করোনা’র দ্বিতীয় ঢেউ, সতর্ক হোন

সনেট দেব »

বর্তমানে দেশের করোনা সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত ১৫ দিন ধরে রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলিতে আইসিউ সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে যে উদাসীন ভাব রয়েছে এটাই করোনার উর্ধ্বগতির প্রধান কারণ বলে মনে করছি। গত ৫ এপ্রিল আমাদের দেশে নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজারেরও বেশি। মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৩ জন। এবছর মার্চ মাসের ১০ তারিখের পর থেকে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের পাশ^বর্তী দেশ ভারতে সব রেকর্ড ভেঙে একদিনে ১ লাখ আক্রান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার কথা জানান। ১৮ দফা নির্দেশনা ছাড়াও সোমবার থেকে ৭দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এছাড়া উপায় নেই। জনগণকে সরকারি নির্দেশনা মেনে জীবন-জীবিকার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
নির্দেশনার পুরা অংশ জুড়েই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হল, করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। শুরুর দিকে মানুষ কিছুটা সতর্ক হলেও এখন মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে। করোনা মোকাবেলায় মাস্ক পরা জরুরি বটে; সেই সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও দরকার। গত কয়েক মাস ধরে দেশের পরিস্থিতি দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই যে, করোনা নামক কিছু এ দেশে আছে। স্কুল-কলেজ ছাড়া বাকি সব স্বাভাবিক নিয়মেই চলেছে। চলেছে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সব রকমের কার্যক্রম। যদিও এসব অনুষ্ঠান পরিচালনার আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার সামান্য ভাগও পালন করা হয় না। মুখে নেই মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধির দুই পয়সার পাত্তা নেই। যে যার মত করেই চলছে। বাহিরে হাজার হাজার মানুষ। হাসপাতালে তিল ফেলার জায়গা নেই।
অনেকে মনে করছে আমার তো জ¦র হয়নি, সর্দি হয়নি কিংবা আমার কোন গলা ব্যথা, কাশি নেই, সুতরাং আমার করোনা হয়নি। এমন ভেবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আরামে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকা সবচেয়ে বোকামি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি বিরাট অংশ (ক্ষেত্রভেদে প্রায় ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি) কোনো উপসর্গই প্রকাশ করে না এবং নীরবে ও নিজের অজান্তে রোগটি ছড়াতে থাকে। অনেকে আবার এটাও মনে করছে আমি করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি, তার মানে আমার আর করোনা হবে না। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিন নিলে যে করোনা হয়না এমন কোথাও উল্লেখ নেই। ভ্যাকসিন মূলত আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। করোনা হলে যেন আপনার শরীর করোনার সাথে যুদ্ধ করতে পারে তার জন্য ভ্যকসিন দেয়া। সুতরাং এখন থেকে সচেতন হোন।
গত বছর ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে প্রথম সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। যা পরবর্তীতে সাত দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। বাংলাদেশে এই সময়টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘লকডাউন’ বলা হয়নি, বরং সরকারিভাবে ‘সাধারণ ছুটি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা-উপজেলা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে লকডাউন করা হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের মত দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ না হলেও সারা দেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলের উপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। একই সাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। এবার লকডাউনে সেসব হয়তো পুরাপুরিভাবে নেই, তবে নির্দেশনা ও লকডাউনে করণীয় যথাযথ প্রতিপালন করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
ংড়হহবঃফবা১৯৮৯@মসধরষ.পড়স