আজ কাল পরশু

সালাউদ্দিন এম মারুফ »

In the United States, there is a growing feeling that we are reaching the end of the COVID-19 pandemic.

এ বক্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী ‘হেলথ লাইন’ থেকে নেয়া। একটি সাধারণ ভাবনার উপর আলোকপাত করা হয়েছে এখানে। নিউইয়র্কে টিকাদান ৭০ ভাগ ছাড়িয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়াতে ৬০ শতাংশের উপরে, এভাবে অন্যান্য রাজ্যেও। সংক্রমণের হার খুবই কম, স্বস্তি ফিরে এসেছে সেখানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে দেখতে পাই যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে মানুষ অবকাশযাপনে ব্যস্ত। করোনা সময় সেখানে এখন অতীত। একই ঘটনা ইউরোপ জুড়ে। করোনা স্বাস্থ্যবিধি কাগজে-কলমে উঠে না গেলেও উপস্থিতি খুব অল্পই চোখে পড়ে। সেগুলোও তারা আর রাখতে চান না, অন্তত বরিস জনসনের কথায় তাই মনে হয়। টুকটাক করোনা থাকবে, এ নিয়ে তারা মাথা ঘামাবেন না।

করোনা এখন অনেকটাই উপমহাদেশীয় উপসর্গ। তা না হলে করোনার জাদুঘরে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছিল প্রায়। ইউরো চ্যাম্পিয়ানশীপের খেলা হচ্ছে দর্শক ভরা স্টেডিয়ামে। অবকাশ যাপন কেন্দ্রগুলো মানুষে গিজগিজ করছে।সবাই করোনা কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবার দৌড়ে আছে।

আর আমরা করোনা বিশ্বের সগর্ব অভিযাত্রী! এতসব খবর রাখার সময় কোথায়? আমরা  আছি আমাদের মত। করোনা পরিস্থিতি ভারতে এতটা খারাপ হবার কথা ছিল না, তুলনামূলক পাকিস্থানের অবস্থা ভালো। আর আমরা প্রতিদিন আক্রান্তের সব রেকর্ড ভেঙে চলেছি। রহস্য মোটেই জটিল কিছু নয়। যারা তাদের মানুষকে যত বেশি টিকা দিতে পেরেছে তারা ততো ভালো আছে। কাজের হিসাব গল্প দিয়ে হয়না। আমাদের গল্প বেশি হয়ে গেছে।

করোনা পৃথিবী  থেকে চিরতরে চলে যাবে এমন হয়তো নয়। কিন্তু বাঘের চামড়া পরে শেয়াল হয়েই যে তাকে এই পৃথিবীতে থাকতে হবে, এতে কোন সন্দেহ  নেই। এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা যেমন আছে।

সেজন্য প্রয়োজন সবগুলো মানুষকে টিকা প্রয়োগে করোনা সক্ষম করে তোলা। মানুষকে করোনামুক্ত করার আগে করোনাকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে।

যেসব দেশ এখনও করোনা মুক্তির পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেনি সেসব দেশে নেতৃত্ব এখনো হয়তো মুখ রক্ষা করতে পারছে। কিন্তু সে সুযোগও খুব বেশিদিন থাকবে না। আর কিছুদিনের মধ্যে করোনায় মৃত্যু রাষ্ট্রীয় খুন হিসেবে বিবেচিত হবে। সেটা এখনই নয়, তবে খুব বেশি দূরেও নয়। কথাগুলো বলছি, বলতে হচ্ছে, এ কারণে যে আমর মনে হয় ধারণার চেয়ে  দ্রুত এই পরিবর্তন আমাদের নেতৃত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছে।

এই ব্যর্থতার ফল কিন্তু যতটা ধারণা করা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হবে। এই সময়ের দগদগে স্মৃতি মানুষের মন থেকে সহজে মুছে যাবে না। করোনাকে তারা সর্বাত্মকভাবে ‘না’ বলবে।

আমাদের মানুষগুলোর গতিবিধি সীমিত হয়ে পড়বে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে ঢোকা বাধাগ্রস্ত হবে। সেখান থেকেও কেউ এখানে আসতে পারবে না। জনসম্পদ নির্ভর রাষ্ট্রের জন্য এটা সর্বনেশে।

আরও আছে। আমাদের পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আপনা আপনি চেপে বসবে। কারণ, করোনার ভয়!

১০/১১ মাস পর কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ফুটবল। আমি নিশ্চিত  সেখানে ফুটবল স্টেডিয়ামগুলো কানায় কানায় ভরে থাকবে। তখনও আমাদের শিশুরা গৃহবন্দি হয়ে থাকবে? ভাবতে চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে আসে।

মাঠগুলো আগেই নিয়ে নেয়া হয়েছে। করোনা নিয়েছে স্কুল। ঘরে বসে বসে শিশুরা বিকাশ প্রতিবন্ধী হয়ে বড় হচ্ছে। এই প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কি?

এতদিন যা ই গেছে এখন স্কুল কলেজ গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। টিকার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো খুলে দিতে হবে। সবকিছু একটা টাইম ফ্রেমের ভেতর নিয়ে আসতে হবে। পুরো বিশ্ব পুরোপুরি সচল হবার আগেই সব করতে হবে। হতাশা বাড়তে দেয়া ঠিক হবেনা।

সবকিছুর আগে চাই সর্বাত্মক টিকাদান। যদিও আমি মনে করি সরকারের চেষ্টা ছিল, সফলতা ছিল না। টিকার জন্য বাংলাদেশ কার সঙ্গে যাবে, কার কার সঙ্গে যাবে, এটা ভালো করে ভাবা উচিত ছিল।

গতস্য শোচনা নাস্তি। এখন সামনের পানে তাকাতে হবে। আজ কোভিড ১৯ এসেছে, কাল ২৯ আসবে। মহামারী আসতেই থাকবে। বাংলাদেশকে এটা মাথায় রাখতে হবে। বুস্টার ডোজের ঝামেলা এখনো তো সামনে রয়েই গেছে। টিকার গবেষণা ও উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জন বড় বেশি জরুরী।

লেখক : প্রকৌশলী