ঋণের জালে জেলেরা

সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই

রনজিৎ জলদাশ। মা বাবাসহ ৬ সদস্যকে নিয়ে তার সংসার। সাগরে মাছ আহরণ করে সংসার চালায়। কিন্তু সরকার ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় রনজিতের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। একদিকে সংসার অন্যদিকে ঋণের কিস্তি চালানোর চিন্তা। কিভাবে ৬৫ দিন পার করবে বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে গত সপ্তাহে সরকারের দেওয়া ৫৬ কেজি চাল পেয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পুনরায় নিতে হয়েছে ঋণ। শুধু রনজিৎ জলদাশ নয়, মিরসরাইয়ের ২৯টি জেলে পাড়ায় প্রায় তিন হাজার জেলের সিংহভাগের এভাবে কাটছে দিন।
জানা গেছে, সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বাড়াতে সরকার ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দীর্ঘ এ সময় সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেরা পড়েছে বিপাকে। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের দিন কাছে অনাহারে অর্ধাহারে। সরকারের দেয়া চাল সহায়তা কিছুটা অভাব ঘুচলেও বিপাকে পড়েছেন ঋণের কিস্তি নিয়ে।
মায়ানি ইউনিয়নের জয়নগর জেলে পাড়ার বাসিন্দা রনজিৎ জলদাশ জানান, মাছ ধরার নৌকা ও জাল কিনতে স্থানীয় একট এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের জন্য প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার ১০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে নতুন করে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে।
বাবুল জলদাশ নামে এক জেলে জানান, তার পরিবারে ১০ সদস্য। নৌকা ও জাল কিনতে যে ঋণ নিয়েছিলেন সেই ঋণের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৪ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এখন তিনি বিপাকে পড়েছেন। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ২০১৬ সালের আগে ২০২৬ জন্য জেলে নিবন্ধিত হয়। গত বছর নিবন্ধিত হয় একশ জন। এছাড়া চলতি বছর প্রায় ৬শ’ জন জেলে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তার মধ্যে গত সপ্তাহে ২ হাজার ১২৬ জনকে ৫৬ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরো ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে।
এদিকে জেলেদের দাবি শুধু নিবন্ধিত জেলেদের চাল সহায়তা দেয়া হলে অনিবন্ধিতরা পাচ্ছে না। তাই জেলেদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এছাড়া চাল সহায়তার পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তা দাবি করেন তারা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, ২০১৬ সালের পর প্রায় ৫ বছর পর্যন্ত জেলে নিবন্ধন বন্ধ থাকায় কিছু জেলে বাদ পড়েছে। তবে নতুন করে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত বছর জেলেদের কিছু দাবি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে নগদ অর্থ সহায়তার বিষয়টিও ছিল। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।