষতি পোষাতে, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছে সুদহারে ভর্তুকি দিয়ে। তবে স্বল্প সুদে দেওয়া এই ঋণের বড় অংশ পেয়েছে বড় ব্যবসায়ী ও শিল্প গ্রুপ। একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পখাতের (সিএমএসএমই) জন্য বরাদ্দকৃত ঋণ প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছেছে একেবারেই কম। করোনার অভিঘাতে সিএমএসএমই খাত খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে, অনেকে প্রতিষ্ঠান ছোট করে এনেছে। এই খাতে শ্রমিক কর্মচারীদের ব্যাপক অংশ কাজ হারিয়েছেন। গ্রামীণ ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও কারিগরি সম্প্রদায় বেশি অসহায় হয়ে পড়েছেন, এদের এক বড় উদ্যোক্তা নারী। অর্থনীতিবিদ ও এই খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ঋণ বিতরণে ব্যাংকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ছোট উদ্যোক্তাদের কাছে প্রণোদনা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঠিকই ঋণ পেয়েছে। ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্রদের কাছে যেতে পারছেনা। তাই বিসিক, এনজিও ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তাদের কাছে ঋণ পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন। কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পখাতে (সিএমএসএমই) ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ছিল, এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য উদ্ধৃত করে জাতীয় পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর বড় অংশ পেয়েছেন ব্যবসাও সেবা খাতের উদ্যোক্তারা। উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন কম। তবে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগে ভাল সাড়া মিলেছে, নারী গ্রাহকরাও এই ঋণ পেয়েছেন।
ক্ষুদ্র, কুটির মাঝারি শিল্পখাত জিডিপি ও কর্মসংস্থানে বিপুল অবদান রাখছে। মোট দেশজ উৎপাদনের ২৫ শতাংশ আসে সিএসএসএমই খাত থেকে, মোট কর্মসংস্থানের ৩৬ শতাংশ এই খাতে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করা ছাড়াও নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের যোগান আসে এই খাত থেকে, রপ্তানিতেও এই খাতের অবদান রয়েছে। করোনাকালে এই খাতটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে যে নথিপত্র এবং গ্রাহক সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন, এই খাতের অধিকাংশ উদ্যোক্তাদের তা নেই। ব্যাংক ও ঝুঁকি নিতে চায়না এ ক্ষেত্রে, তাই বিকল্প সংস্থার মাধ্যমে এই প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবতে হবে সরকারকে। তাছাড়া আগামী বাজেটে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ থাকা চাই। লকডাউন ও নানা বিরূপ পরিস্থিতিতে পণ্য বাজারজাতকরণেও বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক উদ্যোক্তারা।
কম সুদে বিকল্প ঋণ বিতরণ ব্যবস্থায় প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের ঋণ পৌঁছে দিতে পারলে এই খাতের উদ্যোক্তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। পণ্য ও সেবা খাত সক্রিয় হলে অর্থনীতি, বিনিয়োগও চাঙ্গা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের জীবনÑজীবিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে আগামী বাজেটে। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান সচল রাখতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পখাতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে আগামী বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেছেন, এ ক্ষেত্রে প্রান্তিক ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রতি নজর দিন।