করোনা মোকাবেলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কমিটি সক্রিয় করুন : সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানছে। এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার ২শ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দেশের হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগী বেড়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৩ দফা কর্ম পরিকল্পনা সরকারের কাছে পেশ করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি করোনা মোকাবেলায় সরকারের সব সংস্থাকে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের শুল্ক মৌসুমে বায়ুদূষণ বাড়ে যা করোনার সংক্রমণ তীব্র করে তুলতে পারে। ১৩ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে করোনা মোকাবেলায় জাতীয় পরিকল্পনার মূল্যায়ন ও সংশোধন, কমিউনিটি ক্লিনিককে সম্পৃক্ত করা, অধিক বরাদ্দ, উপজেলা-জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটিগুলি সক্রিয় করা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন সেন্টার খোলা, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ, জনসচেতনতা বাড়াতে বড় উদ্যোগ ও তারকা ব্যক্তিদের যুক্ত করা, কেন্দ্র ও মাঠ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন প্রভৃতি। আমরা মনে করি অবিলম্বে এসব সুপারিশ কার্যকর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় একসাথে বসে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবে। শহরের পাশাপাশি গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা কেন্দ্রে সচেতনতা কার্যক্রম গড়ে তুলতে হবে।
আমরা ইতিপূর্বে শহর ও গ্রামে ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করার কথা বলেছি। করোনার প্রথম দিকে স্বেচ্ছাসেবক ছাত্র-তরুণরা ত্রাণ ও কমিউনিটি সেবায় ভাল ভূমিকা রেখেছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা করোনা মোকাবেলায় সামনের সারিতে রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে সুরক্ষা সামগ্রী, আবাসিক ও অন্যান্য সুবিধা, বিশেষ ভাতা প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে সম্মুখ সারিতে থাকা এসব যোদ্ধাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক করোনাকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও অন্যান্য মাধ্যম কাজে লাগাতে হবে। বিগত করোনাকালে ঝুঁকির মধ্যেও সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যম খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি নাগরিক, প্রবাস থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
শহর ও গ্রামের দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে প্রতিদিন তথ্য উপাত্ত, করণীয় ও বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরতে হবে, কেবল সংখ্যার বুলেটিন নয়। গণমাধ্যমে প্রণোদনামূলক প্রচারণা, করণীয় জানাতে তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন।
সকল সংস্থাকে করোনার মোকাবেলায় যুক্ত করুন। ওয়ার্ড, ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা, ছাত্র-যুব নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা আজ একান্তই অপরিহার্য। মহানগর, গ্রাম-উপজেলায় হাসপাতাল ও সেবা কেন্দ্রগুলিতে এখন থেকে সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিন। সকল সেবা কেন্দ্রে অক্সিজেন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা নিয়ে আশার বাণী শোনা গেলেও তা পেতে সময় লাগবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরস্পরের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতে সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই।